কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক :
মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের কারণে পর্যটন শহর কক্সবাজারে হঠাৎ কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি দেশী-বিদেশী উন্নয়ন সংস্থাগুলোর (এনজিও) কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। এতে সড়কগুলোয় হঠাৎ করে বেড়ে গেছে যানবাহনের সংখ্যা। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এরই মধ্যে নাজুক হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের সড়ক অবকাঠামো। তাই কক্সবাজারের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে সওজের অধীনে থাকা সড়ক-মহাসড়কের পরিমাণ ৫৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, ৫০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ৩৫০ কিলোমিটার জেলা সড়ক। জাতীয় মহাসড়ক ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের দৈর্ঘ্য ৮০ কিলোমিটার।
এ সড়ক দিয়েই কক্সবাজার শহর থেকে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতায়াত করেন দেশী-বিদেশী এনজিও সংস্থার কর্মীরা। মাত্র ১৮ ফুট প্রস্তের এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য ও বিভিন্ন পণ্য পরিবহন হয়। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সড়কটিতে সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড যানজট। এছাড়া প্রতিদিনই ঘটছে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা। এসব কারণে দ্রুত সময়ে সড়কটি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সওজ।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ৮০ কিলোমিটার সড়কটি ১৮ ফুট থেকে সম্প্রসারণ করে ২৪ ফুটে উন্নীত করা হচ্ছে। বাজার অংশগুলোয় এটি প্রায় ২৮ ফুটে বর্ধিত করা হবে। পাশাপাশি এ সড়কের ২৭টি ছোট-বড় কালভার্টকে সড়কের চেয়েও বড় আকারে সম্প্রসারণ করা হবে। তিনটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন হবে ৪৫৮ কোটি টাকার এ প্রকল্প। প্রকল্পটির দুটি প্যাকেজের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। তৃতীয় প্যাকেজের কাজও আগামী মাসের মধ্যে শুরু হবে বলে আশা করছে সওজ কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রথম প্যাকেজের আওতায় কক্সবাজারের লিংক রোড থেকে উখিয়ার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারে ১২২ কোটি টাকা এবং উখিয়ার ফায়ার সার্ভিস থেকে টেকনাফের উনচিপ্রাং পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারে ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। প্রকল্পের অবশিষ্ট টাকায় টেকনাফ পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণে শিগগিরই কাজ শুরুর কার্যাদেশ দেয়া হবে। এছাড়া যানজট নিরসনে কোর্টবাজার, মরিচ্যা, উখিয়া সদর, কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালীসহ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোকে প্রায় ৪৫ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত করা হবে।
সওজ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে সড়কটি সম্প্রসারণ হলেও একই সড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও চলছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৫৮ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে (সার্ভিস লেনসহ) উন্নীত করতেও একটি প্রকল্প সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্রতীর ঘেঁষে একটি দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণেও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে সওজ। আগামী মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে।
জানতে চাইলে সওজ চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শোয়েব আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে কক্সবাজারের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর সংস্কার সময়ের দাবি। বিদেশী সংস্থাগুলোও এ বিষয়ে আর্থিকভাবে সহায়তা করছে। পাশাপাশি সওজও নিজেদের অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো আপাতত যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছে।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সড়কটি সম্প্রসারণ ছাড়াও কক্সবাজারের অভ্যন্তরীণ সড়ক সম্প্রসারণেও নেয়া হয়েছে একাধিক প্রকল্প। এরই মধ্যে লিংক রোড থেকে কলাতলী হয়ে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত আট কিলোমিটার সড়কটি চার লেনে সম্প্রসারণ করার কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া হারিয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়ক এবং উখিয়া থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক সম্প্রসারণ ছাড়াও অভ্যন্তরীণ একাধিক সড়ক-মহাসড়ক সম্প্রসারণে নেয়া হয়েছে একাধিক প্রকল্প।
এ বিষয়ে দোহাজারী সড়ক ও জনপথের (দোহাজারী সার্কেল) নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, আগের পুরনো সরু সড়কের পরিবর্তে চার লেনের সড়ক ছাড়া প্রতিদিনই বাড়তে থাকা যানবাহনের চাপ সামলানো সম্ভব নয়।
এডিবির অর্থায়নে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সড়কটি সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এটি ২০২০ সালের জুনের মধ্যে সম্প্রসারণ হয়ে গেলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় যাতায়াত অনেক সহজ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-