ইমরান আল মাহমুদ, কক্সবাজার জার্নাল ডটকম :
ভারতের ডুম্বুর সহ কয়েকটি বাঁধ খুলে দেওয়ার স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখতে পায় ফেনী সহ দেশের কয়েকটি জেলার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্থ হয় লাখ লাখ মানুষ।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য খাদ্য উপহার পাঠানোর উদ্যোগ নেন উখিয়া উপজেলার সাধারণ ছাত্র-জনতা। গঠন করে একটি তহবিল। উপজেলার সকল শ্রেণীপেশার মানুষ সাধারণ ছাত্র-জনতার গঠিত তহবিলে অর্থ সহায়তা প্রদান করেন। গঠিত তহবিলের সহায়তার অর্থ দিয়ে শুরু হয় খাদ্য উপহার বিতরণের প্রস্তুতি।
সকলের সম্মতিক্রমে মরিচ্যা থেকে একটি টিম নোয়াখালী ও কোর্টবাজার স্টেশন থেকে একটি টিম ফেনীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ফেনীর উদ্দেশ্যে রওনা হন কক্সবাজার জার্নালের প্রতিবেদকও।
গত ২৬ আগস্ট দুপুরে রওনা হয়ে চট্টগ্রাম ও ফেনী দীর্ঘ যানজট পেরিয়ে লোকজনের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে করে রাত ১২টায় শহরে অবস্থিত জামিয়াতুল ফালাহিয়া মাদ্রাসায় পৌঁছে মূল টিম। সেখানে খাদ্য উপহার বোঝাই গাড়ি সহ অবস্থান নিয়ে সকাল হতেই দেখা মিলে অনন্য দৃশ্য। মাদ্রাসার সকল ভবন খুলে দেওয়া হয়েছে বন্যায় পানিবন্দি মানুষের জন্য। মুসলিম হিন্দু সকলেই সেখানে আশ্রয় নিয়ে অনিশ্চিত শঙ্কায় দিনাতিপাত করার দৃশ্য দেখা যায়। তাদের তিনবেলা রান্না করা খাবার নিশ্চিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
২৭ আগস্ট সকাল ৯টার দিকে ফেনী শহরে অবস্থান করা বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের এক কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়ে সার্বিক বিষয় নিয়ে পরামর্শক্রমে পানিতে ডুবন্ত সড়ক প্রদক্ষিণ করে কাজিরবাগ এলাকায় গিয়ে থামে খাদ্য উপহারের গাড়িটি। উখিয়া উপজেলা সাধারণ ছাত্র-জনতা টিম সেখানে নেমে দেখতে পায় ভয়াবহ দৃশ্য। কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পানিবন্দি ঐ এলাকার শতাধিক পরিবার। করুণ চাহনি এক বৃদ্ধের। বর্ণনা দিলেন বন্যা পরিস্থিতির। জন্মের পর থেকে কখনো এমন বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে জানান তিনি। পরে কোমর সমান পানি পেরিয়ে শতাধিক পরিবারের সবার মাঝে খাদ্য উপহার বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেন উখিয়া উপজেলা সাধারণ ছাত্র-জনতার টিম। ঐ এলাকার সকলে উখিয়া উপজেলা সাধারণ ছাত্র-জনতার টিম ও আর্থিক সহযোগিতা করা সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
একইদিন দুপুরে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে টিমের সকলে যান ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশ্ববর্তী ফাজিলপুর গ্রামে। সেখানে পানির অবস্থা আরও ভয়াবহ। পানিবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করা মানুষের অনেকে অবস্থান নিয়েছেন আত্নীয় স্বজন কিংবা প্রতিবেশীদের দুতলা কিংবা চারতলা দালান ঘরে। সেখানেও খোঁজখবর নিয়ে পৌঁছে দেওয়া হয় খাদ্য সামগ্রী। সবচেয়ে বেশি খাদ্য উপহার পৌঁছে দেওয়া হয় পানিবন্দি থাকা মানুষের মাঝে।
খাদ্য উপহার বিতরণ শেষ করে বিকেলে রওনা হয় তারা। রাত ৪টার দিকে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছান সাধারণ ছাত্র-জনতার টিম। তারা জানায়,”আমরা উখিয়া উপজেলা সাধারণ ছাত্র-জনতা টিম একটি তহবিল গঠন করে ফেনী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে খাদ্য উপহার বিতরণের উদ্যোগ নিই। পরে সকল শ্রেণীপেশার মানুষ আর্থিক সহযোগিতা করে। স্বেচ্ছায় একটি টিম বন্যা দুর্গত এলাকা নোয়াখালী ও আরেকটি টিম ফেনীতে স্বশরীরে গিয়ে খাদ্য উপহার বিতরণ করে। সহযোগিতা করার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ভবিষ্যতে যেকোনো দুর্যোগময় পরিস্থিতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ার কথা জানান তারা।”
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-