সায়ীদ আলমগীর :
কক্সবাজারে বিনা নোটিশে উচ্ছেদে দেড় শতাধিক পরিবারের সহস্রাধিক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ড ফাতেরঘোনার এসব মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে রাজপথে নেমেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নারী-পুরুষ ও শিশুরা কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এসে অবস্থান ধর্মঘট করে। বুধবার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসন ফাতেরঘোনায় এ উচ্ছেদ অভিযান চালায়। অবস্থান ধর্মঘটকালে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসন ও দুদকের একটি টিম এলাকায় গিয়ে সরকারি খাস জমিতে বসবাসকারী সবাইকে রাতের ভেতর চলে যেতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে আসেন। এ সময় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের দিয়ে দেড় যুগ আগে নেয়া বিদ্যুতের লাইনও কেটে নিয়ে যায় তারা। এত অল্প সময়ে শীতের রাতে শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের নিয়ে অন্য কোথাও যাওয়া অসম্ভব। তাই তারা সরে যাননি।
বুধবার সকালে পুলিশ, র্যাব ও দুদকের টিম নিয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বুলডোজারসহ ফাতেরঘোনায় যান। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা বুলডোজার ও মাথায় লাল ফিতা বাঁধা শতাধিক শ্রমিক দিয়ে পাহাড়-সমতল সব জায়গার কাঁচা ও আধাপাকা ঘর ভাঙা শুরু করে। ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ির কোনো মালামালও বের করতে দেয়া হয়নি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচেই রাত্রিযাপন করেছে ঘর ভেঙে দেয়া শতাধিক পরিবার।
বৃহস্পতিবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত কেউ কেউ ভাঙা ঘরের স্তূপের সামনে অসহায় হয়ে বসে আছেন। আবার কেউ ত্রিপল টানিয়ে মাথায় ছায়া দেয়ার চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে কষ্টে আছেন শতাধিক শিশুর মায়েরা। বাচ্চাদের ঠান্ডা থেকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।
কক্সবাজার পৌরসভার পূর্ব লাইট হাউজ ফাতেরঘোনা সমাজ কমিটির সাবেক সভাপতি সোনামিয়া (৭৪) জানান, ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্কারী জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা হতে পাহাড় ঘেরা এ এলাকায় এসে আবাস গড়ে শত শত মানুষ। তারা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যুগ যুগ ধরে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনসহ রাষ্ট্রীয় নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছে। এখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ঘর ভেঙে দেয়ায় সবাই ভোগান্তিতে পড়েছে।
এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ মকবুল আহমদ বলেন, সরকারি খাস জমি হলেও চিহ্নিত দখলদার থেকে নিজ নিজ ভিটা ক্রয় করতে হয়েছে এখানকার অধিবাসীদের। কিন্তু মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ হাজার একরেরও বেশি পাহাড়ি ভূমি বিরাণ করে আশ্রয় দিয়েছেন। সেখানে আমাদের শেষ সম্বল দিয়ে তৈরি করা মাথা গোঁজার ঠাঁই বিনা নোটিশে ভেঙে দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, প্রতি বর্ষায় পাহাড় ধসে এসব এলাকায় লোকজন মারা যায়। তাই আমরা তাদের বসতি তুলে চলে যেতে মাইকিং করি। কিস্তু তারা যায় না। এখন দুদক এটি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে আর আমরা তাদের সহযোগিতা করছি।
ক্ষতিগ্রস্তরা জলবায়ু-উদ্বাস্তু বলে জানানো হলে জেলা প্রশাসক বলেন, পাহাড় কর্তন ও সেখানে বসবাস কোনোভাবে গ্রাহ্য নয়। যদি এখানকার অধিবাসীরা জলবায়ু-উদ্বাস্তু ও ভূমিহীন হয়ে থাকে তবে তারা আবেদন করলে তাদের জমি ও ঘর দেয়া হবে।
/জাগো নিউজ
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-