রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপচিকিৎসা!

বিশেষ প্রতিবেদক :

উখিয়ার ১৮টি ক্যাম্পে আশ্রিত প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গাকে কেন্দ্র করে ব্যাঙের ছাতার মতো গজে উঠেছে ৫ হাজারেরও অধিক নামসর্বস্ব ফার্মেসি ও ক্লিনিক। কোনো প্রকার পূর্ব অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ বিহীন চিকিত্সক নামধারী অসাধু রোহিঙ্গা চক্র চিকিত্সার নামে অপচিকিত্সার মাধ্যমে সহজ সরল রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের কাছ থেকে অভিনব কায়দায় হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।

কুতুপালং ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট কমিটির সেক্রেটারি মোহাম্মদ নুর জানান, ১৮টি ক্যাম্পে প্রায় ৫ হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গা চিকিত্সা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।

কুতুপালংয়ের স্থানীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিত্সক ডাক্তার মো. মুজিব জানান, সরকার ও এনজিও সংস্থা পরিচালিত প্রতিটি ক্যাম্পে অত্যাধুনিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থাকলেও রোহিঙ্গারা সেখানে না গিয়ে রোহিঙ্গা চিকিত্সকদের দ্বারস্থ হয়। তাদের এই হিংসাত্মক মনোভাবের কারণে রোগ নিরাময় করতে গিয়ে অনেকেই আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

লম্বাশিয়া ক্যাম্পের স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম, সমাজ সর্দার ইয়াকুব আলীসহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, স্থানীয় কোনো প্রশিক্ষিত চিকিত্সক ক্যাম্পে ফার্মেসি দিয়ে চিকিত্সা করলে রোহিঙ্গারা তা কোনোভাবে মেনে নেয় না। তারা স্থানীয় চিকিত্সকের দ্বারস্থ হওয়া তো দূরের কথা বরং তাকে ক্যাম্প থেকে বিতাড়িত করার জন্য রোহিঙ্গারা উঠে পড়ে লেগে যায়। বালুখালী ক্যাম্পের হোপ ফাউন্ডেশন পরিচালিত হাসপাতালের চিকিত্সক ডা. এজাজের জানান, রোহিঙ্গারা প্রথমে রোহিঙ্গা চিকিত্সকের কাছে গিয়ে অপচিকিত্সার শিকার হয়। পরে রোগ যখন অতিমাত্রায় বেড়ে যায় তখনই ক্যাম্পের বিভিন্ন ক্লিনিক বা এনজিও সংস্থা পরিচালিত হাসপাতালে আশ্রয় নেয়।

একই কথা বললেন কুতুপালং ক্লিনিকের চিকিত্সক অজিত কুমার বড়ুয়া। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা প্রকাশ্যে অপচিকিত্সা চালিয়ে যাওয়ার কারণে তাদের স্বাস্থ্য সেবার অবনতি হচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে ক্যাম্পে প্রায় একশটি ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে। তাই রোহিঙ্গা চিকিত্সকদের প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে চিকিত্সক নামধারী রোহিঙ্গা অপচিকিত্সকদের কারণে স্থানীয় চিকিত্সক পাশাপাশি প্রশাসন তথা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল মান্নান জানান, অশিক্ষায় কুশিক্ষায় বেড়ে উঠা রোহিঙ্গারা স্বাস্থ্যসেবায় সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নামের শিকার হচ্ছে। এসব রোহিঙ্গা চিকিত্সককে আইনের আওতায় আনার জন্য উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ পর্যন্ত একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান শুরুর আগে রোহিঙ্গারা দোকানপাট বন্ধ করে দিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, এবার রোহিঙ্গা চিকিত্সকদের দোকানগুলো সিলগালা করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর