টেকনাফে ৩ দিনে অপহরণকারী চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার

টেকনাফ ও হ্নীলা প্রতিনিধি :

কক্সবাজারের টেকনাফে পৃথক অভিযানে তিন দিনে অপহরণকারী চক্রের সক্রিয় পাঁচ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মডেল থানার পুলিশ।

ধৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অপহরণ, শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি মোটা অংকের টাকা আদায় এবং বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে।

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. গিয়াস উদ্দিন পাঁচ জন আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি দুষ্কৃতকারীরা সাধারণ মানুষকে অপহরণ করে মোটা অংকের টাকা আদায় করে যাচ্ছে। ওই টাকা আদায়ের জন্য অপহৃতদের শারীরিক নির্যাতনের লোমহর্ষক ভিডিও ধারণ করে পরিবারের কাছে পাঠাতো। ওই দুষ্কৃতকারীদের ফলে টেকনাফের সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত আগস্ট মাসেও হৃীলা ইউনিয়নের মোছনী এলাকার দুই ভাইকে অপহরণ করে ব্যাপক নির্যাতন চালায় অপহরণকারীরা। পরে মোটা অংকের মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসে। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের সপ্তাহে হৃীলা নাটমোড়া পাড়ার আতিক নামের একজনকে অপহরণ করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে ১০ লাখ টাকার মুক্তিপণে ফিরে আসে। এসময় তাকে চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন।

এভাবেই টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া, হৃীলাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে অপহরণ চক্রকারী সদস্যরা বিভিন্ন কৌশলে অরহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে থাকেন। এ ঘটনায় ভয়ে অনেক পরিবার মামলা করতে সাহস পেতোনা। কারণ অপহৃতদের বিভিন্নভাবে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে রাখতো এবং মামলা করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে রাখতো বলে জানায়।

পুলিশ জানায়, অপহরণ চক্রের সদস্যদের আটক করতে পুলিশি তৎপরতা শুরু করে। গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) মোহাম্মদ হামিম (১৫) নামের এক কিশোর জুম’আর নামাজ শেষে বাড়িতে ফেরার পথে মোহাম্মদ সেলিমের সাথে দেখা হয়। তখন হামিমকে ফুসলিয়ে মোহাম্মদ সেলিম টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ এলাকায় বেড়াতে নিয়ে যায়। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও হামিম বাড়ি না ফিরলে তার মা সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে।

খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে গত ৫ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তাহার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর হতে হামিমের মায়ের মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে জানায় যে, তাহার ছেলে মোহাম্মদ হামিম (১৫) অপহরণ করা হয়েছে। তাকে চাইলে মুক্তিপণ বাবদ ৭০ হাজার টাকা দাবী করে। তাদের দাবীকৃত মুক্তিপণের টাকা না দিলে হামিমকে প্রাণে হত্যা করার হুমকি-ধামকি প্রদান করে। পরে অপহৃত হামিমের মা টেকনাফ মডেল থানায় এসে পুলিশকে তাহার ছেলের অপহরণের বিষয়টি অবগত করেন। তার তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান শুরু করে পুলিশ। গোপন অনুসন্ধান ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অপহরণকারীদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর এর শেষ লোকেশন এর মাধ্যমে অপহরণকারীদের অবস্থান শনাক্ত করে পুলিশ।

লোকেশন অনুযায়ী গত ৬ অক্টোবর বিকাল ৫টার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের দক্ষিন লম্বরী এলাকায় ফয়সাল (২৮) এর বসত ঘরের সামনে পুলিশ অভিযানে গেলে দুষ্কৃতকারীরা পালানোর চেষ্টা করে। এসময় বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া করাচি পাড়ার হাসান আলীর ছেলে পারভেজ মোশারফ (১৯) ও উত্তর লম্বরির মনির আহমদের ছেলে নুরুল আফছারকে (১৯) আটক করে এবং অপহৃত মো. হামিমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

এ ঘটনায় অপহৃত হামিমের মা থানায় এজাহার দায়ের করলে টেকনাফ মডেল থানার মামলা নং-১৮/৫৪০, তাং-০৭/১০/২০২৪ইং, ধারা-৭/৮/৩০ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০২০) রুজু করা হয়।

এদিকে পৃথক আরো দু’টি অভিযানে আরো তিনজন অপহরণকারীকে আটক করা হয়েছে। গত ২০ জুলাই সন্ধ্যায় শামলাপুরের পুরান পাড়ার মোহাম্মদ ইয়াছিনকে (২১) বাহারছড়ার ঢালা রোড হতে অপহরণের মামলার আসামি বাহারছড়া শিলখালী এালাকার নুরুন্নবীর ছেলে সোহেল, সামশুল হুদার ছেলে আব্দুল্লাহ প্রকাশ ছুট্টু এবং গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে টেকনাফ উপজেলার হৃীলা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড নাটমুড়া পাড়ার আবদু সালামের ছেলে মোহাম্মদ আতিকুর রহমানকে (২১) অপহরণের ঘটনায় হৃীলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড রঙ্গিখালী এলাকার আব্দুল মাবুদের ছেলে আলা উদ্দিনকে (২৪) আটক করে। আটককৃতদের কক্সবাজার আদালতে সোপর্দ করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি গিয়াস উদ্দিন।

এদিকে, পুলিশকে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি জানান সাধারণ মানুষ। অপহরণের ঘটনায় আরো যারা জড়িত, বিশেষ করে পাহাড়ে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে দুষ্কৃতকারীদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানান টেকনাফের সচেতন মহল।