ডেস্ক রিপোর্ট – দুর্নীতিবাজ ১২ কর্মকর্তাকে তিনদিনের মধ্যে বদলি
>> সাবেক মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সুপারিশ
>> তদন্ত হয়নি তৎকালীন মহাপরিচালকের একান্ত সচিবের
দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় ফেঁসে যাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) ১২ কর্মকর্তা। একই সঙ্গে ডিপিইর সাবেক মহাপরিচালকের (বর্তমানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব) বিরুদ্ধেও নেয়া হচ্ছে বিভাগীয় ব্যবস্থা।
জানা গেছে, চার বছর আগের এক তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপরই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক বদলির নির্দেশ দেয়া হয়।
গতকাল মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন তাদের ফাইল নোটে স্বাক্ষর করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি ডিপিইর সাবেক মহাপরিচালকের বিরুদ্ধেও ১৫ দিনের মধ্যে সরকারিবিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ১২ কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন ওই সময়ের ডিপিইর সাবেক মহাপরিচালক (বর্তমানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব) আবু হেনা মোস্তফা কামাল, উপ-পরিচালক শেখ মো. রায়হান, উপ-পরিচালক ইফতেখার হোসেন ভূইয়া, কর্মকর্তা মিজাউল ইসলাম, আতাউর রহমান, অনুজ কুমার, সোনিয়া আকবর, সহকারী পরিচালক রাজা মিয়া, শিক্ষা অফিসার মাহফুজা বেগম, শামসুননাহার, মো. মজিবুর রহমান, মাহফুজুর রহমান জুয়েল এবং সহ-শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম।
জানা গেছে, ভুয়া ভ্রমণভাতা গ্রহণ-সংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের শেষে ওই তদন্ত হয়। এতে তৎকালীন মহাপরিচালক ও বর্তমান সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবের বিরুদ্ধে নানাভাবে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি ধরা পড়ে।
চার বছর আগের প্রতিবেদন হলেও এটি কয়েক দিন আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর নজরে আনেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। গত ২ এপ্রিল প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এর মধ্যে ১১ জনকে তিনদিনের মধ্যে ডিপিই থেকে বদলির কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রী সরকারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘শাস্তির বিষয়টি শুনেছি। তবে বুধবার (৩ এপ্রিল) পর্যন্ত নির্দেশনাটি হাতে পায়নি। তবে এ ধরনের ঘটনায় যে বা যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ওই তদন্ত প্রতিবেদনে তৎকালীন ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে বলা হয়, তিনি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ভ্রমণে দু’দফা টিএ/ডিএ উত্তোলন করেন। অথচ তিনি তখন একই যাত্রাপথে একবারই উড়োজাহাজে ভ্রমণ করেন। এ ধরনের অপকর্মে অন্য কর্মকর্তারাও জড়িত।
তদন্ত প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘একই ব্যক্তি একাধিক স্থান থেকে একই তারিখে সম্মানী, টিএ/ডিএ উত্তোলন করেছেন, যা তার প্রাপ্য অর্থের চেয়ে বেশি। আবার বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে সব বিমানবন্দরের জন্য একই পরিমাণে টিএ/ডিএ দাবি করেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। একই সঙ্গে একই পথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক স্থান থেকে টিএ/ডিএ গ্রহণ করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখিত স্থানে না গিয়ে বা অনুষ্ঠান শুরুর আগে টিএ/ডিএ উত্তোলন করেছেন। কোনো প্রকার সময়সূচি উল্লেখ না করে ভ্রমণ আদেশ জারি করেছেন এবং ভ্রমণ আদেশ ছাড়া পরিদর্শন ও ভ্রমণ বিল উত্তোলন করেছেন।
ওই সময়ে ভ্রমণ ও বদলিসহ নানা বিষয়ে অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে ভ্রমণের বিষয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলে সরকারি নির্দেশে ডিপিইর এক উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে তদন্ত হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে অভিযোগ ওঠার পরও তৎকালীন মহাপরিচালকের একান্ত সচিব ফিরোজ কবিরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত হয়নি। তিনি এখনও অধিদফতরের মহাপরিচালকের পিএস হিসেবে কর্মরত। শুধু তা-ই নয়, তদন্তে প্রভাবশালীদের নাম আসায় চার বছর প্রতিবেদন ফাইলটি চাপা ছিল। নতুন কেবিনেট দায়িত্ব নেয়ার পর সেই ফাইল পুনর্জীবিত হয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-