সুজাউদ্দিন রুবেল :
অবশেষে জোড়া লাগছে সাগরের ঢেউয়ের আগ্রাসনে বিলীন হওয়া কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ শুরুর দুই কিলোমিটার। শিগগিরই প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করবে সেনাবাহিনী।
পর্যটন, ব্যবসায়ী, চালক ও যাত্রীরা বলছেন, বিকল্প পথে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি থেকে রেহাই ও মেরিন ড্রাইভের সুফল মিলবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ শুরু কলাতলী অংশ থেকে। এই কলাতলী থেকে বেলা হ্যাচারি পর্যন্ত নির্মিত মেরিন ড্রাইভটি বিলীন হয়েছে সাগরের আগ্রাসনে। একই সঙ্গে ঝুঁকির মুখে পড়ে অনেক স্থাপনা। তবে স্থাপনা রক্ষায় অনেকেই নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করে বাঁধ। তারপরও বছরের পর বছর জোড়া লাগেনি মেরিন ড্রাইভের বিলীন হওয়া অংশ।
যার কারণে মেরিন ড্রাইভে উঠতে ব্যবহার হচ্ছে বিকল্প সড়ক। যা অনেকটা সরু। যার কারণে এই সড়কে লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। একই সঙ্গে প্রতিদিনই ঘটে দুর্ঘটনা। তবে মেরিন ড্রাইভের বিলীন হওয়া অংশে শিগগিরই কাজ শুরুর কথা শুনে দারুণ খুশি চালক ও যাত্রীরা।
টুরিস্ট জীপ চালক আব্দুল হাকিম বলেন, মেরিন ড্রাইভ শুরুর কলাতলী থেকে বেলী হ্যাচারি পর্যন্ত ভাঙা। তাই বিকল্প সড়কটা অনেক ছোট। যার কারণে সবসময় যানজট লেগে থাকে। এতে পর্যটকসহ আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এখন ভাঙা অংশের কাজ শুরু হবে বলছে, এটা অবশ্যই সবার জন্য ভালো হবে।
ইজিবাইক চালক শফি উল্লাহ বলেন, বিকল্প সড়কে ২ কিলোমিটার যেতে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা লাগে। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লেগে যায়।
হোটেল সী ক্রাউনের ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, মেরিন ড্রাইভের বিলীন হওয়া অংশ সেনাবাহিনী কাজ শুরু করবে এটা পর্যটকদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। কক্সবাজার বেড়াতে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের আর দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, যা বঙ্গোপসাগরের পাশ দিয়ে কক্সবাজারের কলাতলী সৈকত থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত, যা দেখতে যায় হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু। দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরিন ড্রাইভের বিলীন হওয়া অংশ মেরামত হলে বিকল্প পথে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি থেকে রেহাই ও মেরিন ড্রাইভের সুফল মিলবে বলে জানালেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, মেরিন ড্রাইভের বিলীন হওয়া অংশে অনেকগুলো স্থাপনা রয়েছে। তার মধ্যে হ্যাচারি, হোটেলসহ নানা স্থাপনা রয়েছে। এসব স্থাপনাও জোয়ার-ভাটার মধ্যে রয়েছে। এখন মেরিন ড্রাইভের বিলীন হওয়া অংশে প্রতিরক্ষা বাঁধ আর সড়ক হলে একদিকে স্থাপনাগুলো রক্ষা পাবে আর পর্যটন শিল্প বিকাশে সহায়ক হবে।
এদিকে সম্প্রতি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ভিডিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন জানান, সেনাবাহিনী এরইমধ্যে শহরের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নির্দিষ্ট পার্কিং স্পট না থাকার কারণে যেসব গাড়ি সড়কে পার্কিং করা হতো, সেসব গাড়ি পার্কিং এর জন্য আলাদা জায়গা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। যার কারণে কলাতলীর ডলফিন মোড়ে যানজট অনেকটায় কমেছে।
মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন বলেন, ১৯৯১ সালের পর থেকে মেরিন ড্রাইভে খণ্ডিত অংশ দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে না পারায় প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এর কাজ শেষ হলে একটা প্রস্তাবনা পাঠানো হবে মন্ত্রণালয়ে। সেটি পাস হলে সড়কের কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ; যার দূরত্ব দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার। কিন্তু গেলো দুই দশক আগে সাগরের প্রবল স্রোতে বিলীন হয়ে যায় মেরিন ড্রাইভ শুরুর প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-