চট্টগ্রাম – রাউজানের ডাবুয়া বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু জ্ঞানজ্যোতি হত্যা মামলায় চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা দীপক দত্ত ভোলা যাবজ্জীবন কারাভোগ করছে। ৩৬ মামলার আসামি দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার নাছির ওরফে শিবির নাছির ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি। আরেক শিবির ক্যাডার মো. শামীম উদ্দিন খুনের মামলায় যাবজ্জীবন কারাভোগ করছে। বিএনপি নেতা যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্যাডার বিধান বড়ূয়া ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি। এ চার শীর্ষ সন্ত্রাসীর কেউ যুবলীগ, কেউ শিবির ও কেউ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও কারাগারের ভেতর ‘অবৈধ’ সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য সবাই একাট্টা!
৪৪ লাখ টাকাসহ চট্টগ্রাম জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস গ্রেফতারের পর চট্টগ্রাম কারাগারে শুদ্ধি অভিযানে অন্যদের সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় তাদেরও অবৈধ সুযোগ-সুবিধা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে তারা। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ১০ হাজার বন্দিকে দিয়ে বিদ্রোহ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র শুরু করে তারা। কারাগারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দিতে থাকে উস্কানিও। আর এ অপকর্মের নেপথ্যে ছিলেন কারাবন্দি বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। কারা-গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে আসে এ তথ্য-উপাত্ত। কারাগারে এসব অপকর্মের জন্য শাস্তি হিসেবে ভোলা, শামীম, নাছির, বিধান ও গিকা চৌধুরীকে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে বদলি করা হয় কাশিমপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী ও কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে। এর আগেও কারাগারের ভেতর নানা অপকর্মের দায়ে তাদের একাধিকবার শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। তার পরও তাদের জীবনাচরণে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসেনি।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. কামাল হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম কারাগারের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত তিন মাসে সব অনিয়ম বন্ধ করে কারাবিধি অনুযায়ী কারাগারের ভেতর-বাইরে সবকিছু শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসেছি। পৌনে দুই হাজার বন্দি ধারণক্ষমতার কারাগারে বর্তমানে ১০ হাজার বন্দিকে মানসম্মত সেবা দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু হঠাৎ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী কয়েদি কারাগারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা অবৈধ সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে সাধারণ বন্দিদের ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করে। এসব অপকর্মের সত্যতা পাওয়ায় তাদের চট্টগ্রাম থেকে শাস্তি হিসেবে অন্য কারাগারে বদলি করে দেওয়া হয়।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি যুবলীগ নেতা সন্ত্রাসী ভোলা ও শিবির ক্যাডার শামীমকে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম কারাগার থেকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি শিবির ক্যাডার নাছিরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে, বিএনপি ক্যাডার বিধান বড়ূয়াকে নোয়াখালী জেলা কারাগারে এবং তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গিকা চৌধুরীকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে বদলি করা হয়।
এর আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্ণফুলী ভবনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডটি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পরিচালনা করত কয়েদি ভোলা ও শামীম। ওয়ার্ডে তারাই ঠিক করে কে কতটুকু জায়গায় ঘুমাবে, কে কতটুকু খাবার পাবে। গোসল করার জন্য পানি বরাদ্দও করে দেয় তারা। তাদের কথাই ছিল শেষ কথা। দুই ওয়ার্ডে রীতিমতো চলছে এ দুই সন্ত্রাসীর শাসন! কোনো কারা কর্মকর্তাকে পাত্তাই দিত না তারা।
তাদের এতই দাপট ছিল যে, তারা এ ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা পানি সরবরাহ নিশ্চিত করত। টাকার বিনিময়ে তাদের কারাগারে যাওয়া বিত্তবান আসামিদের সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ ছিল। কারাগারে এসব অপকর্মের দায়ে এর আগেও ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে চট্টগ্রামের সাবেক জেলার মাহবুবুর রহমান তাদের একাধিকবার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে বদলি করেন। কয়েদি শিবির ক্যাডার নাছির কারাগারের ৩২ নম্বর সেলে থাকলেও সে থাকা-খাওয়াসহ নানা অবৈধ সুবিধা না পেয়ে ভোলা. শামীমের সঙ্গে একাট্টা হয়ে সাধারণ বন্দিদের উস্কানি দিয়ে কারাগারের ভেতর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা শুরু করে। ওয়ার্ডে থাকা কয়েদি বিএনপি ক্যাডার বিধান বড়ূয়াও একজোট হয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-