ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিলাসী জীবন থেকে অন্ধকার কারাগারে

আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম

ফাইল ছবি

নিষিদ্ধ ইয়াবা কারবার করে কোটিপতি বনে গেছে তারা। জীবনের বিষ ইয়াবার টাকায় বানিয়েছে আলিশান দালানকোঠা। তাদের অপরাধের পাল্লা এতটাই ভারী হয়ে গেছে যে, অনন্যোপায় হয়ে এই কারবারিদের কেউ কেউ স্বেচ্ছায়, কেউবা পুলিশ-র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে এখন বন্দি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। অবৈধ উপায়ে হাতানো কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার মালিক ইয়াবা গডফাদাররা নিসঃঙ্গ জীবন কাটাচ্ছে কারাগারের চার দেয়ালে। সাধারণ বন্দিদের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছে সমাজের এসব কীটদের। তাদের মধ্যে কাউকে রাখা হয়েছে কারাসেলে, কেউ বন্দি বিশেষ ওয়ার্ডে। তাদের ওপর ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করছেন কারা গোয়েন্দারা। চট্টগ্রাম কারাগারে এখন শীর্ষ আট ইয়াবা গডফাদার বন্দি রয়েছে। এদের মধ্যে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার রেজওয়ান ওরফে রেদোয়ান ওরফে জুবায়েরও রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নাশিদ আহমেদ বলেন, কারাবন্দি ইয়াবা মামলার কুখ্যাত আসামিরা যাতে সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে মিশতে না পারে, সে জন্য তাদের আলাদাভাবে বন্দি রাখা হয়েছে। বাইরে তারা যে জঘন্য অপরাধ করেছে, সেগুলো মাথায় রেখেই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এক শীর্ষ কারা কর্মকর্তা জানান,  ইয়াবা গডফাদাররা যাতে কারাগারেও মাদকের সিন্ডিকেট তৈরি করতে না পারে, সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তাদের সেল ও বিশেষ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তাদের সঙ্গে সাধারণ বন্দিদের সাক্ষাৎ ও ভেতরে চলাফেরায়ও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কারাবিধি অনুযায়ী, বন্দি ইয়াবা গডফাদাররা তাদের স্বজনের সঙ্গে ১৫ দিন পর একবার সাক্ষাতের সুযোগ পেয়ে থাকে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ইয়াবা গডফাদাররা সমাজের শক্র। তারা কারাগারের বাইরে যেমন শুধু টাকার জন্য সমাজকে ধ্বংস করেছে, ভেতরেও টাকার লোভে মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে পারে। তাই কারাগারের ভেতরও তাদের কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা উচিত।

কারাগার ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, দুই লাখ ইয়াবা উদ্ধারের একটি মামলায় ২০১৬ সালে কক্সবাজারের টেকনাফের বাসিন্দা ইয়াবা গডফাদার সোলায়মান ওরফে সোলায়মান মাঝির ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। এরপর দীর্ঘদিন পলাতক থেকে সে ইয়াবা ব্যবসা করে আসছিল। ইয়াবা ব্যবসা করে সে এখন কোটিপতি। তার ব্যাংক হিসাবে দুই বছরে ১৪ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য রয়েছে পুলিশের হাতে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২ মে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকা থেকে ১৩ লাখ ইয়াবা উদ্ধারের মামলায়ও উঠে আসে তার নাম। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা মারা যাচ্ছে দেখে ২০১৮ সালের ২৪ মে চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে ঢুকে এখন নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছে সে। সোলায়মানের মতো ইয়াবা ব্যবসা করে চট্টগ্রামের অভিজাত সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় আলিশান বাড়ি বানায় ইয়াবা গডফাদার মোজাহার। আছে একাধিক নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়িও। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করায় দেশ-বিদেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে। ২০ লাখ ইয়াবাসহ ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর এখন কারাগারে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছে এই ঘৃণ্য কোটিপতি। এই দুই আসামি এখন কারাগারের ৩২ নম্বর সেলে বন্দি।

এ ছাড়া ১৩ লাখ ইয়াবাসহ ২০১৮ সালের ৩ মে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর শ্যামলী আবাসিক এলাকার ডেজ এস অ্যাঞ্জেলস নামে বিলাসবহুল বাড়ি থেকে আরেক ইয়াবা গডফাদার আশরাফ আলী ও তার ভাই হাসান গ্রেফতার হয়। সাধারণ মৎস্য শ্রমিক থেকে তারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। ইয়াবার কারবার করে কোটি টাকা দামের জায়গার ওপর বাড়িও করেছে তারা। আছে একাধিক গাড়িও। সেই কোটিপতি দুই ভাই এখন কারাগারের বিশেষ ওয়ার্ডে বন্দি। এ ঘটনায় আরেক শীর্ষ ইয়াবা কারবারি রেজওয়ান ওরফে রেদোয়ান ওরফে জুবায়ের ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে ইমিগ্রেশন পুলিশের সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারও চট্টগ্রাম শহরে রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি। তবে কারাগারে কাটছে তার দিন। ১৫ দিন পর পর একবার ১৫-২০ মিনিটের জন্য স্বজনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয় তাদের।

দুই লাখ ইয়াবা মামলায় ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর নগরীর হালিশহরের নিজের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার হয় কোটিপতি আরেক ইয়াবা গডফাদার মোহাম্মদ সেলিম। একই মামলায় তার বড় ভাই আবদুর রহিমও আসামি। দুই ভাই মিলেমিশে ইয়াবা কারবার করে গ্রামের বাড়ি আনোয়ারা ও চট্টগ্রাম শহরে বাড়ি করেছে। একাধিক আবাসিক এলাকায় তাদের রয়েছে ফ্ল্যাটও। তারা এখন বন্দি রয়েছে কারাগারের চার দেয়ালের ভেতর। একটি কক্ষেই এখন দিন কাটছে তাদের। একই ওয়ার্ডে ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে বন্দি রয়েছে কোটিপতি আরেক ইয়াবা গডফাদার ফারুক। কর্ণফুলীর শিকলবাহা ইউনিয়নের বাইট্টাখালি গ্রামে ইয়াবার টাকায় বিলাসী জীবনযাপন করে আসছিল সে। এক লাখ ১৫ হাজার ইয়াবাসহ ধরা পড়ার পর কারাগারে বন্দি রয়েছে সেও।

আরও খবর