টেকনাফ প্রতিনিধি :
প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ খুঁজতে আরকান আর্মির সাথে যোগাযোগ তৈরি করেছে বাংলাদেশ।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি, রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরকান আর্মি’কে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলার আহবান জানানো হয়েছে।
শনিবার (১ মার্চ) কক্সবাজার সফরে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রোহিঙ্গা ইস্যুতে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
তিনি জানিয়েছেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও আরকান আর্মির দুই পক্ষের সাথে কুটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত আছে।
এসময় তিনি আরো বলেন ,’ মিয়ানমার থেকে পণ্য আনার সময় সিটওয়েতে মিয়ানমার সরকার ও পরে নাফ নদের সীমান্ত অতিক্রমের সময় আরাকান আর্মিকে ট্যাক্স দিতে হচ্ছে।’
গত বছরের ডিসেম্বরে মিয়ানমার অংশের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফে স্থল বন্দরে আসার পথে এ পর্যন্ত চারটি পণ্যবাহী নৌযান আটকে দেওয়ার নজির তৈরি করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।
তিনটি নৌযানকে ছেড়ে দিলেও সর্বশেষ গর ১০ ফেব্রুয়ারি শাহপরীর দ্বীপের গোলারচর থেকে স্পিডবোটে ধাওয়া করে কাঠবোঝাই একটি ট্রলার নিয়ে যায় গোষ্ঠীটি, ২২ দিন অতিবাহিত হতে চললেও যেটি এখনো মুক্ত হয়নি।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জিন্নাহ অ্যান্ড ব্রাদার্সের কর্ণধার শওকত আলী বলেন,’ ইয়াংগুন থেকে কার্গোগুলো টেকনাফে আসতে সাধারণত তিন দিন লাগে,২০০৩ সাল থেকে টেকনাফ বন্দর ঘিরে ব্যবসা করি। কখনও এ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি।’
আরাকান আর্মি পণ্যবাহী নৌযান প্রতি ১০ শতাংশ কমিশন চেয়েছে জানিয়ে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন – ‘এই ধরনের ঝুঁকি নিয়ে কে ব্যবসা করবে?’
আব্দুল্লাহ অ্যান্ড সন্সের মালিক মো. রানা বলেন, ‘আটকে রাখা কার্গো গুলোতে অর্ধশত কোটি টাকার পণ্য থাকে। ট্রান্সশিপমেন্টের ওপর কমিশন চায় আরাকান আর্মি। বারবার এমন হতে থাকলে পথে বসবে অনেক ব্যবসায়ী’।
অন্যদিকে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতে গেলে বিভিন্ন সময় আর্কান আর্মির হাতে মাছ ধরার নৌকা-জালসহ আটক হয় ১২৮ বাংলাদেশী জেলে, পরে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের প্রচেষ্টায় ফিরিয়ে আনা হয় তাদেরকে।
এছাড়া গেলো বছরের ১১ অক্টোবর মিয়ানমারের নৌবাহিনীর গুলিতে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের মো. ওসমান নামের এক জেলে এবং ২৭ মে আরকান আর্মির গুলিতে উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বালুখালী গ্রামের বাসিন্দা মৃত আবদুল শুক্কুরের ছেলে মো. হোসেন আলী নিহত হন। সেই সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল।
রোহিঙ্গা ইস্যু বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ সীমান্তে বাণিজ্যে কমিশন ও জেলেদের ধরে নিয়ে গিয়ে আরকান আর্মি বাংলাদেশর উপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের ক্ষমতা দেখিয়ে বোঝাতে চায় যে সীমান্তে যেকোনো কিছুর ক্ষেত্রে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে নয় তাদের (আরকান আর্মির) সাথে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। ”
২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর, অপারেশন ১০২৭ এর মাধ্যমে রাখাইনে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আরকান আর্মি তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
প্রায় দেড় বছর ধরে চলা আভ্যন্তরীণ এই যুদ্ধে রাখাইনের ১৭ টি শহরের মধ্যে ১৪ টি শহর ইতিমধ্যে নিজেদের দখলে নেওয়ার দাবী করেছে আরকান আর্মি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-