সরকারি বেতন নিয়েই অবৈধ উপরি কামাই করে ক্ষতি করছে সরকারি সম্পদের!

ইসমাইলের অপকর্মের ফিরিস্তি পরিষ্কার: চুপচাপ উর্ধতন কর্মকর্তারা!

এম ফেরদৌস :

  • বিট কর্মকর্তা ইসমাইলের ম্যাজিক, টাকা পেলে বন-ভূমি হয়ে যায় ব্যক্তিমালিকানা
  • টাকা পেলে বন-আইন’কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখান বিট কর্মকর্তা ইসমাইল

  • ★ বন রক্ষায় নই,বন নিধনে মিশনে তিনি

  • ★ টাকা পেলে সব জায়েজ

  • ★ টাকার কাছে বন-আইন অসহায়

‘বন-ভূমি জবরদখল ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে টাকা পেলে খতিয়ানী জমি তকমা এবং মানবিক বলে দায়মুক্ত ‘ ‘টাকা না পেলে বন-ভুমি উদ্ধার অভিযান বলে স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়া বা মামলা দায়ের করা’ এমন নাটকীয় নীতিতেই চলছে কক্সবাজার দক্ষিণ বন-বিভাগ উখিয়া রেঞ্জের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দায়িত্বপালন।

উখিয়া রেঞ্জের অধিকাংশ বনভূমির জায়াগা জবরদখল করে দালানের স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে। বন-কর্মকর্তাদের যারা টাকা দিতে পারে নাই তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা হয়েছে। মামলা না হলেও অভিযান চালিয়ে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে।

অন্যদিকে যারা বন কর্মকর্তাকে টাকা দিতে পেরেছে তাদের নামে মামলা হয়নি,বনভুমি উদ্ধারে কোন অভিযানও করেনি তারা। স্থাপনাও গুড়িয়ে দেয়নি উখিয়া রেঞ্জের দায়িত্বশীলরা। ফলে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে পাহাড় কেটে একের পর এক দালানের স্থাপনা গড়ে উঠতেছে উখিয়ায়। ফলে ধ্বংসের কবলে পড়েছে উখিয়ার বনাঞ্চল।

উখিয়া রেঞ্জের হলদিয়াপালং বিটে ঘুরে দেখা যায়, বন রক্ষায় নয়, বন নিধন মিশনে নেমেছে বন-কর্মকর্তারা। বনের ভিতরে গাছ কেটে পাহাড় টিলা সমান করে গড়ে উঠতেছে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা। বনের জায়গায় গড়ে উঠা প্রতিটি স্থাপনায় স্থানীয় ভিলেজার আব্দু ছলাম ও জসিম উদ্দিনের মাধ্যমে বিট কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। স্থাপনা নির্মাণে যারা টাকা দিতে পারে না তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে নিয়মিত মামলা হচ্ছে। যারা মোটা অংকের টাকা দিচ্ছে তাদেরকে বনের জায়গায় পাহাড় কেটে দালান করতে সহযোগীতা করছে বন-কর্মীরা।

অভিযোগ রয়েছে বিট কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন ও তার দালাল চক্র কথিত ভিলেজার জসিম উদ্দিন এবং আব্দু সালামের বিরুদ্ধে। তারা বনভূমির জায়গা বেচা-বিক্রি ও বনের জায়গায় দালান নির্মাণে লাখ লাখ টাকা পকেট ভরতেছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের ।

গত ৬ মাসের ভিতর প্লট আকারে ২০ শতক, ৪৫ শতক এরকম টুকরো টুকরো করে প্রায় ১০ থেকে ১৫ একর বনাঞ্চলের জায়গা বিক্রি করেছে স্থানীয় দালাল চক্র ও ভিলেজারের মাধ্যমে। এসব বনভুমির পাহাড় গুলো কেটে স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে। কেউ দালান ঘর,কেউ টিনের ঘর । পাহাড়ের ঢালুতে এসব স্থাপনা গড়ে তুলায় পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকিও কম নই বলে মন্তব্য করেন পরিবেশবাদীরা। এসবের নৈপথ্যে বিট কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন’কে দায় করছেন অনেকেই।

নাপিতপাড়া,মহাজনপাড়া,ঘোনারাপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, নিরমুল কুমার দাস ও বিষনু রানীর ছেলে শুভ দাস ঘোনারপাড়া পাহাড়ের ঢালুতে ৪৫ কড়া বনের জায়গা ক্রয় করেছেন ৮ লক্ষ্য টাকা দিয়ে। সেখানে পাহাড় কেটে একটি টিনের ঘর তৈরি করে তারা বসবাস করছেন। ভিলেজার আব্দু সালাম ও জসিম উদ্দিন মোটা অংকের টাকা নিয়ে বিট কর্মকর্তা ইসমাইলকে ম্যানেজ করে বন আইন কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন।

একই এলাকায় সুলতানের ছেলে বাবুল একেবারে পাহাড়ি বনাঞ্চলের ভিতরে বাগান ভর্তি গাছের মাঝখানে ঘর বানিয়ে বসবাস করছে। সেখানেও বন আইন অসহায়।

রুমখা মহাজন পাড়া এসে দেখা যায় জাফর আলমের ছেলে নুরুল হাকিম পাহাড় কেটে দালান নির্মাণ করতেছে। বিট কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন ও ভিলেজার মিলে মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ হয়ে এই দালান নির্মাণে অনুমতি দিয়েছে বলে জানান পার্শ্ববর্তী লোকজন। ফলে বন আইনে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। টাকা পেলে সব জায়েজ সেখানেও তাই হয়েছে মন্তব্য স্থানীয়দের ।

এর পার্শ্ববর্তী আরো একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করতেছে অসীম শর্মা নামে আরেক ব্যক্তি। সেখান থেকেও ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বন আইন বিক্রি করে চাকরি জায়েজ করেন বিট কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন। তার কাছ থেকে নেওয়া টাকা হালাল করতে সেখানেও কোন আইনি ব্যবস্থা নেন নি এই কর্মকর্তা এমন মন্তব্য করছেন এলাকাবাসী।

একই সড়কে প্রবাসী রাজু শর্মা’ বনের জায়গাতে চলমান দালান নির্মাণ কাজে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিট কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন,রাজুর টা খতিয়ানী জমি বনের জমি নই। অথচ রাজু শর্মা নিজেই প্রতিবেদক কে স্বীকার করেছেন সেটি বনের জায়গা। বনের উর্ধতন কর্মকর্তা সুত্রেও এটি বনের জমি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে । মোটা অংকের টাকা পাওয়াতে বনের জায়গাকে খতিয়ানী বলে দলিল করে দিয়ে দায় সারেন বিট কর্মকর্তা ইসমাইল ।

জানা গেছে, বিট কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন হলদিয়া বিটে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে একেরপর এক দুর্নীতি অনিয়ম করেই চলছে। অল্প সময়ের মধ্যে অনেক বিতর্কিত ও বদনামে জড়িয়েছে উখিয়া রেঞ্জে । তিনি টাকা পেলে বনভূমি’র জমি খতিয়ানী জমি বলে আখ্যায়িত করেন। টাকা না পেলে আইনি অজুহাত দেখিয়ে ছোট ইস্যুকেও বড় করে দেখেন। তার এসব অপকর্মের দায়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় ঢালাওভাবে সংবাদ প্রকাশ হলেও উর্ধতন কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি।

সরকারের দেওয়া দায়িত্ব পালনে মীর জাফরের ভুমিকায় কাজ করা হলদিয়াপালং বিট কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে মানববন্ধনে নামার হুসিয়ারী দেন সংগঠনের নেতারা।

তার এসব অপকর্মের বিষয়ে উখিয়া রেঞ্জে দায়িত্বে থাকা (এসিএফ) শাহিনুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইসমাইল এখন ছুটিতে আছে। এসব স্থাপনার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি জবাবদিহিতা করতে হবে।

এসব বিষয় অবগত করতে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও সাড়া মিলেনি।

আরও খবর