আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর এ কার্যক্রমে ঢুকে যেতে পারেন মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা। তাই কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এবং চট্টগ্রাম জেলার ৩২ উপজেলাকে বিশেষ এলাকা হিসেবে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এসব এলাকার জন্য বিশেষ ফরমের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করবে নির্বাচন কমিশন। যেখানে কেউ যদি রোহিঙ্গাদের ভোটার হতে সহায়তা করে, তবে মামলা দেওয়া ছাড়াও আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে ইসি।
বিশেষ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে- কক্সবাজারের সদর উপজেলা, চকোরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। বান্দরবানের সদর, রুমা, থানচি, বোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা।
এছাড়াও রাঙামাটির সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল এবং চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলাকে বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এসব এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) আহ্বায়ক ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে গঠিত ১৫ সদস্যের বিশেষ কমিটিকে ১০টি কাজ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক আব্দুল বাতেন জানান, বিশেষ এলাকাগুলোতে কড়া সতর্কতা অবলম্বন করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে। কারও বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের সতত্যা পেলে, আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে কমিশন।
ইসির সহকারী সচিব মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত বিশেষ কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে বলা হয়েছে- বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত সকল জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরগুলো অনলাইনে যাচাই করবেন। যাচাইকালে নিম্নলিখিত বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ করবেন:
ক. ভাই-বোনের ডাটাবেজে পিতা-মাতার নামের সঙ্গে আবেদনকারীর ফরম-১ এ উল্লিখিত পিতা-মাতার নামের মিল থাকতে হবে।
খ. চাচা-ফুফুর ডাটাবেজে তাদের পিতার নাম ও ঠিকানার সঙ্গে আবেদনকারীর বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত পিতামহের নাম ও ঠিকানার মিল থাকতে হবে।
গ. প্রয়োজনে নিকট আত্মীয়র মোবাইল নম্বরে কথা বলে তাদের পরিচিতি-তথ্য সম্পর্কিত বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
ভোটার হতে ইচ্ছুক উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাংলাদেশের কোথাও ‘সচরাচর নিবাসী’ হতে হবে। নির্বাচন কমিশনের জারি করা পরিপত্রে উল্লিখিত জেলাগুলোর যদি কেউ সচরাচর নিবাসের দাবি করেন, তবে সেই দাবির যথার্থতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান করতে হবে। শুধু একটি নিবাসের ঠিকানাই এ জন্য যথেষ্ট হবে না। নিবাসের প্রমাণস্বরূপ তাকে এ সংক্রান্ত প্রণীত অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ ফরম অনুযায়ী যা চাওয়া হবে সব তথ্য দিতে হবে।
যদি বিশেষ এলাকায় কোনো ব্যক্তি নিজস্ব সম্পত্তির সূত্রে তালিকাভুক্তির দাবি করেন, তবে তাদের সম্পত্তির মালিকানা ও এতদসংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য সংশ্লিষ্ট দলিলাদির তথ্য সংগ্রহকারীকে দিতে হবে।
যারা বাংলাদেশি কোনো নাগরিকের সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে ভোটার তালিকাভুক্তির দাবি করবেন, তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা নাগরিক সনদপত্রসহ দলিলাদির তথ্য সংগ্রকারীকে দিতে হবে।
অন্য কোনো সূত্রে কেউ ভোটার হওয়ার উপযুক্ত দাবি করলে, তাদের এতদসম্পর্কিত প্রমাণাদি তথ্য সংগ্রহকারীকে দিতে হবে।
তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফরম-২ (ভোটারের তথ্য যে ফরমে লিপিবদ্ধ করা হয়) এর সঙ্গে এ কার্যক্রমের আওতায় অতিরিক্ত তথ্য ফরমের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় দালিলিক কাগজপত্রসহ প্রতিটি কেস উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে জমা দেবেন। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা উল্লিখিত কাগজপত্রাদি উপজেলা বিশেষ কমিটির কাছে উপস্থাপন করবেন।
উপজেলা বিশেষ কমিটি যাদের আবেদন বাতিল করবে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি খসড়া তালিকা প্রকাশের পর উক্ত বিষয়ে বিশেষ কমিটির সিদ্ধান্তের অনুলিপি নিয়ে সংশোধনকারী কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারবেন।
রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের সপক্ষে সহযোগিতা অথবা মিথ্যা তথ্য দেন অথবা মিথ্য-জাল কাগজপত্র সরবরাহ করেন অথবা সংশ্লিষ্ট কারও গাফিলতি পরিলক্ষিত হয়, তাদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন ২০০৯-এর ১৮ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দেবে ইসি। এ ধরনের অপরাধের কারণে অনধিক ছয়মাস কারাদণ্ড বা অনধিক দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান আছে আইনে।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, হালনাগাদে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলবে ১৩ মে পর্যন্ত। আর ২৫ মে থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম। তথ্য সংগ্রহের সময় কেউ বাদ পড়লে, নিবন্ধনের সময়ও ভোটার হতে পারবেন।
২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম এ রকম নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তাদের নাম ২০২০ সালে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আর যাদের বয়স এখনও ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি, তাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
৮০ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে এবার হালনাগাদের জন্য ৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বাজেট নিয়ে মাঠে নামছে ইসি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-