এখনকার পৃথিবী অনেক আনন্দময়, আড়ম্বরপূর্ণ। মানুষের জীবন ও চালচলন জৌলুসপূর্ণ, আরামপ্রিয়। এখন মানুষ সুন্দর বাড়িতে থকে, ভালো খাবার খায়, নরম বিছানায় ঘুমায়। কিন্তু যার উসিলায় আল্লাহতায়ালা এ আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সেই মহামানব রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনযাপন কেমন ছিল তা জানার চেষ্টা করে না। অথচ মুমিন-মুসলমান হিসেবে এ জানাটা বেশি দরকার।
হজরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিবার-পরিজন পরপর দুই বেলা জবের রুটি দ্বারা পরিতৃপ্ত হননি। এ অবস্থায়ই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকাল হয়েছে। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
অর্থাৎ একবেলা খেয়েছেন তো আরেক বেলা না খেয়ে থেকেছেন। এই ছিল বিশ্বনবীর ঘরের অবস্থা।
হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদিন আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গমন করে দেখলাম, তিনি একটি খেজুর পাতার চাটাইয়ের ওপর শায়িত আছেন। চাটাইয়ের ওপর কোনো চাদর ছিলো না। তার পবিত্র দেহে চাটাইয়ের দাগ পড়ে গিয়েছিল। তিনি ঠেস দিয়েছিলেন খেজুরের আঁশ ভর্তি একটি চামড়ার বালিশে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন তিনি যেন আপনার উম্মতকে সচ্ছলতা দান করেন। পারস্য ও রোমের লোকদের সচ্ছলতা প্রদান করা হয়েছে। অথচ তারা কাফের, আল্লাহতায়ালার ইবাদতবিমুখ। তার এ কথা শুনে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র ওমর! তুমি কি এখনও এ ধারণা রাখছ? তারা তো এমন সম্প্রদায়, যাদের পার্থিব জীবনেই নিয়ামত দান করা হয়েছে। অন্য এক বর্ণনাতে রয়েছে, তুমি কি এতে খুশি নও, তারা দুনিয়া লাভ করুক আর আমাদের জন্য থাকুক পরকাল। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
গরিব-মিসকিনকে কাছে টানতে মহানবীর (সা.) নির্দেশ রয়েছে। অসহায়কে ভালোবাসতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পক্ষ থেকে বিশেষ উপদেশ এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ এরূপ লোককে দেখে যাদের ধন-সম্পদ, স্বাস্থ্য-সুস্থতা সব দিক দিয়ে তোমাদের তুলনায় অনেকগুণ বেশি দান করা হয়েছে। তখন সে যেন তার নিজের তুলনায় নিম্নপর্যায়ের লোকদের দিকে লক্ষ্য করে। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
বলা হয়েছে, কেউই পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার বিবেক ও প্রবৃত্তি মহানবী (সা.)-এর আনীত জীবনব্যবস্থার অনুগামী হয়। তাইতো মুমিন হিসেবে আমরা হুজুর (সা.)-এর সুন্নতের তাবেদারির ওপর অটল ও অবিচল থাকি। তিনি যেসব কাজ নিষেধ করেছেন সেসব থেকে পুরোপুরি দূরে থাকি ও মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মৃত্যু পর্যন্ত সার্বক্ষণিক আপসহীন সংগ্রাম ও চেষ্টা চালিয়ে যাই। এসব একজন মুসলিমের দায়িত্বও বটে।
এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে কঠোর চেষ্টা ও সাধনা করবে, আমি তাদের আমার দিদার লাভের যাবতীয় পন্থাগুলো দেখিয়ে দেব। চেষ্টা বান্দার দায়িত্ব সাফল্য আল্লাহর জিম্মায়। সুতরাং একদিকে নফস বা কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনা করা অন্যদিকে ইবাদত-বন্দেগি ও সৎ কাজগুলো বাস্তবায়নে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া প্রত্যেক মুমিন বান্দার প্রতি অত্যাবশ্যক। পবিত্র কোরআন-সুন্নাহর অসংখ্যা স্থানে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, দোজখ অবৈধ কামনা-বাসনা ও অবাঞ্ছিত লোভ-লালসা দ্বারা বেষ্টিত এবং জান্নাত দুঃখ-দৈন্য ও কষ্ট-ক্লেশ কার্যাবলির দ্বারা আবৃত। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
হজরত জুবায়ের বিন নুফাই (রা.) হতে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত, হজরত রাসূলে কারিম (সা.) বলেন, আমার কাছে এই মর্মে অহি আসেনি, আমি সম্পদ সঞ্চয় করব এবং আমি একজন ব্যবসায়ী হবো বরং আমার কাছে এই মর্মেই অহি এসেছে যে, হে রাসূল! আপনি আপনার প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং তার সিজদাকারী হোন, অর্থাৎ ইবাদত করুন। আর আজীবন সবকাজে তার দাসত্ব অবলম্বন করুন। -বায়হাকি
হজরত হাসান (রা.) হতে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত, হজরত রাসূলে কারিম (সা.) বলেন, দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা সমস্ত অন্যায়ের মূল। -রায়হাকি
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-