আবারো আলোচনায় খায়রুল আলম চৌধুরী!

বিশেষ প্রতিবেদক :

কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি হুইপ শাহজাহান চৌধুরী পরিবারের একটি বিয়ে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ও রাজনীতির মাঠে পল্টিবাজ হিসেবে পরিচিত বিতর্কিত নেতা খাইরুল আলম চৌধুরী কে দাওয়াত দিয়ে চরম বিতর্কের মুখে পড়েছেন বিএনপির ঐতিহ্যবাহী এ পরিবারটি।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা সমালোচনা ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বিয়ে অনুষ্ঠানের একটি ছবি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিটি পোস্ট দিয়ে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীরা নানান নেতিবাচক মন্তব্য করছেন।

উপজেলা বিএনপির মাঠ পর্যায়ের সিনিয়র নেতারা শাহজাহান চৌধুরী পরিবারিক অনুষ্ঠানে দলছুট বিতর্কিত নেতা খায়রুল আলম চৌধুরীর উপস্থিতি দেখে ক্ষোভে ফুঁসছেন বলে জানা গেছে।

একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তিনি খায়রুর রোষানলে পড়ে ১৫ বছর ধরে আওয়ামী দু:শাসনের শিকার হয়ে অনেক দুর্বিষহ জীবন কাটিয়েছেন। অথচ সেই খায়রুর সাথে আমাদের বড় বড় নেতারা বিয়েতে কাচ্চি বিরানি খাচ্ছেন দেখে তিনি নিরবে চোখের জল ফেলেছেন।

২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের কে বি কনভেনশন হলে উখিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরীর মেয়ের বিয়ে অনুষ্ঠান ছিল। বিয়েতে উখিয়া উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী ও বিশিষ্টজনেরা আমন্ত্রিত ছিলেন। এতে অংশগ্রহণ কারীদের তালিকায় জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর সাথে সাবেক বিএনপির দাপুটে নেতা ও আওয়ামী লীগের বিগত ১৫ বছরের সুবিধাভোগী খায়রুল আলম চৌধুরীর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ছবিতে জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও খায়রুল আলম চৌধুরীকে হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে দেখা যায়। মুহুর্তের মধ্যে ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়। ছবিটি নিয়ে সর্বত্র তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

বিশেষ করে বিএনপির তৃনমুলের কর্মীরা বিষয়টি ভালো ভাবে নেয়নি।
তাদের দাবী, একসময়ের বিএনপির দাপুটে নেতা খায়রুল আলম চৌধুরী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাতারাতি রাজনীতির রং পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগের দোসর বনে যান। উখিয়া টেকনাফের সাবেক বিতর্কিত এমপি আবদুর রহমান বদির খয়ের খা হিসেবে নিজেকে নতুন পরিচয়ে পরিচিত করেন।

বিগত ১৫ বছর খায়রুল আলম চৌধুরী ছিলেন আবদুর রহমান বদির সমস্ত অপকর্মের সহযোগী। তিনি আবদুর রহমান বদির অন্যতম ক্যাশিয়ার হিসেবেও পরিচিত। আবদুর রহমান বদির সাথে দহরমমহরম সম্পর্ক রেখে তিনি শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

শুধু তাই নয়, আবদুর রহমান বদির শ্যালক, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীরও অন্যতম সহযোগী ছিলেন এই খায়রুল আলম চৌধুরী। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদেরও একজন ছিলেন তিনি।

খায়রুল আলম চৌধুরীকে কাছে টানায় শাহজাহান চৌধুরী পরিবারের উপর নেতাকর্মীদের ক্ষোভের কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, খায়রুল আলম চৌধুরী সাবেক এমপি বদির সহযোগী হয়ে চলেছেন রাজার হালে। সেই ক্ষমতার জোর খাটিয়েছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই অংশের উপরই। কেবল যারা তার কথামতো চলতেন, তার সাথে সখ্যতা রাখতেন তারাই এমপি আবদুর রহমান বদির সান্নিধ্য পেতেন।
১৫ বছর তিনি যে সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন তার কিয়দাংশও চোখে দেখেনি আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা কর্মীরা। একইভাবে বিএনপির যেসব নেতাকর্মী তার কথা শুনতেন না, তাদের উপর বিভিন্ন হুমকি দমকি নেমে আসতো। আর যারা তার সিন্ডিকেটে থাকতেন তারা থাকতেন সুবিধাজনক অবস্থায়। এ কারণে আওয়ামী লীগ বিএনপি দুই অংশের নেতাকর্মীরাই তার ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত।

খায়রুল আলম চৌধুরী এমপি আবদুর রহমান বদির এতো ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, বদি’র প্রথম নির্বাচনে বিপুল অর্থকড়ি দিয়ে সাহায্য করেছিলেন খায়রুল আলম চৌধুরী। সেই নির্বাচনে আবদুর রহমান বদির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী।

তখন খায়রুল আলম চৌধুরীও বিএনপির দলীয় এমপি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত ছিলেন এবং নিজেও জেলা বিএনপির নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগ বিএনপির দুই এমপি প্রার্থীর সাথে সম্পর্ক থাকলেও জয়ী হয়ে আসেন আবদুর রহমান বদি এবং সরকার গঠন করেন আওয়ামী লীগ। সেই নির্বাচনে বদি জয়ী হওয়ার পর থেকে বদির একনিষ্ঠ লোক হয়ে ওঠেন খায়রুল আলম চৌধুরী। পরবর্তীতে আবদুর রহমান বদির হয়ে তিনটি জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করেন খায়রুল আলম চৌধুরী। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে তিনি তৎপর থাকতেন।

শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ে কারা নেতা নির্বাচিত হবেন সেখানেও তার পছন্দ অপছন্দ কাজ করতো। আবদুর রহমান বদির সাথে সম্পর্ককে পুঁজি করে তিনি তার স্বার্থ হাসিল করে নিতেন। ধুরন্দর খায়রুল আলম চৌধুরী রত্না পালং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা চেয়ারম্যানকে কোনঠাসা করতে নানা ফন্দিফিকির করে আসছিলেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীকে নিজের কব্জায় নিয়ে নুরুল হুদাকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে নীলনকশা এঁটেছিলেন। খায়রুল আলম চৌধুরী নিজে আওয়ামী লীগের খাতায় নাম লেখিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে চেয়েছিলেন। সেইভাবেই সবকিছু ঠিকঠাক করা ছিল। কিন্তু এরিমধ্য আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে আবদুর রহমান বদি, খায়রুল আলম চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

খায়রুল আলম চৌধুরীর বহুরূপী অবস্থানের বিষয়ে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকরা তার মুখোমুখি হলে তিনি বলেন, তিনি সবসময় সরকারি দল। যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তিনি সেই সরকারের নৌকায় চড়বেন। এতে তার কোন আক্ষেপ বা অস্বস্তি নেই। তবে এবার অবস্থাদৃষ্টে সবাই ধারণা করছেন, খায়রুল আলম চৌধুরী এবার বোধহয় ধরা খেলেন!

আরও খবর