উখিয়ায় বন্যহাতির পথ দিয়ে করছে রোহিঙ্গা পারাপার

শফিক আজাদ, উখিয়া

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়া টিভি রিলে কেন্দ্রে সংলগ্ন এলাকা দিয়ে সন্ধ্যার পর থেকে যানবাহন ও জন চলাচলে আতংক বাধা সৃষ্টি হত। কারণ প্রতি নিয়ত ওই পথ দিয়ে পারাপার করতো বন্য হাতির দল। যার ফলে বনবিভাগ টিভি রিলে কেন্দ্র সংলগ্ন (বর্তমান রোহিঙ্গা ট্রানজিট ক্যাম্প) এলাকায় সাইনবোর্ড দিয়ে জন চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্কতা আরোপ করে দেয়। কিন্তু বর্তমানে রোহিঙ্গা বসতির কারনে এই পথ দিয়ে আর বন্যহাতির পারাপার হয়না চলছে রোহিঙ্গা পারাপার। একই স্থানে এনজিও সংস্থা পক্ষ থেকে পথচারী তথা রোহিঙ্গা চলাচলের সাইনবোড ব্যবহার করা হয়েছে। রোহিঙ্গা বসতির কারনে বন্যহাতির এখন অনেকটা বিলুপ্তির পথে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠ বন কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, উখিয়ার বিস্তীর্ণ সংরক্ষিত পাহাড়ে নির্বিচারে রোহিঙ্গা বসতি স্থাপনের কারণে ধ্বংস হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬হাজারের একর বনভূমি। এতে ওই অঞ্চলে বসবাসরত এশিয়া প্রজাতির বন্যহাতি বিলুপ্তের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এক সময় ওই অঞ্চলে আড়াইশ’র বেশি বন্য হাতির অবস্থান থাকলেও ইতোমধ্যে তারা নিরাপদ বাসস্থান হারিয়ে অন্যত্রে পাড়ি জমিয়েছে।

এক সময় চট্রগামের দোহাজারি ও চুনুতি রেঞ্জয়ে উখিয়ার পাহাড়ি বনভূমিতে ঘুরে বেড়াত এশিয়া প্রজাতির ইন্ডায়া উপপ্রজাতির হাতিগুলো।

আইইউ-এর তথ্যমতে, কক্সবাজারের উত্তর-দক্ষিণ বনভূমিতে ৪৬-৭৮টি বন্য হাতির বিচরণ ছিল। কিন্তু এখন দৃশ্যপট বদলে গেছে। বর্তমানে উজাড় হওয়া বন ও পাহাড়ে গড়ে উঠেছে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বসতি। এতে বিলুপ্তির পথে বসেছে বন্যহাতিসহ বন্যপ্রাণী।

সংশ্লিষ্ঠদের মতে, উখিয়ার বনভূমিতে রোহিঙ্গারা যত্রতত্র আবাসস্থল গড়ে তুলায় হাতির দল চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়ে অন্যত্রে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছে। দিন দিন বন ভূমি উজাড় হওয়ার কারনে বন্যহাতির পাশাপাশি বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৩১ সালে সরকার টেকনাফ এবং উখিয়ার ৩০ হাজার একর পাহাড়ি বনভূমিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করেছিল।

কিন্তু ১৯৭৮ সাল থেকে এখানে গড়ে উঠেছে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের আবাস। আগে এখানের ৮০০ একর বনভূমি রোহিঙ্গাদের কাছে বেহাত হলেও এখন যোগ হয়েছে আরো অন্তত সাড়ে ৬হাজার একর পাহাড়ি বনভূমি।

টিভি রিলে কেন্দ্র এলাকার বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল ইসলাম সোনালী বলেন, আজ থেকে ২ বছর পুর্বে বন্যহাতির ভয়ে এই এলাকায় কোন সাধারণ মানুষ রাতে বাড়ীতে ঘুমাতে পারতনা। সড়কের উপর বন্যহাতির দল দাড়িয়ে থাকার কারনে রাতে যানবাহন চলাচলে সৃষ্টি হত বাধাগ্রস্থ। কিন্তু তা এখন আর চোঁখে পড়েনা। রোহিঙ্গা বসতির কারনে বন্যপ্রাণী সম্পূর্ণ বিলুপ্তির পথে।

উখিয়ার রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, মূলত উখিয়ার কুতুপালং,বালুখালি, পালংখালী শফিউল্লাহকাটা, জামতলী, বাঘঘোনা, টেকনাফের কারাংতলি,উনসিংপ্রাং এলাকা বন্য হাতির মূল বিচরণের ক্ষেত্র ছিল। বর্তমানে সেখানে রোহিঙ্গা বসতি গড়ে উঠার কারনে বন্যহাতির দল আবাসস্থল হারিয়ে অন্যত্রে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছে।

আরও খবর