এম. বেদারুল আলম :
কক্সবাজারে এ বছর বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সরকার সার ও বীজে বিশেষ প্রনোদনা দিয়ে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
আবহাওয়া কৃষি উপযোগি, পোকার আক্রমন না থাকা, যথাসময়ে সারের যোগান, কৃষি অধিদপ্তরের মাঠকর্মীদের সঠিক নির্দেশনার কারনে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে দাবি কর্মকর্তাদের। তবে বাম্পার ফলনের সাথে যোগ হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ফনির চোখ রাঙ্গানি। আবহাওয়া ঘুমোট হওয়ায় যে কোন মুহুর্তে আঘাত হানতে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ‘ফণি’। কৃষকদের আজ কালের মধ্যে পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আকম শাহারিয়ার।
তিনি জেলার সকল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে ২৯ এপ্রিল জরুরি বৈঠক আহবান করে জানিয়েন দেন দূর্যোগর্পূণ আবহাওয়ার কারনে কৃষকরা যেন মাঠে থাকা পাকা ধান দ্রুততম সময়ের মধ্যে কেটে ঘরে তুলে। তিনি জানান, আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সকল কৃষকদের মাঝে ম্যাসেজ পৌছে দিয়েছি যেন ধান রক্ষায় কম সময়ের মধ্যে নিরাপদে কেটে ধান ঘরে তুলে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, সহকারি কৃষি কর্মকর্তা, উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা যেন বাজারে ,হাটে, মসজিদের মাইকের মাধ্যমে এবং মাইকিং করে পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার কাজ সম্পন্ন করতে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করেন।
এদিকে বোরোর বাম্পার ফলনের কারনে কৃষকরা মহা খুশি। ইতোমধ্যে টেকনাফে ৮০ শতাংশ, উখিয়ায় ৭০ শতাংশ, চকরিয়ায় ৬০ শতাংশ, সদরে, পেকুয়া, রামুতে ৪০ শতাংশ, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে ৪০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে দাবি জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আকম শাহারিয়ারের। অবশিষ্ট ধান মাঠে পাকলেও কৃষকরা এখনো ঘরে তুলতে পারেনি। সাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ফণির আঘাতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ যেন না হয় সে বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এ কর্মকর্তার দাবি কক্সবাজারে বোরোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে খাদ্যে উদ্বৃত্ত থাকবে। অবশিষ্ঠ ধান ১০/২০ দিনের মধ্যে ঘরে তুলতে পারবে কৃষকরা। তবে প্রাকৃতিক দূর্যোগ হলে ভিন্ন কথা। যদি শতভাগ পাকা ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পারে তাহলে জেলার ২৪ লাখ মানুষের যোগান দিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার মে.টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নিবিড় বার্ষিক সফল উৎপাদন কর্মসূচীর আওতায় ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বোরো ধানের উপজেলা ভিত্তিক জমি আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এবং অগ্রগতি নির্ধারণ করা হয়। জেলায় চলতি বোরো মওসুমে ৫৭ হাজার ৪শ ৭২ হেক্টর জমিতে আবাদের বিপরীতে সম্ভ্যাব্য উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন চাল।
উপজেলা ভিত্তিক আবাদ ও উৎপাদনের অগ্রগতি যথাক্রমে চকরিয়ায় ১৮ হাজার ৮০০ হেক্টরে ৭৭ হাজার ৬শ ২৩ মেঃ টন, পেকুয়ায় ৭ হাজার ৩শ হেক্টরে ২৯ হাজার ৩শ ৭৫ মেঃ টন, রামুতে ৬ হাজার ৬০০ হেক্টরে ২৫ হাজার ৭শ ৯৪ মেঃ টন, সদরে ৭ হাজার ৩শ হেক্টরে ২৮ হাজার ৭শ ৭ মেঃ টন, উখিয়ায় ৬ হাজার ৪৫০ হেক্টরে ২৫ হাজার ৩শ ৫৮মেঃ টন, টেকনাফে ১ হাজার ২শ ৭৭ হেক্টরে ৪ হাজার ৭শ ৬৭ মেঃ টন, মহেশখালীতে ৭ হাজার ১ শ হেক্টরে ২৮ হাজার ৭শ ২৬ মেঃ টন এবং কুতুবদিয়ায় ২ হাজার ৬শ ৪৫ হেক্টরে ১০ হাজার ৩শ ৮৭ মেঃ টন।
জেলায় বোরো মওসুমে ৩ জাতের ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এদের মধ্যে ৮৮৮৫ হেক্টরে হাইব্রীড জাতের ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪১,৭৫৯ মেট্রিক টন, উফশী জাতের ৪৬ হাজার ৬শ ৪৯ হেক্টরে ১ লাখ ৮২ হাজার ৮শ ৬৪ মেঃ টন এবং স্থানীয় জাতের ৭৫৩ হেক্টরে ১ হাজার ৪শ ৬০ মেঃ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে সদরের পিএমখালীতে দায়িত্বরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ লোকমান জানান, আমি সদরের প্রায় কৃষকদের ৪/৫ মে’র মধ্যে ধান কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ পরিচিত সবায়কে ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য বলা হয়েছে।
এ কর্মকর্তার দাবি এ বছর কৃষকরা নির্দেশনা মেনে চাষ করায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিশেষ করে কয়েকটি জাত বিনা ৮, ১০, ব্রি- ৭৪, ৬২, ৩৩, ৫৮ জাত খুবই ভাল ফলন হয়েছে।
স্থানীয় লাল ধান, হাইব্রিডের মধ্যে সুপার, হীরা, পান্না, ময়না জাত এ বছর ফলন দিয়েছে। বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-