টেকনাফে দাম্পত্য কলহের জেরে অভিমানী স্বামীর আত্মহত্যা!

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,টেকনাফ

টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়নে দাম্পত্য কলহের জেরধরে স্ত্রীর সাথে অভিমান করে এক রাজমিস্ত্রী গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর পারিবারিক অভিযোগ না থাকায় দাফনের প্রস্তুতি চলছে।

১৩ এপ্রিল সকালে উপজেলার হ্নীলা পশ্চিম সিকদার পাড়ার প্রবাসী নুরুল ইসলামের পুত্র আব্দুল আমিন মিস্ত্রী (২৮) এর ব্যবহৃত মুঠোফোনে অনবরত কল আসে। দীর্ঘক্ষণ রিং পড়ার পর রিসিভ না হওয়ায় পাশের বাড়িতে থাকা তার ভাই আব্দুর রহমান প্রকাশ সৈকত গিয়ে ডাকাডাকি করে। কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে ঐ ঘরের জানালা ভেঙ্গে ঘরে ডুকে দেখে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলন্ত মৃতদেহ।

সৈকতের কান্নার শব্দে মা-ভাই, বোন ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আব্দুল আমিনের ঝুলন্ত দেহ নামিয়ে ফেলে।

বিষয়টি তাৎক্ষণিক স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করা হলে টেকনাফ মডেল থানার এসআই নুরুল ইসলাম সকাল ১১টায় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পারিবারিকভাবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না করায় প্রশাসনিকভাবে যাবতীয় কার্য্যক্রম সম্পন্ন করে দাফনের প্রস্তুতি চলছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়,বিগত ৪ বছর পূর্বে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে পালিয়ে বিয়ে করেন পশ্চিম সিকদার পাড়ার প্রবাসী নুরুল ইসলামের পুত্র আব্দুল আমিন (২৮) এবং ঊলুচামরীর নুর মোহাম্মদ প্রকাশ নুরাইয়ার মেয়ে নুর আয়েশা (২২)এর মধ্যে বিয়ে। ছেলে পক্ষ প্রথমে এই বিয়ে মেনে নিতে না চাইলেও পরে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মেনে নেয়। তাদের সংসারে মরিয়ম (৩) একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান আসে। কিছুদিন পরই নুর আয়েশা স্বামী আমিনের উপর কর্তৃত্ব খাটিয়ে মা-বোন, ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়ে বাড়ির পাশে আলাদা ঘর করে বসবাস করে আসছে। তাদের মধ্যে প্রায় সময় সাংসারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগে থাকতো। স্থানীয় মহিলা মেম্বার তাদের একাধিকবার সালিশ করে। সম্প্রতি স্ত্রী নুর আয়েশা অসুস্থতার কারণে ডাক্তারী পরামর্শে স্বামীর সাথে রাতযাপন বন্ধ করে দেন। স্বামী কোন কারণে স্ত্রীর নিকট গেলে স্ত্রী ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। যা নিয়ে প্রতিবেশীদের মধ্যে হাস্যরস কথা-বার্তা আবার ক্ষোভও দেখা গেছে। এসব অজুহাতে স্ত্রী নুর আয়েশা মেয়েসহ গত ১মাস ধরে বাপের বাড়িতে অবস্থান করছে। স্বামী আব্দুল আমিন সময়-অসময়ে শ্বাশুড় বাড়িতে যায় এবং স্ত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ মুর্হুত কাটাতে চায়। কিন্তু স্ত্রী ও শ্বাশুড় পক্ষের বেপরোয়া আচরণে এর আগেও বেশ কয়েক বার এই রাজমিস্ত্রী আত্মহননের চেষ্টা চালিয়েছে বলর অভিযোগ তুলেছে নিহতের স্বজনেরা। এরপর তাকে পাহারায় রেখে কোন প্রকারে রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়।

অবশেষে গত ১২ এপ্রিল দুপুরে শ্বাশুড় বাড়ি হতে মেয়ে মরিয়মকে নিয়ে বাজারে এসে কেনা কাটা করে রাতে শ্বাশুড় বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে গেলেই স্ত্রীর সাথে কথা কাটাকাটি ও মারামারীর উপক্রম হয়। শেষ পর্যন্ত চরম অভিমানে বাড়িতে আসে। সকালে মুঠোফোন রিসিভ না করায় ছোট ভাই ডাকতে গিয়েই ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখতে পেয়ে উদ্ধার করেন।
স্থানীয় মেম্বার জামাল উদ্দিন জানান, এদিকে স্থানীয় সুত্রে পারিবারিক কলহে এই রাজমিস্ত্রি আত্মহত্যার কথা প্রকাশ হলেও পারিবারিক অভিযোগ না থাকায় দাফনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করে এসআই নুরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। পারিবারিকভাবে কোন অভিযোগ না থাকায় প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনায় মৃতদেহ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আরও খবর