নিউজ ডেস্ক :
মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসা নির্মূলের জন্য পুলিশ সদস্যরা একের পর এক অভিযান চালালেও পুলিশের কোন কোন সদস্যের বিরুদ্ধে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সময়ে বিপুল পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক সেবনের প্রতি ঝুঁকে পড়ার তথ্য পাওয়া যায় খোদ পুলিশ বাহিনীর কাছ থেকেই। গত এক বছরে প্রায় ৪শ’র বেশি পুলিশ সদস্যকে মাদক সম্পৃক্ততার কারণে শাস্তি দেয়া হয়েছে। বেশ কিছু পুলিশ সদস্যকে মাদকাসক্তিসহ মাদক সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় চাকরিচ্যুতও করা হয়েছে। আবার কাউকে তিরস্কারসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেয়া হয়েছে। কারো কারো বিরুদ্ধে আবার নিয়মিত মামলাও দায়ের করা হয়েছে। অপরদিকে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের পুলিশে চাকরি হবে না। মাদক টেস্ট পরীক্ষায় পজেটিভ হলে তাকে চাকরি থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে। এইভাবে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কারণে গত বছর থেকে পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশব্যাপী মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। অভিযানের সময় মরণ নেশা ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা, আফিমসহ অন্যান্য মাদক জব্দ করেছে। অভিযান চলাকালে ১ লাখের বেশি মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়েছে। ওই সময় বন্দুকযুদ্ধে ১শ’র বেশি মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। আহত আরো অনেককেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধার হয়েছে ৩ কোটির বেশি ইয়াবা। এই সংখ্যা এখন আরো বেশি হবে। একের পর এক পুলিশের মারমুখী অভিযানের মুখে এবং বন্দুকযুদ্ধ ও ধরপাকড় থেকে রক্ষা পেতে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা মাদক ছেড়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে চায়। এজন্য তারা নিজের থেকে পুলিশের কাছে ধরা দিচ্ছে। পুলিশ তাদের তালিকা তৈরি করছে। তালিকা দিন দিন বড় হচ্ছে।
এভাবে মাদক সেবন এবং মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি পুলিশ সদস্য মাদক অপরাধে জড়ালে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪শ’র বেশি পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। আবার সন্দেহভাজন অনেক পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তার উপর গোপন নজরদারি করা হচ্ছে। মাদকাসক্তির প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাদক নিয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
অন্যদিকে পুলিশের লোক নিয়োগের সময়ও মাদকাসক্তির ব্যাপারে কঠোর মনোভাব দেখানো হচ্ছে। মাদকাসক্ত কোন যুবককে পুলিশের চাকরি দেয়া হচ্ছে না। মাদক টেস্টে প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে চাকরি দেয়া হবে না।
মাদককে নিরুৎসাহিত করার জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ করছেন। থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), র্যাবসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট মাদক নির্মূল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এতো অভিযানের পর মাদকের সরবরাহ কিছুটা কমলেও থামছে না মাদক ব্যবসা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে বিভিন্নভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলোতে মাদক বেচাকেনা হলেও এখন গ্রামগঞ্জে মরণ নেশা ইয়াবা বেচাকেনার সিন্ডিকেট ছড়িয়ে পড়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে রোগী সাজিয়ে ভেতরে ইয়াবা আনা হচ্ছে। রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়েও একই অবস্থা বিরাজ করছে। সমুদ্র পথেও মাদক আসছে বিভিন্ন পণ্যের ভেতর লুকিয়ে। অনেকেই মাদক সেবন করে, আবার বাড়তি লাভের জন্য বহন করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাচ্ছে।
এ দিকে মাদক ঠেকাতে সরকার সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন পাসও করেছেন। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। টার্গেট মাদক নির্মূল করা। আর মাদক আইনের মামলা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এরপরও মাদকের চালান আসা থামছে না।
বাংলাদেশ জার্নাল
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-