রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বড় দুর্ঘটনা হলে দায় নেবে কে?

ফাইল ছবি

ডেস্ক রিপোর্ট – রোহিঙ্গাদের সহায়তা নিয়োজিত কয়েকটি এনজিও নিজেদের সুবিধার জন্য কক্সবাজারে মানবেতর জীবন-যাপনকারী রোহিঙ্গাদের ভাষানচরে স্থানান্তরে আপত্তি করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কক্সবাজারের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাম্পগুলোতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে? প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এসব সংস্থাগুলোকেও (ভাষানচরে স্থানান্তরে বিরোধী এনজিও) কিছুটা দায়ভার নিতে হবে। জাতিসংঘকেও আমি সেই কথা জানিয়েছি।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে গণভবনে ব্রুনেইয়ে সরকারি সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বেশ শক্তভাবে সবাইকে বলছি- আমরা স্থান দিয়েছি, সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু এদের যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে… সামনে বর্ষাকাল, যেকোনো সময় পাহাড় ধস হয়, সাইক্লোন হতে পারে, জলোচ্ছ্বাস হতে পারে, যেটা আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত হয়ে থাকে। এই এতগুলো মানুষ সেখানে। যদি এদের কোন রকম দূর্ঘটনা ঘটে এর জন্য দায়ী কে থাকবে? এসব সংগঠনগুলোকেও কিছুটা দায়ভার নিতে হবে এবং জাতিসংঘকেও সেই কথা জানিয়েছি।

‘কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে অধিকতর নিরাপদ ও ভালো জীবন- যাপনের সুবিধা সমল্বিত আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে ভাষানচরে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের সহায়তায় নিয়োজিত কয়েকটি এনজিও ভাষানচরে স্থানান্তরে আপত্তি তুলেছে, এমনকি রোহিঙ্গাদের ভুল বোঝানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে,’ এ বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন প্রধানমন্ত্রী। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের যে সমস্ত সংস্থাগুলো আছে যারা উদ্বাস্তু নিয়ে কাজ করে বা মাইগ্রেশন নিয়ে কাজ করে। বা বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আমরা কথা বলছি। পাশাপাশি ভাষাণচরে যে উন্নয়নটা আমরা করেছি সেই ছবিটাও তাদের দেখিয়ে আমরা বলেছি এখানে তারা যেতে পারে। 

তিনি বলেন, ভাষানচরে যেভাবে ঘরগুলো তৈরি করা, এরা কিছু জীবন-জীবিকারও সুযোগ পাবে। ওখানে যে জায়গা আছে আমরা ১০ লাখকে সুন্দরভাবে রাখতে পারবে। সেখানেই সাইক্লোন শেল্টারও করে দিয়েছি, সেখানে স্কুল হতে পারে, হাসপাতালও হবে। সেখানে রিলিফের মালপত্র রাখতে গুদামঘরও করা হয়েছে। ওখানে সুপেয় পানিরও ব্যবস্থা আছে। 

রোহিঙ্গারা ভাষানচরে না গেলে সেখানে বাংলাদেশের নিজস্ব লোকজনের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওখানে ওরা (রোহিঙ্গা) যদি না যায় আমরা আমাদের দেশের লোকদের সেখানে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেবো। সেখানে ট্যুরিস্টের জায়গা হবে। ওরা না গেলে আমাদের লোকদের সুন্দর থাকার ব্যবস্থা করে দিবো। 

রোহিঙ্গাদের ভাষানচরে স্থানান্তরের বিরোধী কিছু সংস্থার দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খুব খোলামেলা বলতে চাই, কক্সবাজার যাওয়া খুব সহজ, থাকার জায়গা খুব সুন্দর, তারা মানবিক কারণে যারা সেবা দিতে আসেন তারা বোধহয় নিজেদের সেবার দিকে একটু বেশি করে তাকান। এখানেই তাদের আপত্তি, আর কোনো কারণ দেখি না।

ক্যাম্পে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপনকারী রোহিঙ্গাদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নইলে এই রিফিউজিরা যে অবস্থায় থাকে, এই পলিথিন দিয়ে কোন মতে ছোট ছোট ঘর বা কুঁড়ে ঘর করে, এভাবে থাকাটাও কষ্টকর। ৪০ হাজারের ওপর নতুন বাচ্চা জন্ম নিয়েছে এখানে। সেখানে অনেক বাবা-মা মরা এতিম বাচ্চা আছে। এখন কথাটা হলো এরা ফেরত যেতে চাইলেও বা ভাষাণচরে যেতে চাইলেও অনেক সংস্থা আছে তারাই পাঠাতে চায় না। কারণ বিভিন্ন ধরনের সংস্থা, এনজিও থেকে শুরু করে অনেকেই এখানে ভলান্টিয়ার সার্ভিস দিতে আসে, আমার যেটা ধারণা ওই জায়গাটাতেই সমস্যাটা। 

শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজারের মতো এতো চমৎকার একটা জায়গা, আসা, থাকা খাওয়া, তাদের জন্য ভলান্টিয়ার কাজ করে কিছু সুনাম করা এটাও তো, এদিকটাও আছে।

জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আমার সঙ্গে দেখা করেছে তাদের আমি স্পষ্ট বলে দিয়েছি। তারা রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক কিছু করতে চায়। আমার প্রস্তাব তাদের কাছে, আপনারা যে এতো কিছু করবেন তাদের জন্য, সেটা মিয়ানমারের মাটিতে করেন। তাদের জন্য ঘরবাড়ি করে দেয়া, তাদের বাচ্চাদের জন্য স্কুলের ব্যবস্থা করা, হাসপাতালের ব্যবস্থা করা, তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করা। সর্বোপরি তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা। ইউএনএইচসিআর, আইওএম এরা যাবে বলছেন, মিয়ানমারে। কিন্তু এখানে মিয়ানমার সরকারের প্রচণ্ড অনীহা।

আরও খবর