ডেস্ক রিপোর্ট – ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন ভাসানটেক এলাকার ছিল বসবাস। মূলত সেখানেই ছিল তার ইট-বালুর ব্যবসা। বিভিন্ন প্রজেক্টে ইট-বালু সাপ্লাই দিতেন তিনি। আর ভাসানটেক এলাকায় ব্যবসার সুবাদে প্রতারণার ক্ষেত্রে নিজেকে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর পরিচয় দেয়া শুরু করেন। অবসরপ্রাপ্ত মেজর পরিচয়ে বিভিন্ন অফিসে গিয়ে তদবিরও করতেন। কখনও এলাকার ঠিকাদারদের বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভনে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকাও।
আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়াত স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার ভাগ্নের পরিচয়েও প্রতারণা করতেন তিনি। ১৫ বছরের প্রতারণার করে আসা সাজ্জাদ হোসেন (৬২) শেষ-মেষ র্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্য রাতে রাজধানীর উত্তরা ১২ নং সেক্টরের একটি বাসা থেকে তাকে আটক করে র্যাব-৩-এর একটি দল। আটক সাজ্জাদ হোসেনের বাড়ি রংপুর সদরে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় র্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলেন ধরেন র্যাব-৩-এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল এমরানুল হাসান।
তিনি বলেন, জি এ সাজ্জাদ নামে এক ব্যক্তি নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় ও বর্তমানে ডিজিএফআই এ কর্মরত সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে রাজনীতিবিদ, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও ঊর্ধ্বতন সরকারী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রতারণা করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
বিভিন্ন সময় প্রাপ্ত এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-৩ গোয়েন্দা কার্যক্রম চালিয়ে সত্যতার ভিত্তিতে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১২ নম্বর সেক্টর পার্কের সামনে থেকে তাকে আটক করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ওয়াকিটকি সেট এবং মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভুয়া সেনা কর্মকর্তা সাজ্জাদ জানান, ভাসানটেকে থাকতেই তিনি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর পরিচয় দেয়া শুরু করেন। অবসরপ্রাপ্ত মেজর পরিচয় দিয়ে তিনি বিভিন্ন অফিসে গিয়ে বিভিন্ন তদবির করতেন।
ওই এলাকার ঠিকাদারদের বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ হতে মোটা অঙ্কের টাকা কমিশন নেন। গ্রামের বাড়ি রংপুর হওয়ার সুবাদে একপর্যায়ে তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়াত স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার আপন বড় বোনের ছেলে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা শুরু করেন।
গত ৩/৪ বছর যাবৎ বিভিন্ন জায়গায় এই পরিচয় ব্যবহার করায় কিছু লোক তাকে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় হিসেবে বিশ্বাস করাও শুরু করে। বিশ্বাস স্থাপনের জন্য শীর্ষ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ছবি তোলে এবং প্রয়োজনে ছবি বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শন করেন।
বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কিছু ব্যক্তিকে টার্গেট করেন। ডিজিএফআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকতা পরিচয় দিয়ে টার্গেটেড ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরকে সাজ্জাদ হোসেন জানান- সুনির্দিষ্ট গোপনীয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মনোনয়ন বোর্ড তাদেরকে মনোনয়ন নাও দিতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় ও ডিজিএফআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে তিনি ওই সকল ব্যক্তির গোপনীয় প্রতিবেদনসমূহ ইতিবাচক করে দিতে পারবেন।
মনোনয়ন পাইয়ে দেবার ফাঁদে ফেলে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নেন তিনি। গত ১৫ বছর যাবৎ ভুয়া নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-