আসছে ‘ফণী’, আতঙ্কে রোহিঙ্গারাও

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয় শিবিরের পশ্চিম পাশে মধুরছড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। এই শিবিরের উঁচু পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে আশ্রয় শিবিরটি। পাহাড়ের ঢালুতে সারি ধরে তৈরি হয়েছে ঘর। বর্ষার সময় ঢলের পানিতে বসতবাড়ি বিলীন হয়। ভূমিধসে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি। এখন ঘূর্ণিঝড় হলে কী হবে, তা নিয়ে ভাবনার শেষ নেই রোহিঙ্গাদের।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার জানান, স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রশাসনের প্রস্তুতি আছে। ঘূর্ণিঝড় ফণী শনিবার সকালের দিকে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তার আগেই উপকূলীয় এলাকার লোকজনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হবে। বিশেষ করে উখিয়া ও টেকনাফের শতাধিক ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র এবং হাজারখানেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে আনা হবে।

আশরাফুল আফসার বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করা সব বেসরকারি সংস্থা, এনজিও, জাতিসংঘ উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), বিশ্ব খাদ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউএফপি) সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও জানমাল রক্ষার ক্ষেত্রে সেখানে ১০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। 

রোহিঙ্গাদের ভাষ্য, এখানে থাকা-খাওয়া নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ে ঘরটি বিলীন হলে মাথা গোঁজার ঠাঁই কোথায় পাব?  বলা হচ্ছে ৬-৭ নম্বর সতর্ক সংকেত পড়লে ক্যাম্পের সবাইকে বসতি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু ঘরের মালামাল রেখে কোনো রোহিঙ্গা কয়েক কিলোমিটার দূরের (উখিয়া-টেকনাফের) আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে রাজি হবে না। তা ছাড়া যেসব ঘরে গর্ভবতী ও বৃদ্ধা নারী কিংবা অসুস্থ লোকজন রয়েছে, তাদের পাহাড় থেকে নিচে নামানো-ওঠানো খুবই কঠিন কাজ। হাঁটা রাস্তা ছাড়া যানবাহন চলাচলের কোনো ব্যবস্থাও অধিকাংশ শিবিরে নেই। এমনকি সব আশ্রয় শিবিরে ৯০ শতাংশ বসতি পলিথিনের ছাউনিযুক্ত। অবশিষ্ট বসতি টিনের ছাউনি। ঘূর্ণিঝড়ে পলিথিনের ছাউনি উড়ে গেলে তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু টিন উড়লে মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা আছে। এ ব্যাপারে লোকজনকে সতর্ক করা প্রয়োজন।

রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, উপকূলে রেডক্রিসেন্টের প্রায় সাত হাজার স্বেচ্ছাসেবীর পাশাপাশি রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর জন্য আরও এক হাজার ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাত হানার বিষয়সহ ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি ও মোকাবিলা নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে গিয়ে সতর্ক ও সচেতন করছেন।

আরও খবর