শফিক আজাদ, উখিয়া :
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া বল পূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের খাবার পানির চাহিদা পূরনের জন্য বিভিন্ন এনজিও সংস্থা জরুরী ভিত্তিতে যে সমস্ত টিউবওয়েল স্থাপন করেছিল তা এখন বিকল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৯০ শতাংশ টিউবওয়েলই অকেজো হয়ে গেছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ঠরা জানিয়েছেন। অল্প সংখ্যক গভীর নলকূপে পানি আসলেও এ সামান্য পানি দিয়ে সবার চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।
ফলে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। আবার অনেকে চাহিদা মেটাতে অস্বাস্থ্যকর পানি পান করার কারনে বিভিন্ন রোগব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে বলে রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উখিয়ার কুতুপালং, মধুরছড়া, লম্বাশিয়া, ময়নারঘোনা, তাজনিমারখোলা, বালুখালী, ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তাদের অভিযোগ টিউবওয়েল স্থাপনের নামে এনজিও সংস্থা কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। নাম সর্বস্ব টিউবওয়েল বসিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে।
গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড তাপমাত্রায় কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে পলিথিনের ঝুপড়িগুলোর ভেতরে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
রোহিঙ্গা মাঝি হামিদ হোসেন জানান, তাদের ক্যাম্পের একটি টিউবওয়েলেও পানি নেই। অনেকেই বাজার থেকে বোতলজাত পানি ক্রয় করে তৃষ্ণা নিবারণ করছেন। অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য পানি মিলছে না। পানির অভাবে শিশু ও বৃদ্ধরা ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে। তারা আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগে। তিনি জানান, পানির সমস্যা দূরকরণে সরকারিভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হলেও তা অপ্রতূল।
থাইংখালী তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রয়েছে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেওয়ার শুরুতেই নলকূপ বসানোর হিড়িক পড়েছিল। কে কিভাবে নলকূপ স্থাপন করেছে তার কোনো হদিস নেই। ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ আলী জানান, স্থানীয় পাড়াপড়শির বাসাবাড়ি থেকে অনেকেই পানি সরবরাহ করছে। তবে রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগ খাল, নালা, পুকুর ও জলাশয়ের পানি ব্যবহার করছে। যে কারণে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু।
ক্যাম্পে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ব্র্যাকের কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী জানান, ক্যাম্পে পানিবাহিত রোগ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিগগির বৃষ্টি না হলে রোহিঙ্গাদের পরিণতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল।
উখিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিলের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সময় বিভিন্ন এনজিও সংস্থার পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে যেসমস্ত টিউবওয়েল গুলো বসানো হয়েছিল তার গভীরতা হচ্ছে মাত্র ৬০-৭০ ফুট। বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পানির স্তর নেমেছে ৫৫-৬০ ফুটে। যার কারনে এসব টিউবওয়েলে পানি উঠছেনা। অর্থাৎ ৯০ভাগ টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়েছে। তবে গভীর নলকূপ গুলো থেকে পানি উঠতেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, টিউবওয়েল অকেজো হলেও ক্যাম্পগুলোতে পানি সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা কাজ করছে। এমনকি বিভিন্ন ক্যাম্পে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গাড়ী ভর্তি করে পানি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-