রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্বস্তি অস্থিরতা, আতংক

বিশেষ প্রতিবেদক – মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্বস্তি, অস্থিরতা ও আতংক বিরাজমান। বিদ্রোহী সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে নীরব চাঁদাবাজি ক্যাম্পের আধিপাত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অপহরণ, খুন, গুম সংঘর্ষ। ইয়াবা লেনদেন নিয়ে ছুরিকাঘাত প্রভৃতি সহিংশ ও লোমহর্ষক ঘটনা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে বিরাজ করছে অজানা আতংক।

লম্বাশিয়া মধুরছড়া ও হাকিমপাড়া এলাকায় বসবাসরত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপ করা হলে তারা এসব কথা বলেন। তারা আরো জানান, রোহিঙ্গারা বর্তমানে স্থানীয়দের উপর খবরদারি ও নেতৃত্ব দেওয়ার মনোভাব নিয়ে যেকোন কার্যক্রমে অনধিকার চর্চা করছে। এনিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা।

প্রত্যেক্ষদর্শী হাকিমপাড়া ক্যাম্প সংলগ্ন গ্রামে বসবাসকারী সমাজ সর্দার মকবুল আলী (৪৫) জানায়, রাতের বেলায় ক্যাম্পের পরিস্থিতি ভয়ানক আকার ধারণ করে। রোহিঙ্গা মাদকাসক্তদের বেপরোয়া আচরণের কারণে স্থানীয়রা ঘরের বের হতে পারেনা। তারা সংখ্যায় বেশি হওয়ার কারণে যে কোন ঘটনাকে ইস্যু করে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রতিপক্ষ স্থানীয়দের উপর হামলা, মারধর করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিচ্ছে।

এঘটনার ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম জানান, স্থানীয় রোহিঙ্গারা তার আম বাগান থেকে কাঁচা আম পেরে নিয়ে যাচ্ছিল। এতে বাঁধা দিলে রাতের বেলায় রোহিঙ্গারা ওই বাগানে হানা দিয়ে বাগানের সমস্ত আমগুলো লুটপাট করে নিয়ে যায়। এসব কারণে স্থানীয়রা এখন রোহিঙ্গাদের হাতে জীম্মি হয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে বেশ কয়েকজন সচেতন রোহিঙ্গা যুবক জানালেন, বিভিন্ন বিদ্রোহী সংঘটনের নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু সংখ্যক অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক ঘরে ঘরে মাসিক চাঁদাবাজি করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। তাদের এ অনৈতিক কাজে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৭/৮ জন রোহিঙ্গা মাঝিকে অপহরণ করে মেরে ফেলা হয়েছে। এ ভয়ে ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদেরকে অস্বস্থি, অস্থিরতা ও আতংক নিয়ে দিনযাপন করতে হচ্ছে। ওই যুবকেরা আরো জানায়, ক্যাম্পে মাদকদ্রব্য বেচাঁ কেনা ও মাদকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে রোহিঙ্গারাই রোহিঙ্গাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁিড়য়েছে।

তাজনিমার খোলা ক্যাম্পে ক্যাম্প মাঝি আনোয়ার জানায়, রোহিঙ্গারা ত্রাণের চাউল নিয়ে ঘরে যেতে পারছেনা । স্থানীয় বেশ কয়েকটি চাল ক্রয় সিন্ডিকেট চালের বস্তা কেড়ে নিয়ে অপেক্ষাকৃত বাজার মূল্যের চাইতে কম টাকা ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করলেও তারা স্থানীয়দের সাথে প্রকাশ্য হামলা মামলায় আসছেনা।

ওই মাঝি জানায়, ত্রাণের চাল নিয়ে এ পর্যন্ত ক্যাম্পে ৭/৮ বার মারামারি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটেছে। বালুখালী পানবাজার এলাকায় অনুরূপ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে পুলিশ কিরিজ সহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করার পর ওই সিন্ডিকেট স্থান পরিবর্তন করেছে বলে জানিয়েছেন তাজনিমার খোলা ক্যাম্পের ওই মাঝি।

কুতুপালং রেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ জানান, অস্ত্রধারী ডাকাত সন্ত্রাসী ও বিভিন্ন বিদ্রোহী সংগঠনের নেতা নামধারী উৎশৃঙ্খল রোহিঙ্গারা এক জায়গায় সমবেত হওয়ার কারণে কতৃত্বের দাপট দেখানোর জন্য এসব সন্ত্রাসীরা রাতের বেলায় প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়া চালিয়ে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের জানান, বিকাল ৫টার পর থেকে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে চলাফেরার উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। এমনকি রাতের বেলায় ক্যাম্পের ভিতরেও অহেতুক চলাফেরা করলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ওই সব রোহিঙ্গাদের ধৃত করে থানায় সোর্পদ্দ করবে। পরে পুলিশ ওইসব রোহিঙ্গাদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করার নিয়ম রয়েছে। তিনি বলেন, এছাড়াও রোহিঙ্গাদের যাত্রীবাহি গাড়িতে তল্লাসী চালিয়ে আটক করা হচ্ছে। আটককৃত রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাদের মামলা রয়েছে তাদেরকে জেল হাজতে অন্যদের ক্যাম্প ইনচার্জের নিকট হস্তান্তর করা হচ্ছে।

আরও খবর