শবে বরাতে ক্ষমা লাভের অনন্য সুযোগ

আল্লাহ তাআলা অসীম দয়ালু ও পরম করুণাময়। তিনি বান্দাকে ক্ষমা করতে চান, ক্ষমা করতে তিনি ভালোবাসেন। শরীরে কাঁটা বিঁধার কষ্ট থেকে শুরু করে রুজি রোজগারের কষ্ট—সব কিছুতেই তিনি বান্দাকে প্রতিদান দেন—ক্ষমা কিংবা মর্যাদা। এ আল্লাহ তাআলার মহানুভবতা।

সময়ে সময়ে তিনি বান্দার প্রতি সাধারণ ক্ষমার ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন। শবেবরাত সেসব সময়ের অন্যতম একটি।
 
মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা ১৫ই শাবানের রাতে (শবে বরাতে) সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং: ৫৬৬৫)
 
শবে বরাতের ফজিলত
শবে বরাতে আল্লাহ তাআলা ক্ষমার ঘোষণা করেছেন। এটি সবার জন্য সাধারণ ক্ষমা। তবে দুইশ্রেণীর হতভাগা ছাড়া সবাইকে তিনি ক্ষমা করবেন। দয়া ও রহমতের দৃষ্টি দানে ধন্য করবেন।
 
মূলত দাগী-কপট অপরাধীদেরই সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনা হয় না। হাদিসে দুই ধরনের অপরাধীকে ক্ষমার অযোগ্য বলা হয়েছে। এক. মুশরিক বা আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপনকারী। শিরক তো সর্বনাশা, এর কোনো ক্ষমা নেই। তাই মুশরিকরা আল্লাহর ক্ষমা থেকে চির বঞ্চিত। তবে তারা যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিতে পারেন।
 
দুই. হিংসুটে-বিদ্বেষী। হাদিসে আছে, হিংসা সব নেক আমল ছারখার করে দেয়। এমনকি হিংসা মানুষকে খুন-খারাপি পর্যন্ত নিয়ে যায়। হাদিসে স্পষ্টতই বলা হয়েছে, শবে বরাতে ক্ষমা পেতে হলে শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত থাকতে হবে।
 
শবে বরাতে আল্লাহ তাআলার ক্ষমা অবারিত
হযরত আয়শা (রা.) বলেন, এক রাতে রাসুল (সা.)-কে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকিতে দেখতে পেলাম। রাসুল (সা.) তখন বললেন, ‘যখন শাবান মাসের ১৫ই রাত আসে অর্থাৎ যখন শবে বরাত হয়, তখন আল্লাহ পাক প্রথম আসমানে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাদের ক্ষমা করে দেন।’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ৭৩৯)
হাদিসটির বিশদ বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.) একাকী, নীরবে, নিভৃতে গিয়েছিলেন কবরস্থানে। দলবেঁধে যান নি। আর সে রাতে কবরস্থানে একা যাওয়া কিংবা দলবেঁধে যাওয়া আবশ্যক কিছু নয়। এমনটা করতেও বলেন নি তিনি কাউকে।
 
শবে বরাতে নফল নামাজ, জিকির, ইস্তিগফার
যারা আল্লাহ তাআলার অধিক নৈকট্য ও ভালোবাসায় সিক্ত ও সিঞ্চিত হতে চান, তারা শবে বরাতে নফল নামাজ, জিকির, ইস্তিগফার পড়তে পারেন সাধ্যমতো।
 
আলা ইবনুল হারেস থেকে বর্ণিত হাদিসে আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে রাসুল (সা.) নামাজে দাঁড়ান এবং এতো দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো- তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলী নাড়া দিলাম; তার বৃদ্ধাঙ্গুলী নড়ে উঠলো। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে আয়েশা/হুমাইরা! তোমার কি এ আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না; হে আল্লাহর রাসুল! আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা? রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন. তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম. আল্লাহ ও তার রাসুলই ভাল জানেন। রাসুল (সা.) তখন ইরশাদ করলেন, এটা অর্ধ শাবানের রাত। আল্লাহ তাআলা এ রাতে বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করেন ও অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষপোষণকারীদের ছেড়ে দেন, তাদের অবস্থাতেই। শুআবুল ঈমান, হাদিস নং: ৩৬৩৫)
 
হাদিসের একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, রাসুল (সা.) শবে বরাতে নিজ ঘরে এবং একাকী নফল নামাজ আদায় করছেন। কোনো নির্দিষ্ট সুরা কিংবা রাকাতেরও উল্লেখ নেই।
 
শবে বরাতে আমরা যা করতে পারি
জামাতে এশার নামাজ আদায়ের পর সম্ভব হলে নিজ ঘরে নফল নামাজ, জিকির, তেলাওয়াত, দুরুদ, ইস্তিগফার, দোয়া, তাওবাসহ সব ধরনের ভালো কাজ করা যায়। আর এর কোনোটাই আবশ্যক নয়, ঐচ্ছিক। কেউ করতে চাইলে করতে পারবেন। বিনিময়ে আল্লাহ তাকে পুণ্য ও সওয়াব দান করবেন। শবে বরাতে আমলের জন্য কাউকে বাধ্য করা বা তিরস্কার করা কখনো উচিত নয়।
  
লেখক: ফতওয়াবিষয়ক গবেষক

আরও খবর