দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রাখাইন, নতুন আশ্রয়প্রার্থীর আশঙ্কায় বাংলাদেশ

কালেরকন্ঠ :

নজিরবিহীন সংকটে পড়তে যাচ্ছে প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় উন্নতির সম্ভাবনা না থাকায় রাখাইন রাজ্য বর্তমানে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। এমন প্রেক্ষাপটে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয়প্রার্থীদের ঢলের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

  • মায়ানমার থেকে আবারও আশ্রয়প্রার্থীর ঢলের শঙ্কা

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে বলেছে, আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ রাখাইন রাজ্যের ৯৫ শতাংশ বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে।

ইউএনডিপি বলছে, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিভিন্ন মহল গত কয়েক বছরে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগের অভাবে প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশমুখী আরেক দফা অনিয়ন্ত্রিত ঢলের পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মি ও অন্যান্য গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই চলছে। আঞ্চলিক মহাসড়কসহ অন্য রাজ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

চলাচল, পরিবহনের ওপর বিধি-নিষেধও চলছে। অবনতিশীল পরিস্থিতির কারণে প্রাণ বাঁচাতে রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দারা অন্যত্র আশ্রয়ের সুযোগ খুঁজছে। এ ক্ষেত্রে রাখাইন রাজ্যের সবচেয়ে কাছে বাংলাদেশ। ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর সেখানে আরো পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তারা অত্যন্ত মানবেতর পরিস্থিতির মধ্যে আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এবার শুধু রোহিঙ্গা নয়, অন্য গোষ্ঠী বিশেষ করে রাখাইনদেরও খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য অন্যত্র ছুটতে হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী সংঘাত পর্যালোচনাকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) গত আগস্টেই জানিয়েছিল, বিদ্রোহী আরাকান আর্মি রাখাইনের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সেখানে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠার পর বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়েছে। রাখাইনে নিত্যপণ্য সরবরাহে মিয়ানমারের জান্তা কর্তৃপক্ষের অবরোধ থাকার কারণে বেসামরিক জনগণকে ভুগতে হচ্ছে।

রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস সম্পর্কে ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার ও বাংলাদেশ বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক থমাস কিয়ান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইউএনডিপির প্রতিবেদনে যে তথ্যগুলো উঠে এসেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের। রাখাইনে প্রবেশাধিকার ও যোগাযোগে বিধি-নিষেধের কারণে সেখানের পরিস্থিতি যাচাই করা কঠিন। তবে এটি স্পষ্ট যে রাখাইনে নাজুক পরিস্থিতির প্রভাব সেখানে সব জাতিগোষ্ঠীর ওপর পড়ছে।’

থমাস কিয়ান বলেন, ‘বাংলাদেশ নিজেই অনেক অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। প্রতিবেশী রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশকে অবশ্যই উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। গত বছর রাখাইনে নতুন করে সংঘাত শুরুর পর প্রায় অর্ধলক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করার তথ্য পাওয়া যায়। ওই রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগ বাংলাদেশে ঢুকেছে গত কয়েক মাসে।’

রাখাইনে যাতে আরো সহায়তা পৌঁছতে পারে সে জন্য মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কাজ করার ওপর জোর দিয়েছেন ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার ও বাংলাদেশ বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক। এ ক্ষেত্রে রাখাইনের অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় এবং সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা জোরদারের কথাও বলেছেন তিনি।

থমাস কিয়ান বলেছেন, ‘রাখাইনে অবনতিশীল পরিস্থিতি ঠেকাতে না পারলে মিয়ানমার থেকে আশ্রয়প্রার্থীরা অনানুষ্ঠানিকভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসবে। ঢাকা নিশ্চয়ই তা চাইবে না।’

  • মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ :

পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিন গত ১০ নভেম্বর ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত ইউ কিয়াও সোয়ে মোয়ের সঙ্গে এক বৈঠকে ইউএনডিপির প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করেছেন। পররাষ্ট্রসচিব আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করেন এবং প্রত্যাবাসন শুরুর ওপর জোর দেন। তিনি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের দিকে আরো বাস্তুচ্যুতি রোধ করতে এই উদ্বেগ মোকাবেলায় অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।