তালিকা আছে, মূল্য লিখা নেই

উখিয়ায় নিত্য পণ্যের বাজারে অস্থির পরিবেশ, নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের

আবদুল্লাহ আল আজিজ :

আড়াই লক্ষাধিক জনগনের বসবাসযোগ্য এলাকায় অতিরিক্ত ৮ লাখ রোহিঙ্গার ভারে ন্যুয়ে পড়া জনপদ উখিয়া নিত্যপন্যের বাজারে লাগামহীন পণ্যমূল্যের ঘটনা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

বিশেষ করে নিম্ম আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের জীবন মান এখন নাভিশ্ব^াসে উঠলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসন রোহিঙ্গা নিয়ে ব্যাস্ত। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামত পন্যের দাম হাকাচ্ছে। আর অসহায় ক্রেতা সাধারন এক প্রকার জিম্মি হয়ে একান্ত্য প্রয়োজনের তাগিদে চাহিদা পন্য ক্রয় করছে।

স্থানীয় প্রশাসন প্রতিটি দোকানে নিত্য পন্যের মূল্য তালিকা টাঙ্গানোর নির্দেশ দিলেও তা মানা হচ্ছে না। কিছু কিছু দোকানে তালিকা থাকলেও মূল্য লেখা নেই। জানতে চাইলে অসাধু ব্যবসায়ীরা বলেন, চক দিয়ে লিখা হয়েছে তো তাই মুছে গেছে। এই হচ্ছে উখিয়ার হাটবাজারের অসাধু বানিজ্যের নৈরাজ্যকর পরিবেশ।

মঙ্গলবার উখিয়া বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে পন্যমূল্যের দরদাম যাচাই করে দেখা যায়, ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা দরে। অতচ এক সাপ্তাহ আগেও এ ডিম বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা দরে।

হালি প্রতি ৪ টাকা বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে মুদির দোকানী নুরুল ইসলাম জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক  মৌসুমী ব্যবসায়ীরা পাড়া মহল্লায় গিয়ে পোল্টি ফার্ম থেকে চড়া দামে ডিম ক্রয় করে রোহিঙ্গা বাজারে নিয়ে যাচ্ছে। যে কারনে স্থানীয়ভাবে ডিমের দাম বেড়ে গেছে।

তরকারির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ফুল কপি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১০০ টাকা, বাধা কপি ৬০ টাকা। স্থানীয় বেশ কয়েকজন ক্রেতা মাষ্টার শামশুল আলম, হাজী আব্দুল মন্নান অভিযোগ করে জানান, সামুদ্রিক মাছ ধরা কমে যাওয়ায় মাছের বাজারে সামুদ্রিক মাছ নেই বললেও চলে। সাধারণ ক্রেতারা সবজি খেয়ে জীবন ধারন করার জন্য সবজি বাজারের দাম শুনে অনেকেই ফিরে যাচ্ছে। তারা জানান, হাটবাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকার কারনে প্রতিটি সবজির বিপরীতে কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নিচ্ছে।

মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, তেলাপিয়া, ফার্মের বোয়াল, আর ছোট চিংড়ী ছাড়া কোন মাছ নেই। এখানে আড়াইশ গ্রাম ছোট চিংড়ী বিক্রি হচ্ছে দেড়শ টাকা করে।

মাছ বিক্রেতা ফরিদুল আলম জানান, চাহিদা অনুযায়ী সাগরের মাছ না আসা পর্যন্ত এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে। শুটকির বাজারে একই অবস্থা। কীটনাশক ঔষুধ মিশ্রিত শুটকির দাম ও আকাশ চুম্বি। আড়াইশ গ্রামের শুটকি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা দরে।

শুটকিতে ডিডিটি পাউডার মিশিয়ে শুটকি বিক্রির ব্যাপারে জানতে চাইলে, শুটকি বিক্রেতা হারাধন বড়–য়াসহ আরো বেশ কয়েকজন তাদের দোষ চাপাতে বললেন, বিভিন্ন পোকায় আক্রান্ত না হওয়ার কারনে ও মজুদ শুটকি নিরাপদ রাখার জন্য ডিডিটি পাউডার আশে পাশে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। মাংসের বাজারে দেখা হয় রড় সিমেন্ট ব্যবসায়ী তোফাইল আহম্মদের সাথে। সে সাংবাদিক দেখে অভিযোগের সুরে বললেন, রোহিঙ্গা ইস্যু তোলে হাটবাজারের নিত্যপন্যেও ব্যবসায়ীরা অহেতুক পন্যের দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে।

সে জানান, এক কেজি মাংসের দাম সাড়ে ৪শ টাকা প্রশাসন নির্ধারন করলেও কে শোনে কার কথা। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা দরে। তাও আবার হাড় মাংস মিশ্রিত। তিনি বলেন, প্রশাসনের অবস্থা বুঝে বিক্রেতারা তাদের ইচ্ছামত দাম আদায় করছে।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব নিকারুজ্জামান চৌধুরীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, বাজার তদারকির মাধ্যমে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর