চলতি মাসের শেষে স্থানীয় নির্বাচন তুরস্কে। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান তার নির্বাচনী প্রচারণায় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে খ্রিস্টান জঙ্গি হামলার ভিডিও ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তিনি এই ভয়ঙ্কর ভিডিও দেখাচ্ছেন। হামলার ভিডিও ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোয় এরদোয়ানের ওপর বেশ চটেছে নিউজিল্যান্ড।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স বলেছেন, এই ভিডিও প্রচারে নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের বিপদ ডেকে আনবে। এছাড়া নিউজিল্যান্ড সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গত ১৫ মার্চ জুমার নামাজের সময় উগ্র-ডানপন্থী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশি। হামলার ঘটনায় আরও প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়। যাদের অনেকেই এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
মসজিদে হামলা চালানোর সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে ছিলেন ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট। ১৭ মিনিট ধরে ওই হামলার লাইভ ভিডিও প্রচারিত হয়। হামলার পর থেকে ইন্টারনেট দুনিয়ায় এই ভিডিও ঘুরতে থাকে। সেই নৃশংস ভিডিওটি নিউজিল্যান্ড এবং ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সরিয়ে নেয়। কিন্তু হাজার হাজার তুর্কি নাগরিক সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছে ভিডিওটি।
গত কয়েকদিন ধরে তুরস্কের বেশ কিছু শহরে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে মসজিদে হামলার অস্পষ্ট ভিডিওটি ব্যবহার করছেন এরদোয়ান। তার কট্টর ইসলাম সমর্থকদের খেপিয়ে তুলতে এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলকে আক্রমণে তিনি এই ভিডিও ব্যবহার করছেন।
গত সোমবার নির্বাচনী প্রচারণার কাজে এই ভিডিও প্রচার করার বিষয়টিতে নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ভিডিওর প্রচার নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের জন্য বিপদ ডেকে আনবে।
সোমবার সাপ্তাহিক মন্ত্রিপরিষদ সভা শেষে পিটার্স সাংবাদিকদের বলেন, নিউজিল্যান্ড সফরে আসা একটি তুর্কি প্রতিনিধি দলের কাছে এরদোয়ানের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার ভিডিও ব্যবহারের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে।
পিটার্স বলেন, এরদোয়ানের এই কাজটি নিউজিল্যান্ড সম্পর্কে ভুল তথ্য দিবে বলে তুর্কি অফিসারদের জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া নিউজ্যিলান্ডের নাগরিক ও অন্য দেশে থাকা এই দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলবে। এই ভিডিও প্রচার সম্পূর্ণ অন্যায়।
তুর্কি অফিসাররা জানান, গত কয়েক বছরে অন্তত দুইবার তুর্কি পরিদর্শন করে হামলাকারী ট্যারেন্ট। হামলার আগে নিজের লেখা ৭৩ পাতার ইশতেহার অনলাইনে প্রকাশ করেন তিনি। এর পুরোটাতেই ইসলামপন্থী জঙ্গি এবং অভিবাসীদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন। অপরদিকে, শ্বেতাঙ্গদের প্রশংসা করেছেন ট্যারেন্ট।
ইশতেহারের একটি অধ্যায়ের শিরোনামে হামলাকারী লেখেন `কিল হাই প্রোফাইল এনিমি’। একইসঙ্গে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, এরদোগান এবং লন্ডনের মেয়র সাদেক খানের নাম উল্লেখ করেন তিনি।
ইশতেহারে ইস্তাম্বুলের ইউরোপীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত তুর্কি নাগরিকদের সতর্ক করেন ব্রেন্টন। তিনি বলেন, `আমরা কন্সটেন্টিপলবাসীদের কাছে আসছি। আমরা শহরের সব মসজিদ ও মিনার ধ্বংস করে দেব।’
নিউজিল্যান্ডের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নিজের টুইটারে এরদোয়ান লেখেন, এটা ক্রমবর্ধমান বর্ণবাদ এবং
ইসলাম বিদ্বেষের সর্বশেষ উদাহরণ। এরপর পরই তিনি এ ঘটনাটি তার প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ডাণ্ডা হিসেবে ব্যবহার করেন।
এক ভাষণের সময় প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কামাল কিলিচডারুগলোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, যারা ইসলামকে ঘৃণা করে, তিনি তাদের পক্ষ নিচ্ছেন। তবে কামাল কিলিচডারুগলোর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সমর্থকরা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের এক মুখপাত্র বলেন, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান আসলে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য এই ভিডিওটি ব্যবহার করছেন।
গত রবিবার শহরের বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী প্রচারণাকালে এক সামাবেশে ওই ভিডিও দেখিয়ে এরদোয়ান বলেন, তুরস্কে কেউ একই কাজ করছে। এরদোয়ান তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কামাল কিলিচডারুগলোর দেয়া এক বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন, আমাদের দেশে সন্ত্রাস কেন? এ ব্যাপারে বসে ভাবতে হবে। এ সময় কামালের প্রতি নিন্দা জানান এরদোয়ান।
সূত্র : দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-