মাদক নির্মূলে বিশেষ ইউনিট চায় পুলিশ

অনলাইন ডেস্ক : মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ করে মরণনেশা ইয়াবার বিরুদ্ধে পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। চলছে বিশেষ অভিযানও। তার পরও ইয়াবা পাচার ও বিক্রি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। গতকাল মঙ্গলবার পুলিশের পক্ষ থেকে ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদক নির্মূলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ ইউনিট গঠনের প্রস্তাব করা হয়। এ ছাড়া প্রস্তাব করা হয় মাদক মামলার দ্রুত বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনেরও।

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সভা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে একগুচ্ছ নির্দেশনা দেন। তিনি পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কথা শোনেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, বর্তমানে পুলিশে প্রায় সোয়া দুই লাখ জনবল। তার পরও জনবল স্বল্পতার কারণে ঠিকমতো কাজ করা যাচ্ছে না। তিনি পুলিশে আরও অন্তত ৫০ হাজার জনবল বাড়ানোর অনুরোধ করেন। আছাদুজ্জামান মিয়া জনসংখ্যা অনুপাতে পার্শ্ববর্তী দেশে পুলিশের সংখ্যা এবং বাংলাদেশে পুলিশের বর্তমান অনুপাত তুলে ধরেন। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ৫০ হাজার জনবল বৃদ্ধিতে সায় দেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম উগ্রপন্থা চর্চা ঠেকাতে এবং জঙ্গিবাদ থেকে মানুষকে দূরে রাখতে ডিরেডিকালাইজেশন কাজে আরও গুরুত্ব দিতে অনুরোধ করেন। এ কাজে তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং মসজিদের ইমামদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের প্রশংসা করে এ কাজে পুলিশকে স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার সভায় মাদক নির্মূলে স্বতন্ত্র একটি বিশেষ ইউনিট গঠনের প্রস্তাব করেন। তিনি এর যৌক্তিকতাও তুলে ধরেন। পাশাপাশি মাদক মামলা দ্রুত বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনেরও প্রস্তাব করেন। প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। তবে বিচারাঙ্গনে বিচারক সংকটের কথাও তুলে ধরেন। যথাসময়ে সাক্ষী হাজির করতে তাগিদ দেন।

পুলিশের হাইওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের যেসব দেশে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা বেশি, সেসব দেশের বাংলাদেশ মিশনে পুলিশ কর্মকর্তা পদায়নের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেসব দেশের দূতাবাস রয়েছে অধিকাংশ দূতাবাসেই ভিন্ন নামে পুলিশ কর্মকর্তা পদায়ন রয়েছে। আতিকুল ইসলাম বলেন, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোয় পুলিশ কর্মকর্তা পদায়ন করা হলে বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হলে সেসব তথ্য সংগ্রহ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। জঙ্গিবাদ, মানিলন্ডারিং, সাইবার ক্রাইমসহ সংশ্লিষ্ট অন্য অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত আরও দ্রুত এবং সহজে করা যাবে। যেসব বাংলাদেশি বিদেশে নানা অপরাধে জড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ অপরাধ করে কেউ বিদেশে আশ্রয় নিলে তার ব্যাপারেও তদন্ত ও অনুসন্ধান কাজ দ্রুত করা যাবে। আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা পদায়ন করা হলে উল্লিখিত অপরাধের বিকাশের মাত্রাটা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। এ ছাড়া পাসপোর্টসহ পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের তদন্ত দ্রুত করা যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী পুলিশ কর্মকর্তা পদায়ন করা হবে বলে সভায় জানান।

সভায় রাজবাড়ী জেলার পুলিশ সুপার আসমা আক্তার মিলি বলেন, উন্নয়ন বাজেটে পুলিশের বরাদ্দ কম। এতে অনেক উন্নয়ন কাজ গতি হারায়। তিনি আরও বেশি বাজেট বরাদ্দ করার অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রী এতে সায় দেন।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিনও বক্তব্য রাখেন।

আরও খবর