ডেস্ক রিপোর্ট – সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবর – সারাবাংলা
শুধু তাই নয়, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ কোথাও প্রার্থী হলে তাকে বহিষ্কার করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি’র বৈঠকে। কেবল উপজেলা নির্বাচন নয়, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে আর কোনো নির্বাচনেও অংশ নেবে না বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান রোববার (২০ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টায় বলেন, ‘দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাব না। সুতরাং এটা বলাই যায়— আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আমরা যাচ্ছি না।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান রোববার (২০ জানুয়ারি) রাত ৯টায় বলেন, ‘আমি যতদূর জানি, উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থাৎ, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান নেতিবাচক।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ভোটের পর অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির দু’টি বৈঠকে পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ ও আত্মমূল্যায়ন করতে গিয়ে দলটির নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনেই জনমতের প্রতিফলন ঘটবে না। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুর পর গত সাড়ে ৪ বছরে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং সর্বোপরি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীদের যে অবস্থা হয়েছে, আগামী উপজেলা নির্বাচনে তার চেয়ে ভালো কিছু হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভবনা নেই।
বিএনপি নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, রাতারাতি সব কিছু বদলে যাবে— এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। বিএনপিসহ রাজপথের বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আচরণ একই রকম থাকবে, বিন্দুমাত্র বদলাবে না। সুতরাং শুধু শুধু নির্বাচনে গিয়ে তৃণমূল বিএনপি নেতাদের সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করার কোনো মানে নেই।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রের পলিসি বা সিদ্ধান্তের সঙ্গে কেউ দ্বিমত পোষণ করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে বহিষ্কার করবে বিএনপি। এলাকায় জনপ্রিয়তা ও জিতে আসার অজুহাত দেখিয়ে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় দলই তাকে বহিষ্কার করবে।
এ প্রসঙ্গে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যারা বিএনপি করেন, তারা অবশ্যই দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন। নইলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবাইকে এটা বুঝতে হবে, কেন্দ্রীয়ভাবে যে সিদ্ধান্ত আসে, সেটা সবার ভালোর জন্যই আসে।’
উল্লেখ্য, খুব শিগগিরই সারাদেশের প্রায় ৫০০ উপজেলায় নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। আইন সংশোধনের ফলে এবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন হবে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঁচ ধাপে ৪৮৭টিরও বেশি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে। প্রথম ধাপে হবে প্রায় একশ উপজেলার নির্বাচন। এ ধাপের নির্বাচনের তফসিল ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হতে পারে। এরপর পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে বাকি উপজেলায় নির্বাচন হবে।
দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি— দেশের প্রধান দুই দলের কাছেই এ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্ব পেয়ে থাকে। কিন্তু গত সাড়ে চার বছর ধরে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিক্ত অভিজ্ঞাতার ফলে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনও বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সেক্ষেত্রে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর এটাই হবে দলটির জন্য নির্বাচন বয়কটের আরেকটি অভিজ্ঞতা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-