কক্সবাজারে বেড়েছে ইভটিজারদের দৌরাত্ম্য

এম. বেদারুল আলম :

শহরের অন্তত ২০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ইভটিজারদের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে স্কুল কলেজ শুরু এবং ছুটির সময় বখাটেরা ওই পয়েন্টগুলোতে প্রতিদিন ভিড় করছে । বখাটেদের উৎপাতের কারনে অনেক অভিভাবক উৎকন্ঠায় সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন না। এ অপরাধ দমনে প্রশাসন সক্রিয় থাকলেও শহরের কোথাও না কোথাও ঘটছে ইভটিজিং।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহরের অভ্যন্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জাব্বারিয়া একাডেমী, কক্সবাজার মডেল হাই স্কুল, কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ, সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার ইসলামিয়া বালিকা মাদ্রাসার সম্মুখ এলাকা, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, কক্সবাজার সিটি কলেজ এলাকার সামনে, ভোলা বাবুর পেট্রোল পাস্প , গোলদিঘীর পাড় , বায়তুশ শরফ সড়ক, সিকদারমহল এলাকার একটি কোচিং সেন্টারের সামনে, কালুর দোকান ও বার্মিজ মার্কেট এলাকার দু’একটি কোচিং সেন্টারে  সামনে, শহরতলির ইলিয়াছ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার সরকারি কলেজ গেইট, মেডিকেল কলেজ এলাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন ছদ্মবেশে নানা কৌশলে উৎপেতে থাকে বখাটেরা। তারা স্কুল এবং কলেজগামী ছাত্রীদের বিভিন্ন কৌশলে ইভটিজিং করছে। অনেক ছাত্রী লজ্জায় কিংবা বখাটেদের ভয়ে তা কাউকে জানাতেও পারে না।
ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে বৃদ্ধি পেয়েছে  মারামারি, কিশোর অপরাধ। ফলে প্রায় প্রতিদিনই অগোচরে কিশোরী-তরুণীরা লাঞ্চিত হচ্ছে ইভটিজারদের হাতে। অনেক শিক্ষার্থীর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে লেখাপড়া, বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা বাল্য বিয়ে দিচ্ছেন সম্মান বাচাঁতে।
সদরের পিএমখালীর নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সৌদি আরব বলেন, আমার মেয়ে শহরের সরকারি একটি বালিকা বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির মেধাবি ছাত্রী ছিল। স্কুলে আসার পথে ২/৩ জন অন্য একটি বিদ্যালয়ের ছাত্র পথে প্রতিদিন উত্যক্ত করতো । আমি প্রবাসে থাকার কারনে আমার স্ত্রী শংকিত থাকত। গত মাসে তাকে খুটাখালীর একটি আবাসিক স্কুলে ভর্তি করাতে বাধ্য হয়েছি। আমার মত অনেক অভিভাবক মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে টেনশনে রয়েছে।
এদিকে এসব ইভটিজাদের অধিকাংশের বয়স ১৫-২৫ এর মধ্যে । বেশিরভাগই  প্রায় সচেতন, অনেকে নামকরা পরিবারের সন্তান অথচ তাদের প্রতিদিনের কাজ হচ্ছে শহরের স্কুল কিংবা কোচিং সেন্টারগুলোর পাশে দাড়িয়ে পড়তে আসা মেয়েদের উত্যক্ত করা ।
এদিকে ইভটিজিংয়ের বিষয়ে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ফজলুল করিম বলেন, ইদানিং শহরের আনাচে কানাচে ইভটিজারদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে । প্রশাসনকে আরো সক্রিয় করা না গেলে উৎকন্ঠা বাড়বে অভিভাবকদের।
তিনি বলেন, আমার কলেজে ইভটিজিং প্রতিরোধে একটি সক্রিয় কমিটি রয়েছে। যার কারনে কলেজের অভ্যন্তরে কম ইভটিজিংয়ের শিকার হয় ছাত্রীরা। তবে কলেজের বাইরে বিশেষ করে কলেজ ছুটির সময় এবং কলেজে আসার পথে মোটরসাইকেল কিংবা বিভিন্ন  বাহন করে ইভটিজাররা মেয়েদের বেশি ডিস্টার্ব করে। এ সময় পুলিশি নজরদারি বাড়ানো জরুরী। ইভটিজিং প্রতিরোধে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, গত ১ বছরে আমার কাছে ডজনখানেক  ইভটিজিং এর শিকার ছাত্রীর অভিভাবকগণ অভিযোগ করেছেন। প্রশাসনের সহযোগিতায় ২টি অভিযান পরিচালনা করে ৩ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছিলাম। মাঝখানে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় ইভটিজারদের উৎপাত দেখা যাচ্ছে।
এদিকে শহরের পালের দোকানের সামনে, মহিলা কলেজের সামনে, সোহাগ গাড়ির কাউন্টারের সামনে বখাটেরা দাঁড়িয়ে স্কুলগামি ছাত্রীদের উত্যক্ত করে, কেউ কেউ কাগজে লিখে মোবাইল নাম্বার ছুঁড়ে মারার খবর ও এসেছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করার পর তাৎক্ষনিক সহযোগিতাও পেয়েছি । গত বছর ও পুলিশের সহায়তায় এ ধরনের কয়েকটি ঘটনার সমাধান করা হয়েছে যা প্রশাসনের শাস্তির মুখে কিছুটা কমে ও গিয়েছিল।
এদিকে ইভটিজিং এর শিকার বিষয়ে  শহরের নামকরা সরকারি স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, প্রতিদিনই ইভটিজিং এর ঘটনা ঘটছে। তবে অভিভাবকগণ লিখিত অভিযোগ করতে ভয় পান। মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পর গত মাসে অন্তত ৩টি ইভটিজিং সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। শহরের প্রত্যন্ত এবং কয়েকটি চিহ্নিত গলিতে বখাটেরা ইভটিজিং করছে। কিন্তু অভিভাবকগণ ভয়ে না বললে সমাধান করব কিভাবে। তিনি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা ও পাওয়া যায় বলে জানান।
এদিকে ছাত্রীরা ইভটিজিং এর শিকার হলে তারা কোথায় সহযোগিতা চাইবে এবং স্কুল কলেজ পর্যায়ে কোন প্রতিরোধ কমিটি আছে কিনা থাকলে কতটুকু সক্রিয় এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সালেহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ে শৃংখলা কমিটি রয়েছে তবে ইভটিজিং প্রতিরোধ নামের কোন কমিটি নেই। ছাত্রীরা চাইলে প্রধান শিক্ষক অথবা শ্রেণি শিক্ষকের কাছে অভিযোগ জানাতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে দরকার অভিভাবকদের সচেতনতা।
এ ব্যাপারে জানতে যাওয়া হলে কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, ইভটিজারদের বিষয়ে আমরা সব সময় সচেতন। ১০ দিন আগেও কক্সবাজার সরাকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে ৭/৮ জনকে অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছি। আমরা ইয়াবা, ইভটিজিং, বিশেষ করে নারি সুরক্ষায় জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করেছি। আমাদের মোবাইল টিম মাঠে স্কুল কলেজ চলাকালে সক্রিয় রয়েছে। আমরা নির্দেশ দিয়েছি ওই সময়ে স্কুল কলেজের সামনে বখাটে পেলেই যেন ধরে নিয়ে আসে। কাল থেকে আমাদের টিম পুনরায় মাঠে সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকবে। ইভটিজিং  প্রতিরোধে সামাজিক, পারিবারিকভাবে অভিভাবকদের সচেতনতা দরকার বলে মনে করেন শিক্ষক, প্রশাসন ও বিজ্ঞমহল।

আরও খবর