ডেস্ক রিপোর্ট – কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার মধ্যেই মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাশূন্য করার কাজ করছে দেশটি। এর অংশ হিসেবে রাখাইনে হেলিকপ্টার দিয়ে হামলা চালিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে ফিরে যেতে না চায় সেই কৌশলের অংশ হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, মিয়ানমারের এমন অভিযানের কারণে বাংলাদেশ সীমান্তে আবারও রোহিঙ্গাদের ঢল নামতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এখনই জাতিগত নিধনের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার চাওয়া উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, যখনই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি সামনে আসে, তখনই রাখাইনে অবশিষ্ট থাকা রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী নির্যাতন চালায়।
এদিকে মিয়ানমারে উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে গত কয়েক সপ্তাহে জাতিগত আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে সেনাবাহিনীর লড়াই তীব্র হয়ে ওঠায় ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই তথ্য দিয়েছে। ওই এলাকায় সেনাবাহিনী নির্বিচারে বেসামরিক জনগণের উপরও হামলা চালাচ্ছে বলে জাতিসংঘ মনে করছে। পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র যোদ্ধারাও সহিংসতা ঘটাচ্ছে। জাতিসংঘ এসব সহিংসতার নিন্দা করেছে।
জাতিসংঘ জানায় যে তাদের কাছে বেসামরিক লোকজনকে হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া, নির্বিচানে গ্রেফতার, অপহরণ ও অন্যান্য ধারনের নিপীড়ন চালানোর বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট রয়েছে।
গত বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র রাভিনা সামদাসানি বলেন, মাঠে গরু চড়ানো ও ধান কাটার কাজে নিয়োজিত থাকা বেসামরিক লোকজনের উপর দুটি সামরিক হেলিকপ্টার গুলি বর্ষণ করে। এতে অন্তত সাতজন নিহত ও ১৮ জন আহত হয়ছে।সামদাসানি বলেন,হামলার ঘটনাটি ঘটেছে বুথিডং শহরে এক রোহিঙ্গা মুসলিম পরিবারের বাড়িতে হামলায় হতাহতদের সবাই রোহিঙ্গা মুসলমান। তবে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এই হামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
কূটনীতিকরা বলছেন, ২০১৭ সালের আগস্টেও বুথিডং শহরেই সেনাবাহিনী নির্যাতন চালায়। তাদের আশঙ্কা, নতুন করে হেলিকপ্টার হামলার পর আবারও রোহিঙ্গাদের ঢল নামবে বাংলাদেশ সীমান্তে।
তারা বলেছেন, মার্কিন কংগ্রেসে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর অবরোধ আনতে বাংলাদেশকে উদ্যোগ নিতে হবে। আর যেন কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে কঠিন চাপে ফেলতে হবে মিয়ানমারকে।
কূটনীতিকরা আরও বলেছেন, মিয়ানমার যা কিছু করে চীনের শক্তি নিয়েই করে। তাই আমাদের চীনের সমর্থন নিতে হবে। আর এই সমর্থনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চীনের প্রধানমন্ত্রী শি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে। তারা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চীনের হাতে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মিয়ানমার সব সময়েই অসহযোগিতা করে আসছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে থাকলেও নিরাপত্তা পরিষদে চীন ও রাশিয়ার ভেটোর কারণে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন বাংলাদেশকে সমর্থন দিচ্ছে না। গত দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে চারটি প্রতিনিধিদল চীন সফর করেছে। কিন্তু চীন এ ব্যাপারে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ ভূমিকা নিয়েছে। সম্প্রতি চীনের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে সফরে এলে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এ বছরই চীন সফর করতে পারেন।
তিনি বলেন, গত বুধবারের ঘটনার পর গতকাল কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় মিয়ানমারের সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করা হচ্ছে। আশা করছি চীন ও রাশিয়া এবার আমাদের সমর্থন দেবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বিদেশ সফরে এবং বাংলাদেশ সফরে আসা বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। তবে আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-