কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক :
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের পূর্ব উপকূলে আঘাত হানার পর উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গের দিকে অগ্রসর হচ্ছে । এর তা-বে প্রথমে তিনজনের প্রাণ হারানোর খবর কৃর্তপক্ষ জানালেও পরে তারা দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উড়িষ্যা অঞ্চলজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। পর্যটন এলাকা পুরী এবং আশেপাশের এলাকায় ২০০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে থাকে।
অনেকগুলো এলাকা থেকে বন্যার খবর আসছে, সেইসাথে গাছ উপড়ে পড়ার এবং কোথাও কোথাও ভবনের ছাদ ধসে পড়ার খবর রয়েছে।
উড়িষ্যা থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদে আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে, আশেপাশের অনেক রাজ্যে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উড়িষ্যা অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানার পথে ফণী পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী জানান কোলকাতায় আজ সকালে বৃষ্টিপাত থাকলেও দুপুরের দিকে মেঘ কেটে যায়। শুক্রবার দিবাগত রাত দুটো থেকে ভোররাত পাঁচটার মধ্যে ফণী আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর।
এই প্রথম কোলকাতা বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে কুড়ি ঘণ্টার জন্য অর্থাৎ আজ বিকেল থেকে আগামীকাল সন্ধ্যে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বিমানবন্দর। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সমুদ্র তীরবর্তী হরিপুর এলাকার বাসিন্দা দেবাশীষ শ্যামল বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, কয়েক দফায় বৃষ্টি হলেও এই মুহুর্তে বৃষ্টি বন্ধ আছে। তিনি বলেন, “ভাটার মাঝেও সমুদ্রের যে গর্জন শোনা যাচ্ছে তাতে আমরা সাগরপাড়ের বাসিন্দা হয়ে বুঝতে পারছি যে বড় ধরনের ঝড় আসতে যাচ্ছে। বিকেল নাগাদ আমরা সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়ার চিন্তা করবো”।
ভারতের প্রস্তুতি কতটা?
নৌবাহিনী, কোস্ট-গার্ড এবং ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপঞ্চ ফোর্স আেই দুর্যোগ মোকাবেলায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে জানানো হয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী বিশাখাপত্মম এবং চেন্নাইতে দুটো জাহাজ ডুবুরি-দল এবং চিকি?সকদের নিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে রয়েছে। আশিটির ওপরে ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। দেশটির নির্বাচন কমিশন তাদের নিয়ম শিথিল করেছে যাতে করে কর্মকর্তা নির্বিঘ্নে ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে পারেন।
অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বহু বিমান ফ্লাইট এবং ট্রেন চলাচল বাতিল করা হয়েছে। স্কুল এবং সরকারি সকল কার্যালয় বন্ধ রয়েছে । পূর্ব-উপকূলীয় এলাকার তিনটি বন্দরের কার্যক্রমই বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থকে তৎপর অবস্থান নেয়া হয়েছে নৌ-বাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এবং হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে, সেইসাথে মেডিকেল টিম এবং ত্রাণ সামগ্রীও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
দেশটির জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বিষয়ক ফোর্স এনডিআরএফ তাদের বিভিন্ন দলকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় পাঠিয়েছে। গত তিন দশকের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ফণী দেশটির পূর্ব উপকূলে আঘাত হানা তৃতীয় সাইক্লোন ।
২০১৭ সালে ঘূর্ণিঝড় অক্ষির কারণে ২০০ জনের বেশি মানুষ মারা যায়, এবং শত শত মানুষ ঘরবাড়ি হারায়। গতবছরের অক্টোবরে আরেকটি সাইক্লোন আঘাত হানলে উড়িষ্যার কর্তৃপক্ষ হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়।
১৯৯৯ সালে রাজ্যটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে যা কেড়ে নিয়েছিল প্রায় ১০ হাজার মানুষের প্রাণ। ১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোন এবং পরে আইলার অভিজ্ঞতা থেকে প্রশাসন থেকে শুরু সাধারণ মানুষও সাধারণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে, জানাচ্ছেন অমিতাভ ভট্টশালী। কোন কোন এলাকা ঝুঁকিতে? পুরী ছাড়াও উড়িষ্যার ১৫টি জেলায় এই সাইক্লোন আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে ।
এখানেই ৮৫৮ বছরের প্রাচীন জগন্নাথ মন্দির অবস্থিত।ভারতের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পূর্ব উপকূলীয় এলাকার মানুষজনকে বিশেষ করে মাছধরার জেলেদের সতর্ক করেছে সাগরে না যাওয়ার বিষয়ে সর্তক করেছে । সংস্থাটি বলছে কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে, সেইসাথে অন্যান্য অবকাঠামোর ব্যাপক বিনষ্ট হতে পারে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-