বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জনের দিন আজ

২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। আজ থেকে ৪৮ বছর আগে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বহুলকাঙ্ক্ষিত এই স্বাধীনতা অর্জন করে বাঙালি জাতি। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে ‘বাংলাদেশ’ নামে নতুন রাষ্ট্রের।

এই দিনটি বাঙালি জাতির সংগ্রামমুখর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, যার মধ্য দিয়ে গোটা জাতি নামে দেশমাতৃকাকে হানাদারমুক্ত করার চূড়ান্ত যুদ্ধে। 

১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত যাওয়ার পর দীর্ঘ ১৯০ বছরে ব্রিটিশ শাসন, শোষণ ও নির্যাতনের হাত থেকে ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ মুক্তি পায়। এরপর বাঙালির উপর জেঁকে বসে নতুন জান্তা। ভ্রান্ত দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত থেকে আলাদা হয়ে পাকিস্তান নামের একটি অসম রাষ্ট্রের জন্ম হয়। 

এর মধ্য দিয়ে বাঙালির জীবনে আবারও নেমে আসে শোষণ, অত্যাচার, নির্যাতনের খড়গ। ব্রিটিশ থেকে স্বাধীন হলেও এই ভূ-খণ্ডে বাঙালি আবার পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।

ঔপনিবেশিক পাকিস্তানের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ বাঙালি জাতি শুরু থেকেই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নামে। পাকিস্তানের শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসতে ধাপে ধাপে আন্দোলন গড়ে উঠে। 

ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচনসহ দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতি ১৯৭১-এ এসে উপনীত হয়। 

আর বাঙালির এ আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান। আন্দোলন-সংগ্রামের এক পর্যায়ে স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তিনি। 

ধারাবাহিক আন্দোলনকে স্বাধীনতার দিকে অগ্রসর করে নিয়ে শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, ভূষিত হন বঙ্গবন্ধু উপাধিতে।
 
অপরিসীম সাহস, দৃঢ়চেতা মনোভাব ও আপোষহীন নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গন্ধু পরাধীন বাঙালি জাতিকে সংগ্রামী হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন স্বাধীনতার আখাঙ্ক্ষা। 

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) তার ভাষণ বাঙালির মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলে। যা স্বাধীনতা অর্জনে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে মরণপন সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে বাঙালির মনে। 

৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার চূড়ান্ত নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। আর পাকিস্তানের শাসন গোষ্ঠী আলোচনার নামে প্রহসন চালাতে থাকে।
 
এক পর্যায়ে ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরু করে। ‘অপারেশন সার্চ লাইটে’র নামে শুরু করে নির্বিচারে গণহত্যা। 

এই গণহত্যা শুরু হওয়ার পরপরই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। 

এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’। ওই রাতেই তাৎক্ষণিক বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়।
  
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে সর্বস্তরের মানুষ। শুধু এ দেশের জনগণই নয়, আক্রান্ত জাতি ও সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়ায় এবং বাংলাদেশের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয় প্রতিবেশী দেশ ভারত।

মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র, আশ্রয় ও খাদ্য দিয়ে সহায়তা করে দেশটি। এই সময় আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের মুক্তিযু্দ্ধের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া)। 

এছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুক্তিকামী ও গণতন্ত্রকামী মানুষ।  দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী ও বীরত্বপূর্ণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমহানীর বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি বিজয় লাভ করে। 

আরও খবর