বিশেষ প্রতিবেদক :

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ছোট-বড় ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে। এসব ক্যাম্পে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নতুন-পুরাতন মিলে প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। কিন্তু উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের চৌখালীতে নতুন করে আরও একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছে আরআরআরসি (শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন)। এনজিও সংস্থা ব্র্যাক ইতিমধ্যে সেখানে বুলডোজার দিয়ে বনভূমির পাহাড় কেটে মাঠ তৈরির কাজ করছে। এতে চৌখালী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত স্থানীয় শতাধিক পরিবারের মাঝে দেখা দিয়েছে উচ্ছেদ আতঙ্ক। এ নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। হতদরিদ্র শতাধিক পরিবার বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু তাতেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
জানা গেছে, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের আওতাধীন থাইংখালী বন বিটের মোছারখোলা টহল ফাঁড়ির চৌখালী মাঠে শতাধিক একর বনভূমিতে নতুন করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আরআরআরসিসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করে ক্যাম্প নির্র্মাণের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি উঁচু পাহাড় কেটে সমতল করা হয়েছে, এনজিও সংস্থা ব্র্যাকের পক্ষ থেকে গভীর নলকূপ, ল্যাট্রিন বসানো হয়েছে। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে শেড নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
চৌখালী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবু মুছা, সেলিম মিয়া, রিয়াদ, আবদুল হান্নান, মো. হারুন, হেলাল উদ্দিন ও একরাম জানান, তারা পূর্বপুরুষ থেকে এই এলাকায় বসবাস করে আসছেন। এ জমিতে তাদের নামে বনবিভাগের ২০১০-১১ সালে সৃজিত আগর বাগানের দলিল রয়েছে। প্রভাবশালীরা তাদের উচ্ছেদ করে নিজেদের ফায়দা লুটার জন্য সংশ্লিষ্টদের ক্যাম্প স্থাপনে উৎসাহিত করছে। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে চৌখালীতে বসবাসের পাশাপাশি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন তারা। স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল হক বলেন, স্থানীয়দের উচ্ছেদ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপনের জন্য কার্যক্রম শুরু করায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। কারণ এতে সেখানে বসবাসরত শতাধিক পরিবারের উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে; ফলে তাদের পথে বসতে হবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জারি করা পত্রে উল্লেখ আছে নতুন করে রোহিঙ্গাদের জন্য কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এ নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে কয়েক দিন ধরে পালংখালী ইউনিয়নের চৌখালী মাঠ নামক স্থানে ৪-৫টি বুলডোজার দিয়ে নির্বিচারে স্থানীয় জনসাধারণের সামাজিক অংশীদারিত্ব সবুজ বনায়ন নিধন করে পাহাড় কাটা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পালংখালী ইউনিয়নের ৪৪ হাজার জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার চাপ কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না। পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদটিও রোহিঙ্গা সেবা দিতে আসা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দখলে থাকায় অত্র ইউনিয়নের জনসাধারণ সম্পূর্ণভাবে ইউনিয়ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এরপরও কেন এনজিও সংস্থাগুলো আবার নতুন করে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা নিয়ে আসার যড়যন্ত্র করছে? এটি একটি আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্র বলে মনে করছেন পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ পরিবেশবাদীদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এ ব্যাপারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সংকুলান না হওয়ায় চৌখালীতে ক্যাম্প স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তবে স্থানীয়দের ব্যাপারে আমাদের সুদৃষ্টি রয়েছে- তারা যাতে কোনো ক্ষতির সম্মুখীন না হন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-