মুহিবুল্লাহ মুহিব :
মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির (এএ) অবস্থান শক্তিশালী হওয়ায় গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়েছে।
বিশেষ করে গত ৮ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মংডু শহরের পুরো নিয়ন্ত্রণ এএর হাতে চলে যাওয়ার পর অনুপ্রবেশের ঘটনা আরও তীব্র হয়েছে। এখন কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং এর আশপাশে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের ছড়াছড়ি। এতে আতঙ্ক বেড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, বর্তমান সংকটের কারণে জটিল হবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া তারা চাইলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনটাও দ্রুত সময়ে হয়ে যেত। তাদের উদ্যোগের অভাবে নতুন সমীকরণ মোকাবিলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এমনিতেই পুরোনো রোহিঙ্গাদের নিয়ে নানা হুমকি রয়েছে। তার মধ্যে নতুন রোহিঙ্গা আসছে। আবার তাদের অবাধ বিচরণ স্থানীয়দের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। নতুন যারা আসছে, তাদেরও কাঁটাতারে সুরক্ষিত করা উচিত।
উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য (কুতুপালং) হেলাল উদ্দিন বলেন, নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা আগে আসার আত্মীয়স্বজনের কাছে আশ্রয় নিচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্নভাবে নতুন রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের গ্রামে ঢুকে পড়ছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আরও বড় হুমকির মুখে পড়তে হবে প্রশাসনকে।
তবে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন করে কাউকে আশ্রয়ের ঘোষণা না দিলেও অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা বলছে শরণার্থী কমিশন। এ জন্য চাওয়া হয়েছে সরকারের অনুমোদন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আরাকান আর্মি মংডুকেন্দ্রিক আক্রমণ জোরদার করার পর থেকেই বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কিছুটা বেড়েছে। কারণ মংডু রোহিঙ্গা অধ্যুষিত শহর। সেখানে তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মায়ানমারের সংঘাত ঘিরে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে।
তাদের অবাধ বিচরণ ঠেকানোর কথা জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা ভাবা হচ্ছে। এ জন্য চাওয়া হয়েছে সরকারের অনুমোদন।
নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের কতটা শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা যাবে তা নিয়েও আছে শঙ্কা। কেননা, অনেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, গত সাত বছরে আশ্রয় শিবিরগুলোতে মোট ৩ হাজার ৮২৩টি মামলায় ৮ হাজার ৬৮৯ জন রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়। কিন্তু সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার ভেতর থেকে আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা কঠিন। বেশির ভাগ আসামি আশ্রয়শিবিরের বাইরে উখিয়া ও টেকনাফের গহিন পাহাড়ের আস্তানায় অবস্থান করছে বলে জানায় পুলিশ।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-