বালুখালী ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছে সরোয়ার সিন্ডিকেট

 

  • প্রশাসন পরিচয় দিয়ে কোটি টাকার ইয়াবা ছিনতাই 
  • সৎ সাজতে পুলিশ ডেকে নিয়ে গিয়ে ১০ হাজার পিস ইয়াবা পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে বুঝিয়ে দিয়ে দায় সারেন সরোয়ার।  
  • ৯ ব্যান্ডেল ইয়াবা গায়েব, ১ ব্যান্ডেল নিয়ে পুলিশের জব্দ তালিকা
  • রোহিঙ্গা’দের যাবতীয় অবৈধ কারবার সম্পন্ন হচ্ছে এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে
  • পট পরিবর্তনের সুযোগে যুবদল নেতা পরিচয় দিয়ে বালুখালী ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছে তারা 
  • ইজারা বিহীন জায়গা থেকে টুলের নামে চালাচ্ছে চাদাঁবাজি 
  • ওসি বলছে এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রেখেছেন, সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।

এম ফেরদৌস  :

উখিয়ার বালুখালীতে প্রশাসন পরিচয় দিয়ে ইয়াবা লুটের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচলা চলছে। লুট হওয়া ইয়াবা সামাল দিতে কৌশলে পুলিশকে খবর দিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ তালিকায় দেখাতে বানানো নাটক সাজিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটরা।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর ২৪ইং)  সকাল ১১ টার দিকে বালুখালী পশ্চিম পাড়া সড়কে এ ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে , প্রশাসনের ছন্দ বেশে যুবদল নেতা ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এক রোহিঙ্গার কাছ থেকে ১ লক্ষ পিস ইয়াবা ছিঁনতাই করেন বালুখালীর সরওয়ার সিকদার নামে এক ব্যক্তি যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি টাকা। এ ঘটনা জানাজানি হলে সে নিজেকে সুরক্ষা ও আইনিভাবে বাধা-বিপত্তি থেকে বাচঁতে পুলিশকে নিজেই খবর দিয়ে ১০ হাজার পিস ইয়াবা পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে দিয়ে দেন । অবশিষ্ট ৯০ হাজার পিস ইয়াবা তারা মেরে দেন। এমন খবর সর্বত্রে উড়লে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গনমাধ্যম কর্মীরা।

ঘটনাস্থল থেকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একজন রোহিঙ্গা পলিথিনের ব্যাগ নিয়ে বালুখালী পশ্চিম পাড়া সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎ স্থানীয় কিছু মানুষ তাকে ধাওয়া করতে দেখা যায়। ওই রোহিঙ্গাকে ধাওয়া করার দৃশ্য দেখে পার্শ্ববর্তী আরো কিছু লোকজন তাদের পিছনে পিছনে দৌঁড়ায়।

ধাওয়া দিয়ে তাকে ধরার পর সরোয়ার সিকদারের সাথে থাকা তার সহযোগীরা মিলে তার হাতে থাকা পলিথিনের ব্যাগ তল্লাশী করে। অই পলিথিনের ব্যাগ খুলতেই দেখা যায় ব্যাগভর্তি প্যালেস্টার মোড়ানো ১০ ব্যান্ডেল ইয়াবার কার্ড। সরোয়ার সিকদার ইয়াবার কার্ড দেখে কৌশলে তাড়াহুড়ো করে অই রোহিঙ্গাকে নিয়া পাশে একটি দোকান ঘরে ঢুকে যায়।

পরে আশে পাশে জড়ো হওয়া মানুষকে তারা হুমকি ধামকি দিয়ে চলে যেতে বাধ্য করে। পরবর্তী তারা প্রশাসনের মতো অই পাচারকারী  রোহিঙ্গাকে বিভিন্ন কথাবার্তা জিজ্ঞাসাবাদ করে। অই দোকান ঘরের ভিতরে সরোয়ার সিকদার ও রোহিঙ্গার দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তা শেষে ইয়াবা পাচারকারী রোহিঙ্গা যুবক কান্নাকাটি করে চলে যেতে দেখা যায়।

এর কিছুক্ষণ পর ইয়াবার ১ ব্যান্ডেল নিয়ে পলিথিনটা রাস্তায় রেখে সবাইকে বলতে শুনা যায় এইখানে এক ব্যান্ডেল ইয়াবা পাওয়া গেছে পুলিশ আসতেছে এই মাল নিয়ে যাবে কেউ হাত দিবেন না।

এর পরপরই উখিয়া থানা থেকে একটি পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে এসে ১ ব্যান্ডেল ইয়াবা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ এ ঘটনার আলামতও নিয়েছেন সরোয়ার এবং তার সহযোগীদের কাছ থেকে।

এসব ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া এএসআই দিদারুল আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরিত্যক্ত অবস্থায় ইয়াবা পাওয়া গেছে এমন খবরে ঘটনাস্থলে গিয়ে ১ কার্ড অর্থাৎ ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। জড়িত কোন কারবারিকে পাওয়া যায়নি তাই কাউকে আটক করা হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী’র মতে অই পলিথিনে তো ১০ ব্যান্ডেল ইয়াবার কার্ড ছিল আপনারা শুধু ১ ব্যান্ডেল কেন পেলেন বাকি গুলো গেল কই…?  এএসআই দিদারকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, স্থানীয়দের খবরে ঘটনাস্থলে এসে দেখি পলিথিনে এক ব্যান্ডেল ইয়াবা আছে। কে বা কারা জড়িত,কে নিল এসব তো জানি না। পলিথিনে আরো ইয়াবা যদি থেকে থাকে এসব কারা নিল, এসবের সাথে কারা জড়িত,এই ইয়াবার মালিক কারা সব তদন্ত করে বের করার আশ্বাস দেন তিনি।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, দিন দুপুরে জনসম্মুখে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা। পলিথিনে ইয়াবা ছিল ১০ বান্ডেল এক বান্ডেলএ ১০ হাজার করে থাকে। সরোয়ার সিকদার পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে রোহিঙ্গা পাচারকারীকে ধরে ইয়াবা নিয়ে নিল। ঘন্টাঘানেক পরে ১ বান্ডেল পুলিশকে দিয়ে বলল পাচারকারীকে ধাওয়া করেছিলাম এই পলিথিন পেলে চলে গেছে। পুলিশও তা বিশ্বাস করল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরোয়ার সিকদার নিজেই একজন কালোবাজারি। তার সিন্ডিকেটের সাথে ইয়াবা বেচা-বিক্রিতে অমিল হলে এসব পার্টনারদের সাথে বেঈমানি করে সব মাদক নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রশাসনকে খবর দিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে প্রশাসনকে অল্প কিছু দেখিয়ে বাকিগুলো নিজেই মেরে দেন। এভাবে বিভিন্ন কলা-কৌশল কাটিয়ে ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে কারবার চালাচ্ছে দীর্ঘদিন।

বছর দেড়এক আগে তার আপন খালাতো ভাইকে রোহিঙ্গাকে জিম্মা দিয়ে ১০ কার্ড ইয়াবা নিয়ে উধাও হয়ে যায় সরোয়ার সিকদার। লেনদেন সম্পন্ন না করে ইয়াবা নিয়ে পালিয়ে গেলে জিম্মা থাকা তার খালাতো ভাইকে মারধর ও পরিবারকে মৃত্যুর হুমকি দিলে ভেংগে পড়েন তার খালা। পরবর্তী তার খালা ছেলেকে বাচাতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস করেন সেই সরোয়ার সিকদার সিন্ডিকেটের গোপন কথা।

শুধু তাই নই, এই সরোয়ার সিকদার সিন্ডিকেটরা ৫ই আগষ্টের পরে বালুখালী বাজারের ইজারা দাতা পরিচয়ে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে দৈনিক লাখ লাখ টুলের চাদাঁ আদায় করে নিচ্ছে। অথচ উখিয়া ভুমি অফিস থেকে শুধু মাত্র খাস কালেকশনের জন্য কয়েকজন প্রতিনিধি নিয়োগ দিছিল। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা ইজারাদার বনে খাস জায়গার বাহিরে গিয়েও চাঁদা তুলে রীতিমতো সমালোচনার মুখে পড়ে তারা। সংশ্লিষ্ট সকলকে ম্যানেজ করে এখনো চলছে এসব নিরব চাদাঁবাজি।

এই সরোয়ার রাজনৈতিক নেতা এবং সাংবাদিক পরিচয়ে এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।

বালুখালী ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি অছিউর রহমান বলেছেন, সরোয়ার সিকদার যুবদল নেতা পরিচয় দিয়ে বালুখালীতে যত রখম অপকর্ম আছে তা করে বেড়াচ্ছে। সন্ত্রাসী স্টাইলে মানুষকে হামলা।ইয়াবা লুট,ইজারা বিহীন জায়গা থেকে টুলের চাঁদা আদায়সহ বিভিন্ন টেন্ডারবাজি করে বেড়াচ্ছে। রোহিঙ্গারা যাতায়াত পথে প্রশাসনের মতো তল্লাশী করে টুলের টাকার নাম দিয়ে লাখ লাখ টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছে। যা বিএনপি’র মান সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে।

এসব ঘটনা অস্বীকার করে অভিযুক্ত সরোয়ার সিকদার বলেন, আমরা ইজারার টাকা তুলতে ঘাটে বসে আছি। এমন সময়ে এক রোহিঙ্গা পলিথিনে ব্যাগ নিয়ে হেটে চলে যাচ্ছে তাকে সন্দেহজনক হলে পলিথিনে কি আছে জানতে চাই। এমন সময় সে ব্যাগ টা পেলে পালিয়ে যায়। সাথে সাথে পুলিশকে কল দিয়ে অবগত করি।  পুলিশ এসে ১ ব্যান্ডেল ১০ হাজার পিস ইয়াবা পাই অই পলিথিনে। এর বাইরে আর কোন ঘটনা ঘটেনি।

এ বিষয় নিয়ে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফ হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, পরিত্যক্ত অবস্থায় ১০ হাজার পিস (১কার্ড) ইয়াবা উদ্ধার করা হয়ছে বালুখালী থেকে। এগুলা জব্দ তালিকায় দেখানো হয়েছে। কারবারিকে পাওয়া যায়নি তাই এখনো মামলা হয়নি।

আরও খবর