ডেস্ক রিপোর্ট :
কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশ ইয়াবা বিরোধী অভিযান আরো জোরদার করেছে। সীমান্তে এবারের অভিযানে পুলিশ ইয়াবার চালানও ৪টি অস্ত্রসহ আটক করেছে ‘সাংবাদিক’ নামধারী ২ ইয়াবা কারবারিকে।
তারা সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে ইয়াবা কারবারে জড়িত ছিলেন। আটক হওয়া ইয়াবা কারবারিদ্বয় হচ্ছেন আপন সহোদর মাহবুবল করিম ও রাশেদুল করিম।
তারা টেকনাফের শিলবুনিয়া পাড়ার বাসিন্দা ডা. হানিফের ছেলে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত দেশের শীর্ষস্থানীয় ইয়াবা ডন হাজী সাইফুল করিমের ভাই। পুলিশ তাদের নিকট থেকে ১০ হাজার ইয়াবার চালানসহ ৪টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। স্থানীয় লোকজন পুলিশের এমন অভিযানকে সাধুবাদ জানাচ্ছে।
পুলিশের হাতে ইয়াবা ও অস্ত্রসহ আটক দুই সহোদর মাহবুবল করিম ও রাশেদুল করিম টেকনাফ বার্তা ২৪ ডটকম এবং সিটিজি বার্তা ২৪ ডটকম নামের অখ্যাত দু’টি অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক ও প্রকাশক হিসাবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। তাদের আরো একজন সাংবাদিক পরিচয়ধারী ভাই পলাতক রয়েছেন।
এর আগে ইয়াবার আরো একটি বড় চালান নিয়ে এক ভাই চট্টগ্রাম শহরে পুলিশের হাতে আটক হন।
শুক্রবার রাত ৯টার দিকে শীর্ষ ইয়াবা কারবারি হাজী সাইফুলের শীলবুনিয়া পাড়ার বাসভবনে অভিযান চালিয়ে দুই ভাইকে আটক করা হয়। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস এ সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অভিযানে ৪টি অস্ত্র ও ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফ থানার ওসি এ বিষয়ে বলেন- ‘টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবা পাচারের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর জিরোটলারেন্স নীতির বাস্তবায়নে কোনো প্রকারের ছাড় নেই। তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তি হোন, সাংবাদিক হোন বা রাজনীতিক ব্যক্তিত্বসহ যত বড় ক্ষমতাশালীই হোন কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’
ওসি আরো বলেন, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে আত্মসমর্পণ করা ১০১ জন ইয়াবা কারবারির কাছে কারবারে জড়িত আরো অনেকেরই নামধাম জানা গেছে। ইয়াবা কারবার বন্ধের স্বার্থে তদন্ত সাপেক্ষে এসব সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
জানা গেছে, আটক হওয়া কারবারিদ্বয় টেকনাফ সীমান্তের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি হাজী সাইফুল করিম পরিবারের সদস্য হওয়ায় নানাভাবে দীর্ঘদিন ধরেই জড়িত ছিলেন কারবারের সঙ্গে। হাজী সাইফুল করিম দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে ইয়াবা কারবারে জড়িত ছিলেন। সারা দেশে ইয়াবা পাচার বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হলে হাজী সাইফুল করিম বর্তমানে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।
গণমাধ্যমে সীমান্তের ইয়াবা কারবার নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি শুরু হলে পরিবারটির কারবারে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে শুরু করে। এরপরই হাজী সাইফুল করিম তার পরিবারের একে একে তিন ভাইকে সাংবাদিক হিসাবে পরিচিতি লাভের জন্য অনলাইন পোর্টালসহ নানাভাবে সাংবাদিক হিসাবে কাজ করতে বিনিয়োগ করেন। এমনকি সীমান্ত এলাকায় হাজী সাইফুল সংবাদকর্মীদেরও পৃষ্টপোষকতা দেওয়া শুরু করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাজী সাইফুল করিম সংবাদকর্মীদের গোপনে পৃষ্টপোষকতা দিয়ে নানা সংগঠন সৃষ্টির মাধ্যমে মূলত সাংবাদিকদের ইয়াবা কারবার থেকে দৃষ্টি ফিরানোর কৌশল হিসাবে তাদেরকেই অন্তর্কোন্দলে ব্যস্ত রাখতেন। এমন কাজে হাজী সাইফুল খরচ করতেন দেদারছে। আবার সাংবাদিক নামধারী তার ভাইদের দিয়েও সংবাদকর্মীদের নানাভাবে ব্যস্ত রাখার কৌশল নিয়ে পরিবারটির ইয়াবা কারবার নির্বিঘ্ন করতেন।
এতসবের পরেও হাজী সাইফুল করিমের পরিবারের সদস্যরা টেকনাফ সীমান্তে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে একদম ভালো মানুষের বেশ নিয়ে উঠবস করে আসছিলেন। এমনকি মাত্র এক বছর আগেও তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারি হাজী সাইফুল করিম টেকনাফ থানা ভবনে প্রকাশ্যে আসা-যাওয়ার মাধ্যমে পুলিশের সঙ্গে দহরম মহরম সম্পর্ক রেখেও আসছিলেন।
প্রসঙ্গত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারি হাজী সাইফুল করিমের বিরুদ্ধে গত ৩০ এপ্রিল দুদক আয় বহির্ভুত ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় মামলা দায়ের করেছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-