একটি প্রেমের সমাপ্তি ঘটল যেভাবে

ভৈরবে নার্স তানিয়া বেগম আত্মহত্যার ঘটনায় প্রেমিক মিজানুর রহমানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় আরও ৪/৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। বিয়েতে প্রেমিকের অসম্মতি ও প্রতিবেশীদের অমানুষিক নির্যাতনে প্রেমিকা আত্মহত্যা করেছে বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার রাতে তানিয়ার বাবা মিলন মীর বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন, শ্রীনগর গ্রামের প্রেমিক মিজানুর রহমান বাবু (২৮), তার মা হেলেনা বেগম (৫০), বোন রুপালী বেগম (৩০), মধ্যের চর গ্রামের প্রতিবেশী শাহ আলম (৪০), নূর আলম সরকার (৪৫), ফিরোজ মিয়া (৩৫), চায়না বেগম (৪৫) ও ফরিদা বেগম (৪০)।

পুলিশ রোববার দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ জনকে মধ্যেরচর এলাকা থেকে আটক করেছে। আটকরা হলেন, প্রতিবেশী জিহাদ ও সানোয়ার হোসেন।

এদিকে, তানিয়ার মরদেহ কিশোরগঞ্জে ময়নাতদন্তের পর ভৈরবে নিয়ে আসা হয় এবং বিকেলে পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় ঈদগাহ মাঠে তার নামাজে জানাজা শেষে মধ্যেরচর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

পরিবারের অভিযোগ, বিয়েতে প্রেমিকের অসম্মতিই তার আত্মহত্যার কারণ নয়। ঘটনার পর প্রতিবেশীরা তানিয়ার বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, তার মাকে গালমন্দ করা, তাকে ধিক্কার ও লজ্জা দিয়ে মানসিকভাবে নির্যাতন করার কারণেই সে মৃত্যুর পথ বেছে নেয়। একারণে তার বাবা আত্মহত্যার প্ররোচণাকারী হিসেবে কয়েকজনকে মামলায় অভিযুক্ত করেন। মামলার পর পর অভিযুক্তকারীদের ধরতে পুলিশ এলাকায় অভিযান চালিয়েছে। তবে সবাই পালিয়ে গেছে বলে জানায় পুলিশ।

সকালে তানিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা শেফালী বেগম মেয়ের ছবি হাতে নিয়ে মাটিতে গড়াগরি দিয়ে বিলাপ করে কাঁদছে। ঘটনার দিন শনিবার তার বাবা বাড়িতে ছিলেন না। খবর শুনে শনিবারই চট্টগ্রাম থেকে বাড়িতে এসে রাতে থানায় মামলা করেন। তিনিও বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।

Boirab-1



জানা গেছে, ভৈরব উপজেলার মধ্যেরচর গ্রামের মিলন মীরের মেয়ে তানিয়া বেগমের (২৩) শ্রীনগর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মিজানুর রহমান বাবুর সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রেম ছিল। তারা দুজনে ভৈরবের সাজেদা আলাল নামের একটি হাসপাতালে চাকরি করতো। তানিয়া হাসপাতালে নার্সের চাকরি করলেও মিজান হাসপাতালের ফার্মেসির কর্মচারী ছিলেন। এই সুবাদে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।

গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মিজান তার প্রেমিক তানিয়ার বাড়িতে গেলে পরিবারের লোকজন তাকে আটক করে। এসময় তানিয়ার পরিবারের লোকজন মিজানের অভিভাবকদের রাতেই বাড়িতে ডেকে এনে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এসময় মিজান ও তার অভিভাবকরা আইডি কার্ড নেই অজুহাতে বিয়েতে অসম্মতি জানায়। পরে শুক্রবার সকালে মিজানকে হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়।

এ ঘটনার পর প্রতিবেশীরা তানিয়ার বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে এবং তার মাকে গালমন্দ করে। লজ্জায় তানিয়া বেগম ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে বলে তার বাবা অভিযোগ করেন।

তানিয়া নার্সের চাকরির পাশাপাশি স্থানীয় জিল্লুর রহমান কলেজের অনার্সের ছাত্রী ছিলেন। তার শেষ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল । ইতোমধ্যে ৫টি পরীক্ষা দেয়া হলেও আরও ৪টি পরীক্ষা দেয়ার বাকি ছিল।

তানিয়ার বাবা মিলন মীর জানান, আমার মেয়েটি মেধাবী ছাত্রী ছিল। সংসারের অভাব দূরসহ ও পড়াশোনার খরচ যোগাতে সে সামান্য বেতনে নার্সের চাকরি করতো। তার প্রেমের খবরটি আমি অবগত ছিলাম না। তবে ঘটনার পর বিয়ের অসম্মতির জন্য তার আত্মহত্যার মূল কারণ নয় বলে তিনি দাবি করেন। প্রতিবেশীরা মানসিক নির্যাতন করার কারণে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে তিনি জানান।

ভৈরব থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. মোখলেছুর রহমান জানান, ঘটনাটি মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। প্রেমিকের বিয়েতে অসম্মতি ও প্রতিবেশীদের মানসিক নির্যাতনে সে আত্মহত্যা করেছে। যা প্রাথমিক তদন্তে আমরা প্রমাণ পেয়েছি।

আরও খবর