ডেস্ক রিপোর্ট – কক্সবাজারে তালিকাভুক্ত ১০২ মাদক কারবারি আত্মসমর্পণের পরও ইয়াবার চালান বন্ধ হয়নি। এখন মিয়ানমারের মাদক কারবারিরা সরাসরি ইয়াবার চালান পৌঁছে দিচ্ছে গন্তব্যে। তারা বিভিন্ন খুচরা কারবারিদের কাছে নগদ টাকায় এ সব ইয়াবা চালান বিক্রি করছে।
এ তথ্য জানিয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার মনিঘোনা গ্রামের আশরাফ আলীর পুত্র করম আলী। সম্প্রতি রাজধানীতে প্রায় ৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের টিমের হাতে গ্রেফতার হয় করম আলী। একই সঙ্গে গ্রেফতার হয় এক নারীসহ আরো ৪ জন।
তারা হলেন- মোসাম্মত্ তাসনোভা তানজাম, মো: আলিম খান, মো: আমিনুর রহমান ও মজিবর রহমান। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ঢাকা মেট্রে অঞ্চল (উত্তর) অফিসে জিজ্ঞাসাবাদকালে গ্রেফতারকৃতরা বর্ণনা করেন তার ইয়াবার ব্যবসার নানা কাহিনী। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় তিনটি মামলা হয়েছে।
টেকনাফের করম আলী জানান, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি এক সময় বড় বড় ইয়াবার কারবারিদের চালান নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিতেন। আর ইয়াবার পরিমাণ অনুয়ায়ী নির্ধারিত হারে টাকা পেতেন।
তবে গত এক বছরে টেকনাফে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায় শতাধিক ইয়াবার কারবারি নিহত হয়। মাদকের বিরুদ্ধে এই অভিযান শুরুর দিকে অনেকেই ইয়াবা ব্যবসা ছেড়ে আত্মগোপন করেছিল। সে নিজেও এলাকা ছেড়ে দিয়েছিল; কিন্তু আর্থিক সংকটে পড়ে যাওয়ায় আবার ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে; কিন্তু ব্যাগে বা অন্য কোনো কৌশলে (কিছুর মধ্যে ভরে) ইয়াবা বহন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অন্যদের দেখাদেখি সেও পেটের মধ্যে (পাকস্থলি) ইয়াবার চালান নিয়ে ঢাকায় আসা যাওয়া শুরু করে।
গত কয়েক মাসে সে বেশ করেকটি ইয়াবার চালান ঢাকায় নিয়ে এসেছে। বর্তমানে টেকনাফের ইয়াবার ব্যবসা নিয়ে করম আলী জানায়, টেকনাফের তালিকাভুক্ত বা চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়িরা এখন সরাসরি ইয়াবা ব্যবসা থেকে অনেকটা দূরে রয়েছে। এখন যারা ইয়াবা ব্যবসা করে থাকে তারা মূলত ভাসমান ব্যবসায়ী। প্রতিমাসে এক বা দুইবার ইয়াবার চালান ঢাকায় পৌঁছানোর কাজে জড়িত।
ইয়াবার চালান কিভাবে আসছে এমন প্রশ্নের জবাবে করম আলী জানান, মিয়ানমার থেকে মিয়ানমারের নাগরিকরাই সরাসরি ইয়াবার চালান নিয়ে আসে। তাদের কাছ থেকেই তার মতো অনেকই ইয়াবার চালান গ্রহণ করে। এ জন্য পরিশোধ করতে হয় নগদ টাকা। প্রতি চালানের ইয়াবার সংখ্যা সম্পর্কে সে জানায়, সর্বাধিক ৫ থেকে ৬ হাজার। প্রতি পিস ইয়াবার ক্রয় মূল গড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর ঢাকায় আনার পর বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। তবে পেটে করে ইয়াবার চালান আনলে তার মূল্য কম পাওয়া যায়। টেকনাফ থেকে ঢাকায় ইয়াবার চালান আসার কৌশল সম্পর্কে করম আলী জানান, ঢাকায় আসা ইয়াবার চালানের সিংহভাই আসে পেটের মধ্যে করে।
ঢাকায় পৌঁছাবার পর নির্ধারিত বাসাবাড়িতে তারা পেট থেকে এসব ইয়াবার চালান বের করে ধোঁয়া মোছা করে পলিথিনের প্যাকেটে ভরে।
অভিযান পরিচালনাকারী মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মেট্রো টিমের (উত্তর) সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, করম আলীকে গ্রেফতার করা হয় রাজধানীর ঝিগাতলার তাসনোভা তানজামের বাসা থেকে। উচ্চ শিক্ষিত তাসনোভা জানিয়েছে, ছাত্রাবস্থায় সে ইয়াবায় আসক্ত হয়। পড়াশুনা শেষ হওয়ার পর গত এক বছর ধরে ইয়াবার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। টেকনাফ থেকে করম আলীর মতো বেশ কয়েকজন সরাসরি তার বাসায় ইয়াবা পৌঁছে দেয়। নগদ টাকায় তাসনোভা এই ইয়াবা কেনার পর গ্রেফতারকৃত আলিম খান, আমিনুর রহমান ও মজিবর রহমানের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করতো। মাদক অধিদফতরের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, রাজধানীতে আবারও ইয়াবা সরবরাহ বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, চাহিদা রয়েছে বলেই মাদক ব্যবসায়ীরা ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ইয়াবার চালান টেকনাফ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসছে। তিনি আরো বলেন, যাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের অনেকেই বিত্তবান। তাদের রয়েছে একটা সামাজিক অবস্থান। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, রাজধানীর জিগাতলা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন একজন নামিদামি ব্যবসায়ী। তার স্ত্রী একজন আইনজীবী, মেয়ে একটি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-