জে.জাহেদ :
পৃৃথিবীতে অনেক মানুষ আছেন যারা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কে জয় করে পৌঁছে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। যেমন পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং, অ্যাথলেট মারলা রুনিয়ান, ভারতীয় সুধা চন্দ্রন।
কর্মই তাদের গোটা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। অন্য ১০ জনের মতো শারীরিক ভাবে অক্ষম হয়েও একজন মানুষ সফল হতে পারে সেটা দেখিয়ে যাচ্ছেন মহেশখালীর সালাহ্ উদ্দীন।
জন্মগত ভাবে যার হাত পা নেই। যার কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যা তিনি অনায়াসেই জয় করে এগিয়ে চলেছেন সামনের পথে। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা তাকে কখনো দমাতে পারেনি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা তার মতো প্রতিবন্ধীকে অনুপ্রাণিত করতে স্কুলে ভর্তি হয়েছেন তিনি। নিজের কর্মের মাধ্যমে তিনি পৌঁছে যেতে চান অন্য এক উচ্চতায়।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে ঘরে আটকে রাখতেও পারেনি। প্রতিবন্ধী সালাহ্ উদ্দীনের স্বপ্ন নিজ কর্মে অমর হয়ে থাকবেন তিনি সবার মাঝে। প্রমাণ করে চলেছেন অদম্য ইচ্ছাশক্তি মানুষকে বড় করে তোলে।
ছেলেটির পুরো নাম মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন (১৩)। কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উত্তর নলবিলা গ্রামের বাসিন্দা। পিতার নাম মোহাম্মদ জালাল। জালালের আদরের ছেলেটি জন্মগত প্রতিবন্ধী। কিন্তু একজন প্রতিবন্ধীর সামনে যে সামাজিক, পারিবারিক, পরিবেশগত প্রতিবন্ধকতা থাকে, এসব কিছুকে ডিঙিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে।
বিখ্যাত দার্শনিক সেক্সপিয়ারের মতে, পৃথিবী একটি নাট্যমঞ্চ। নাট্যমঞ্চের এই পৃথিবীতে মানুষ টাকা আয় করার জন্য নিজেকে বিভিন্ন নাটকীয় ভাবে উপস্থাপন করে ভিক্ষাবৃত্তি করছে। কেউ ডাক্তারের নকল প্রেসক্রিপশন বানিয়ে মানুষের ধারে ধারে ভিক্ষা করছে। এমন নজিরও রয়েছে যে, মানুষ নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন করে তৃতীয় লিঙ্গের রূপধারণ করে চাঁদা তুলছে।
শুধু কি তাই! টাকা আয় করার জন্য বহু পথে থেমে নেই প্রতিবন্ধী মানুষের ছলচাতুরীও। কিন্তু এই ছেলেটির জন্মগত, সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ভিক্ষাবৃত্তির সুযোগ থাকা সত্বেও ভিক্ষাবৃত্তি করছেন না। ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়নি।
সকল প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে, মানুষের হেয়, অবহেলা, কটু দৃষ্টিকে পিছনে ফেলে সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়ে সালাহউদ্দীন এগিয়ে যাচ্ছেন মানুষের মতো মানুষ হতে। সামাজিক যে বৈষম্য, সে বৈষম্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তিনি। প্রতিবন্ধী সালাহউদ্দীনেরা থামেনা। সালাহ উদ্দীনদের জন্ম হয়েছে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।
দরিদ্র পিতার সন্তান তিনি। বাবা পেশায় একজন জেলে। এক ভাই ও পাঁচ বোনের সংসারে একমাত্র বাবা মুহাম্মদ জালালের আয়ে সংসার চলে। বলতে গেলে দিনে আনে দিনে খায় এরা। কিন্তু তীব্র দারিদ্রতা সালাহ উদ্দীনের ইচ্ছা শক্তিকে থামাতে পারেনি।
অত্যন্ত অমায়িক একটা ছেলে। হাত পাঁ বিহীন প্রতিবন্ধী হয়েও মোড়ানো পায়ের পেশীশক্তির উপর ভর করে লিখে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক শিক্ষা লেবেলে দুটি সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন। বর্তমানে মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে অধ্যয়ন করছেন বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল আলম।
তিনি আরো বলেন, ‘সালাহ্ উদ্দীন উত্তর নলবিলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি এবং উত্তর নলবিলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় যথাক্রম জিপিএ-এ গ্রেট (পিএসসি-৪.৩৬-জেএসসি-৪.০৬) সাফল্যর সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য লিয়াকত আলী বলেন, ‘বিচক্ষণ আর মেধাবী এই ছেলেটিকে নিয়ে অনায়াসে গর্ব করা যায়। যে গ্রামে প্রতিবন্ধীত্ব জীবনকে হার মানিয়েছে সালাহউদ্দীন। সে গ্রামে আমাদের নিজের জন্ম বলে গর্ববোধ করি।’
জানিনা কেউ এগিয়ে আসবেন কিনা প্রতিবন্ধী মেধাবী এ ছেলের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়ার। তবে জগত সংসার বড় নিষ্ঠুর হলেও এখনো এ দেশে মানুষ মানুষের জন্য আর জীবন জীবনের জন্য দায়িত্ববান হয়ে কেহ না কেহ এগিয়ে আসবেই! সেই আশায় পথ চলতে থাকে সালাহ্ উদ্দীন ও তার মতো বহু প্রতিবন্ধী!
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-