উখিয়ার ইয়াবা কারবারি শুকুর ড্রাইভার আটক

বিশেষ প্রতিবেদক :

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মরিচ্যা বাজার এলাকার ইয়াবা কারবারি আবদুস শুকুর ড্রাইভারকে (৪২) অবশেষে পুলিশ আটক করেছে। আবদুস শুকুর ড্রাইভার মরিচ্যা গরু বাজার মসজিদের (সুলতানিয়া মসজিদ ও মাদ্রাসা) উত্তর পার্শ্বে লাগোয়া বাড়ির বাসিন্দা মৃত আলী আহমদের ছেলে।

পুলিশ গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মরিচ্যা বাজার এলাকা থেকে শুকুর ড্রাইভারকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

এদিকে টেকনাফ সীমান্তে একে একে ইয়াবা সিন্ডিকেটের ৭৫ জন সদস্য বন্দুকযুদ্ধে নিহত হবার পর উখিয়া উপজেলার মরিচ্যা বাজার থেকে পালংখালী এবং মেরিন ড্রাইভ থেকে পূর্বের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমানা পর্যন্ত চৌহদ্দির উখিয়া উপজেলায় ইয়াবা কারবারিদের রমরমা কারবার ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার সচেতন লোকজন টেকনাফের পর উখিয়ায় ইয়াবা বিরোধী অভিযান জোরদার করার জন্য পুলিশের কাছে নানাভাবে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কক্সবাজারের পুলিশ সীমান্তের এই দুই উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়ায় ইয়াবা প্রতিরোধে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেছেন, টেকনাফ-উখিয়া সীমান্তে ইয়াবা পাচার বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের অভিযান চলবে।

অভিযোগ রয়েছে, একদম নিরবেই স্বল্প সময়ের মধ্যে ইয়াবা কারবারের মাধ্যমে বিপুল অংকের মালিক হওয়া কারবারিদের মধ্যে শুকুর ড্রাইভার একজন। মরিচ্যা বাজারের পশ্চিমে রামুর গোয়ালিয়া পালং গ্রামের ইয়াবা ডন মোস্তাক ও তার ভাই মনসুর সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য শুকুর ড্রাইভার। চোখের সামনেই কয়েকটি ট্রাকের মালিক হবার পরই এখন রহস্য বের হয়ে পড়েছে- মরিচ্যার ইয়াবা সিন্ডিকেটের রহস্য।

সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় শেরে বাংলা নগর থানার আওতায় হাসপাতালে অপারেশন করার পর পেট থেকে দেড় হাজার ইয়াবা বের করা মৃত ইয়াবা বহনকারী নারীটিও মরিচ্যা বাজার এলাকার বাসিন্দা এবং বড়ুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত।

ইয়াবাবহনকারী মৃত এই নারী স্থানীয়ভাবে সিতিরাণী প্রকাশ পাচানী বড়ুয়া (৩৫) নামে পরিচিত। তার স্বামীর নাম গোরাধন বড়ুয়া। মরিচ্যা গরু বাজার সংলগ্ন বাসিন্দা হচ্ছে এই গোরাধন।

এই নারীকে ইয়াবা পেটে দিয়ে পাচার করে আসছিল মরিচ্যা বাজারের স্থানীয় একটি বড় সিন্ডিকেট। আবদুস শুকুর একজন ট্রাক ড্রাইভার। তিনি এখন ২টি ট্রাকের মালিক। বেলাল নামের তার একজন ভাগিনাসহ নিজের একটি ট্রাক লিংক রোডে ৫০ হাজার ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়ে কারাগারে ছিলেন।  
অভিযোগ রয়েছে, নিজস্ব ট্রাকে করেই ইয়াবার বড় চালান পাচার করে আসছিলেন আটক হওয়া শুকুর ড্রাইভার। গত দুই সপ্তাহ আগে মরিচ্যা বাজারের দক্ষিণ স্টেশনে চয়েস টাইলস ও সেনেটারি নামের একটি বড় টাইলসের দোকানও খুলেছেন।

মরিচ্যা মুক্তিযোদ্ধা বালিকা স্কুল সংলগ্ন শামসুন্নাহার বেগম (৪০) বাবা-আকতার আহমদ ও স্বামী-রুহুল আমিন নামের একজন ইয়াবা রাণী মানুষের পেটে করে মরিচ্যা থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচার করে আসছে। শামসুন্নাহারের স্বামীর নাম রুহুল আমিন। বর্তমানে রুহুল আমিন বরিশালের কারাগারে রয়েছেন। ইয়াবার একটি বড় চালান নিয়ে সেও ধরা পড়ে।

ট্রাক ড্রাইভার আবদুস শুকুর ও শামসুন্নাহার একই সিন্ডিকেটের কারবারি। শুকুর শামসুন্নাহারকে দিয়ে নারী পাচারকারির মাধ্যমে এবং নিজের ট্রাকে করে চালান পাচার করে। পেটে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় নিহত বড়ুয়ার নারীটি ছিল শামসুন্নাহারের বহনকারী। শুকুর ড্রাইভারের রয়েছে ইয়াবার আরো বহু গোপন কানেকশন। শুকুর ড্রাইভার পুলিশের হাতে আটকের পর মরিচ্যার ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়েছে। অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

আরও খবর