উখিয়ায় সক্রিয় শতাধিক ব্যবসায়ী : ইয়াবায় সয়লাব

ফাইল ছবি

ডেস্ক রিপোর্ট – আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৩৫ জনের বেশি নিহত এবং ১০২ জন চোরাকারবারির আত্মসমর্পণের পর টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার চালান আনাকে আর নিরাপদ মনে করছে না মাদক ব্যবসায়ীরা। এ জন্য তারা বেছে নিয়েছে উখিয়ার দুর্গম সীমান্ত এলাকা। ইদানীং রাতের আঁধারে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে উখিয়া দিয়েই আসছে ইয়াবার বড় বড় চালান। এরপর স্থানীয় দরিদ্র যুবকদের মাধ্যমে সেসব চালান পাঠানো হচ্ছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে। তবে পুলিশ বলছে, রোহিঙ্গারা আসার পর ইয়াবার চালান বাড়লেও উখিয়াতে তেমন কোনো গডফাদার নেই। এরপরও যদি কেউ ইয়াবা ব্যবসা করে তাহলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না। অন্যদিকে ইয়াবা বন্ধ করতে হলে বিজিবিকে আরো সতর্ক হতে হবে বলে মত এলাকাবাসীর।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উখিয়া উপজেলার থাইংখালী, রহমতের বিল, পালংখালী, বালুখালী, তমব্রু এলাকা ইয়াবা পাচারের রুট হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডেইলপাড়া ও ডিগলিয়াসহ কমপক্ষে ১০টি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা প্রবেশ করছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ইয়াবায় সয়লাব হয়ে গেছে উখিয়া। বর্তমানে উখিয়ার শতাধিক ব্যবসায়ী সক্রিয় রয়েছে এ ব্যবসায়। একসময় দরিদ্র থাকলেও অল্পদিনেই তাদের অনেকে হয়ে উঠেছেন বিত্তশালী।

উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বেশ কিছু ইয়াবা ব্যবসায়ীর নাম। যাদের অনেকে একাধিক মামলার আসামিও। এরা হলেন- উখিয়ার জালিয়াপালং ডেইলপাড়ার ছবির আহমেদের ছেলে জসিম উদ্দিন, ফরিদ আলমের ছেলে জাফর আলম,মৃত গোড়া মিয়ার ছেলে আবদুর রহিম, শফিউল আলমের ছেলে ফজল কাদের, হাজীরপাড়ার মো. আলীর ছেলে আতাউল্লাহ ও মৃত দরবেশ আলী শিকদারের ছেলে গিয়াস উদ্দিন। খাড়াশিয়া হরিণমারা গ্রামের ফকির আহমেদের ছেলে নুরুল কবির, হিজুলিয়া বাবুল মিয়া ও তার ভাই দেলোয়ার হোসেন ও মোক্তার, মরিচ্যা বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন, ঝাউতলা সড়কের মফিজ ড্রাইভার, হলদিয়া ক্লাসপাড়া এলাকার আমীর হোসেনের ছেলে ফারুক হোসেন, নজীর আহমেদের আহমেদের ছেলে সুমন এবং সোনারপাড়া এলাকার মৃত মকবুল আহমেদের ছেলে জসিম উদ্দিন, জয়নাল আবেদীন । রুহুল্লার ডেবা এলাকার গফুর মিয়ার ছেলে সেলিম উদ্দিন ওরফে আপেল, রত্না তেলী পাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলম, লম্বাগুনা এলাকার মৃত ফকির আহমেদের ছেলে মাহমুদুর করিম খোকা ও মৃত ফকির আহমেদের ছেলে শাহাবুদ্দিন, শিয়াল্লাপাড়ার মৃত হোসেন আলীর ছেলে ফজল কাদের ভুট্টো, মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে আকবর আহমেদ, মৃত সুরত আলমের ছেলে শাহজাহান ও মৃত আবদুল বারীর ছেলে এনামুল হক। রহমতের বিল এলাকার বদরউদ্দোজার ছেলে কলিমুল্লা লাদেন, মৃত ফরিদ আহমেদেরে ছেলে মো. সোহেল,জামাল,কামাল, আবু সিদ্দিকের ছেলে লাল পুতিয়া, গজুগোনা এলাকার নূর আহমেদের ছেলে গোড়া মিয়া, পালংখালী বলবনিয়া এলাকার আহমাদুল্লার ছেলে আলী আহমেদ এবং টিএন্ডটি এলাকার হাজি আবদুল করিমের ছেলে হুমায়ুন।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন চক্রের সঙ্গে ওইসব ইয়াবা ব্যবসায়ীর আঁতাত রয়েছে। এর মধ্যে রেজিস্টার ক্যাম্পের সোলেমান অন্যতম। যারা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ও মিয়ানমারের এমপিটি সিমের মাধ্যমে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে রোহিঙ্গাদের রাতের আঁধারে মিয়ানমার পাঠিয়ে আনা হয় চালান। চালান পৌঁছানোর পর ১ লাখ ইয়াবার জন্য রোহিঙ্গাদের দেয়া হয় ৫ হাজার টাকা। পরে সেই ইয়াবা পাহাড়ি রাস্তা ও উপসড়ক দিয়ে পৌঁছানো হয় কক্সবাজারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গা আসার আগে উখিয়াতে ইয়াবার চালান তেমন আসত না। কিন্তু ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার পর কিছু কিছু চালান আসতে শুরু করে। সম্প্রতি টেকনাফে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তোড়জোড়ের কারণে উখিয়া দিয়ে ইয়াবার চোরাচালান অনেক বেড়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় গরিব ছেলেদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে এ ব্যবসায় যুক্ত করছে কারবারিরা।

র‌্যাব-১৫ এর তথ্যানুসারে, চলতি মাসের ২০ দিনে উখিয়ায় ৬০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। ৫ মামলার বিপরীতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭ জনকে। উখিয়া থানা পুলিশের তথ্যানুসারে, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখ পর্যন্ত ৩১টি মামলা হয়েছে। ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে ৭০ হাজার পিস। বিজিবিও উদ্ধার করেছে বেশ কয়েকটি চালান।

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে অর্ধশতাধিক ইয়াবা ডন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তারাই ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পুরনো সিন্ডিকেটের সঙ্গে আলোচনা করে চালান এনে তুলে দিচ্ছে স্থানীয় সিন্ডিকেটের কাছে। আবার অনেকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে রওনা দিয়ে ভোর হওয়ার আগেই মিয়ানমার থেকে চালান নিয়ে ফিরে আসছে বলে জানান তারা।

উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, এই থানা এলাকায় তালিকাভুক্ত তেমন কোনো গডফাদার নেই। টুকটাক যারা ছিল তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এখনো কেউ ধরাছোঁয়ার বাইরে নেই, সেটা বলব না। অভিযোগ পেলেই আমরা তদন্ত করে দেখি। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ওসি বলেন, ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে নজরদারি সম্ভব না। তবে মাঝেমধ্যেই তারা ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হচ্ছে।

আরও খবর