উখিয়ায় চালের বাজার নিম্মমুখী

রোহিঙ্গাদের ত্রানের চাল, কৃষকের সর্বনাশ

কক্সবাজার জার্নাল ডটকম :

ত্রানের চাল,ডাল, তেলসহ নিত্য পন্যের খোলামেলা বাজারজাতকরনে স্থানীয় প্রশাসনে কোন প্রকার বিধি নিষেধ আরোপ না থাকায় উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে রীতিমত ত্রানের হাট বসেছে। এসব হাটে ত্রানের চাল বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২৫/২৬ টাকা দরে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্জিত ধান চালের অভাবনীয় মূল্য হ্রাস পেয়েছে। উৎপাদিত ধান চাল বাজারে বিক্রি করে লগ্নিকৃত খরচ পুষিয়ে তোলা কোনভাবে সম্ভব হবে না।

ত্রানের চাল হাট-বাজারে অবাধে বিক্রির নেপথ্যে কি রহস্য লুকিয়ে আছে তা জানার জন্য কুতুপালং রেজি: রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের চেয়ারম্যান রশিদ আহম্মদের সাথে আলাপ করে যতটুকু তথ্য উপাত্ত পাওয়া গেছে এতে প্রমাণিত হয় ২০১৭ সালের ২৫ই আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা নিবন্ধনের সময় ৮/১০ সদস্যের একটি পরিবারকে ২/৩টি পরিবার দেখিয়ে শটামীর আশ্রয় নিয়ে নিবন্ধন করেছে।

সুতরাং একটি পরিবার ২/৩টি পরিবারের উত্তোলন করতে কোন বাধাঁ বিগ্ন হচ্ছে না বিধায় ঐ পরিবারের চাহিদামত চালগুলো মজুদ রেখে বাদবাকী চাল, ডাল তেলসহ যাবতীয় পন্য সামগ্রী খোলা বাজারে পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছে।
রোহিঙ্গা ম্যানেজম্যান কমিটির সেক্রেটারী মো: নূর জানান, ২০১৭ সালের ২৫শে আগস্টের পরে আসা রোহিঙ্গারা নিবন্ধন করে ক্যাম্পে কয়েকমাস কাটিয়েছে।

পরবর্তীতে অনেকেই তাদের রেশন বই স্থানীয় বা রোহিঙ্গাদের নিকট বিক্রি করে দিয়ে ক্যাম্প থেকে পালিয়েছে। যে কারনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চালের কোন অভাব নেই, উপরোন্ত তাদের চাহিদা পূরন করে খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে অবাদে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মাঝি জানায়, ক্যাম্পে যেসব এনজিও চাল বিতরন করছে তারাই আবার হাত ঘুরিয়ে ঐ চাল ক্রয় করে মজুদ করছে। একই চাল রোহিঙ্গাদের বারবার বিতরন করে লাখ লাখ টাকার বানিজ্য করছে।

এদিকে রোহিঙ্গাদের ত্রানের চাল উখিয়ার হাট-বাজারে সয়লাব হয়ে পড়ার কারনে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ধান চালের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমন অভিযোগ শতশত কৃষকের। খয়রাতি পাড়া গ্রামের কৃষক নজু মিয়া(৪৮) তার নিজস্ব জমি-জমা না থাকায় অন্যের জমি কানি প্রতি ৫ হাজার টাকায় লাগিয়ত নিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন যুগ যুগ ধরে।

সে জানায় জমি লাগিয়তের টাকা, বীজতলা রোপন, পানি খরচ, শ্রমিকের মজুরী সব মিলিয়ে ১ কানি জমিতে তার খরচ পড়েছে প্রায় ১৮ হাজার টাকা। বিনিময়ে ধান পেয়েছেন ৮০ আড়ি (১৬ কেজিতে ১ আড়ি)। সে জানায় বর্তমানে বাজারে ১০০ আড়ি ধানের বাজার মূল্য চলছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এ অবস্থায় ক্ষুদ্র প্রান্তিক ও বরকাচাষিরা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো: শরিফুল ইসলামের সাথে আলাপ করে কৃষক বাচিঁয়ে রাখার বিষয় নিয়ে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগের ঘটনা ঘটেনি।

মাঠ কর্মীদের ঘাম ঝড়া পরিশ্রম ও সময়মত জমিতে সেচ সরবরাহ পাওয়ার কারনে এবার বোরো বাম্পান উৎপাদন হয়েছে। তবে বাজারে ধান চালের বাজার অভাবনীয় হ্রাস পাওয়ার কৃষকেরা হতাশ হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় সরকার যদি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ন্যার্য মূল্যে ধান চাল ক্রয় করেন তাহলে কৃষকেরা উপকৃত হবে।

আরও খবর