ডেস্ক রিপোর্ট – ৩০ জনকে ২১ জানুয়ারি আটক করেছে আসাম পুলিশ এবং পরের দিন ত্রিপুরার বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স আটক করেছে বাকিদের।
আসাম ও ত্রিপুরার সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, আটক রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। এটাই ঘটছে এখন। ভারতের ব্যাপারে ক্রমেই আতঙ্ক বাড়ছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে।
গত মে মাসের পর থেকে প্রায় ২০০০ রোহিঙ্গা ভারত থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। ঢাকার বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, “এই পাল্টা অভিবাসন শুরু হয়েছে গত বছরের মে মাসের শেষ দিকে, কিন্তু এরা আসছে ছোট ছোট গ্রুপ নিয়ে। তাই তাদেরকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না”। একই সময়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো নিয়েও কাজ করছে।
এই ‘পাল্টা অভিবাসনে’ আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। ভারতে খোলামেলা প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গারা – সমাজ আর রাষ্ট্র দু দিক থেকেই। ২০১৭ সালের আগস্টে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু ঘোষণা দেন যে, “আমাদের হিসেবে তারা সবাই অবৈধ অভিবাসী। তাদের এখানে বাস করার কোন ভিত্তি নেই। সমস্ত অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হবে”।
গত ৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনা সত্বেও সাতজন রোহিঙ্গাকে জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠায় ভারত। ৪ জানুয়ারি আরও পাঁচজনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদের কাউকেই মিয়ানমারে নাগরিকত্ব দেয়া হয়নি যদিও দেশটির সরকার সুপ্রিম কোর্টকে আশ্বস্ত করেছে যে, তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়া হবে।
‘কারণটা পরিস্কার’
ঢাকার শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের প্রধান আবুল কালাম জানান, ১ ডিসেম্বর থেকে ভারত থেকে ১৩০০-র বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। “তারা ট্রানজিট ক্যাম্পগুলোতে জায়গা পেয়েছে। কিন্তু ট্রানজিট ক্যাম্পগুলো জনাকীর্ণ হয়ে গেছে, তাই আমরা তাদের কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর আশেপাশে পাঠানোর চিন্তাভাবনা করছি”।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা ইউনুস আরমান বলেন, মে মাসের পর থেকে ৪০০-র বেশি রোহিঙ্গা পরিবার বাংলাদেশে এসেছে যারা প্রায় ১০ বছর ধরে দিল্লী, জয়পুর, জম্মু ও হায়দ্রাবাদে বাস করে আসছিল।
তিনি বলেন, “কারণটা পরিস্কার। প্রাথমিক পর্যায়ে মনে করা হয়েছিল রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠানো হবে, যেখানে তাদের হয়তো হত্যা করা হবে। পরে সত্যিকারের ফেরত পাঠানোর খবর আসতে শুরু হলো, আর ভারতীয় শহরগুলোতে স্থানীয় গ্রুপগুলোর হুমকিও শুরু হলো”।
যে সব রোহিঙ্গা ভারত থেকে পালিয়ে আসছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি তারা খুব একটা ভালো পাবে না। ঢাকা ও মিয়ানমারের মধ্যে শরণার্থী ফেরত পাঠানোর জন্য চুক্তি হয়েছে এবং গত বছর ২০০০ রোহিঙ্গাদের চিহ্নিতও করা হয়েছে। ১৫ নভেম্বর তাদেরকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়েও যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের কেউই মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি হয়নি। ঢাকার সরকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের জোর করে ফেরত পাঠানোটা হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ফলে ভারত বা বাংলাদেশ, উভয় স্থানেই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়ে গেছে রোহিঙ্গাদের জীবন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-