এনজিওর কবলে রোহিঙ্গা শিবির

ডেস্ক রিপোর্ট : প্রথম দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজ ভেস্তে যাবার সাথে সাথে এবার শিবির গুলোর ব্যবস্থাপনায়ও ‘জগাখিচুড়ি’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক জনবলের অভাবের সুযোগে এনজিও সংস্থা (বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা) গুলোর কর্মীরা রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নিজেরাই শাসকের ভুমিকা পালন করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সরকারি কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতির সুযোগে এনজিও কর্মীরাই রোহিঙ্গা শিবিরের যাবতীয় দায়িত্বও পালন করছে।

রবিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে উখিয়ার জামতলী রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে দেখা গেছে, প্রত্যাবাসনের কাজ নিয়ে বিতর্কিত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা খ্রীষ্টিয়ান এইড এর কর্মীরাই শিবিরটির তদারকের দায়িত্ব পালন করছেন। খ্রীষ্টিয়ান এইড এর সমন্বয়কারি পরিচয়ধারী লাইজু নামের এক নারী বলেন-‘ শিবিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত (সিআইসি) ছুটিতে রয়েছেন তাই আমি শিবিরটির দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করছি।’ এসময় শিবিরের আইন শৃংখলা দেখার দায়িত্বে নিয়োজিত সদস্যরা ছাড়া অন্য কোন সরকারি কর্মকর্তার দেখা মিলেনি।

শিবিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত (সিআইসি) উপ সচিব শফিক উদ্দীনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছুটিতে থাকার কথা জানিয়ে বলেন, খ্রিষ্টিয়ান এইড এনজিওটি শিবিরটির সাইট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এনজিওটি জামতলী শিবিরকে তাদের নিজস্ব তালুকদারি হিসাবে ব্যবহার করছে। সেখানে কোন আগন্তুক গেলেই এনজিওটির কর্মীরা ছুটে এসে আক্রমণাতœক কথাবার্তা শুরু করে দেয়। একটি বিতর্কিত আন্তর্জাতিক এনজিওর হাতে পুরো একটি রোহিঙ্গা শিবিরের প্রশাসনিক সহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রদানের কারনে স্থানীয় সচেতন মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ নিকারুজ্জামান বলেন-‘একটি শিবিরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিবিহীন থাকার কথা নয়। কেননা সিআইসি যদি ছুটিতে থাকেন তাহলে সহকারি সিআইসি অথবা অন্য কোন সরকারি কর্মচারি থাকার কথা। কিন্তু এনজিও’র হাতে পুরো শিবিরটি কিভাবে থাকবে ?’ অপরদিকে কক্সবাজারের অতিরিক্ত রোহিঙ্গা শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত আরআরআরসি) মোঃ শামসুদ্দৌজা বলেন-‘ শিবিরটিতে রবিবারের পুরো পরিস্থিতি সর্ম্পকে আমি খোঁজ নিয়ে সোমবার জানাব।’

শিবিরটিতে বর্তমানে ৪৯ হাজার ৯৪৮ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের মধ্যে গত ১৫ নভেম্বর ১৩ টি পরিবারের রোহিঙ্গা সদস্যদের প্রত্যাবাসন তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু একজন রোহিঙ্গাকেও প্রত্যাবাসনে রাজি করা সম্ভব হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, গত বছরের ২৫ আগষ্টের পর অনুপ্রবেশ করা সাড়ে ৭ লাখ সহ ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার দেখভাল’র নামে এনজিওগুলোর কর্মীরা প্রত্যাবাসন বিরোধী উদ্বুদ্ধকরণ করে আসছে। অনেকটা তোতা পাখীর মত করেই এনজিও কর্মীরা রোহিঙ্গাদের দেশে না ফিরার তালিম দিয়ে আসছে। অথচ এসময়ে শিবির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সরকারের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারি রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরতে উদ্বুদ্ধকরণে এগিয়ে আসেননি।

বরং আকস্মিক ভাবে প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করায় রোহিঙ্গারা সরাসরি ‘আঁরা ন-যাইয়্যুম’ অর্থাৎ আমরা যাব না বলে প্রত্যাবাসন এড়িয়ে যায়। উপরন্তু শিবির ব্যবস্থাপনায় সরকারের অন্যান্য প্রশাসনের সাথেও মারাতœক সমন্বয়ের অভাব লক্ষৗ করা গেছে। একদিকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের গত ১৪ মাস সময় ধরে এনজিওগুলো রোহিঙ্গাদের দেশে না ফিরতে উদ্বুদ্ধ করে আসছে তদুপরি শিবির ব্যবস্থাপনায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই ভেস্তে গেছে প্রত্যাবান কর্মকান্ড। নতুন করে কখন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে তাও বলা মুশকিল হয়ে পড়েছে।

এদিকে জামতলী রোহিঙ্গা শিবিরে খ্রীষ্টিয়ান এইড নামের এনজিও’র বিতর্কিত কর্মকান্ড সহ শিবিরের এনজিওগুলোর কার্যক্রম নিয়ে প্রকাশিত সংবাদটি নিয়ে তোলপাড় চলছে। রোহিঙ্গা শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালাম এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, এনজিওগুলোর কার্যক্রম তদারকিতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছ্।ে সেই সাথে খ্রীষ্টিয়ান এইড নামের এনজিওটির বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি। তবে খ্রীষ্টিয়ান এইড নামের এনজিও’র সমন্বয়কারি লাইজু তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অপরদিকে হিরন ডেল নামের অপর একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার ২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েও রোহিঙ্গা শিবিরে হুলস্থুল চলছে। ওই সংস্থার একজন অষ্ট্রেলিয়ান নাগরিক ট্যুরিষ্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে এখন অবস্থান করছেন কক্সবাজারে। সংস্থাটির অনুদান নিয়ে এতদিন খ্রীষ্টিয়ান এইড নামের এনজিওটি শিবির কাজ চালিযে আসছিল। কিন্তু প্রকাশিত সংবাদের পর হিরন ডেল নামের এনজিওটি তাদের অনুদানের টাকা প্রত্যাহার করে কোষ্ট নামের অপর একটি এনজিও’র সাথে চুক্তি করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা শিবিরে রেডিও প্রচারণা ও অন্যান্য খাতে এ বিপুল অংকের টাকা ব্যয় করার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে কোষ্ট নামের এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী জানান-‘ বিষয়টি নিয়ে তার সাথে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত চ’ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।’ তবে রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, টাকার অংক আরো অনেক কম। এ বিষয়ে আরআরআরসি জানান, হিরনডেল ফাউন্ডেশন নামের এনজিও’র কর্মকান্ডের কোন অনুমতি নেই। আজকের দেশ-বিদেশ

আরও খবর