ডেস্ক নিউজ :
সরকারি অফিসসূচি মেনে ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) বসে অফিস করার জন্য চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। শুধু তাই নয়, নিজের অধিক্ষেত্রের বাইরে অবস্থান করলে বা অফিসে উপস্থিত থাকতে না পারলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বা প্রয়োজনে জেলা প্রশাসককে অবহিত করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। সরকারের এমন নির্দেশনায় ক্ষুব্ধ ইউপি চেয়ারম্যানরা। এটি তাদের আটকে ফেলার ষড়যন্ত্র বলেও মনে করছেন তারা।
গত ১৫ মে সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয় স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ শাখা থেকে। সরকারি এ পরিপত্রের নির্দেশনায় বলা হয়েছে- স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খুবই কাছাকাছি থেকে বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে আসছে। সেবা সহজীকরণ এবং জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন, ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে অন্যান্য সেবা প্রদান, গ্রাম আদালত পরিচালনাসহ নানাবিধ সেবা প্রদান করে থাকেন।
সাধারণত অফিস সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের সেবা গ্রহণ করে থাকেন সেবাপ্রত্যাশীরা। ইউনিয়ন পরিষদের সেবা সহজ এবং যথাসময়ে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে চেয়ারম্যানদেরকে সরকারিভাবে নির্ধারিত অফিস সময়ে পরিষদে উপস্থিত থাকা প্রয়োজন। কোনো কারণে ইউপি চেয়ারম্যানরা অধিক্ষেত্রের বাইরে অবস্থান কারলে বা অফিসে উপস্থিত থাকতে না পারলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বা প্রয়োজনে জেলা প্রশাসককে অবহিত রাখবেন।
এ বিষয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার আমাদের সময়কে বলেন, ইউপি সেবা সহজীকরণের জন্যই এ নির্দেশনা। চেয়ারম্যানরা পরিষদে থাকলে মানুষ তার কাক্সিক্ষত সেবা সহজেই পাবে।
মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ইউপি চেয়ারম্যানরা। এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফোরামের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ছাত্রদের মতো টাইম মেনে পরিষদে বসে থাকলে কাজ করব কীভাবে? আমাদের কাজ তো শুধু এক জায়গায় না। সালিশ-বিচার করতে হয়। এ রকম সময়সূচি মেনে কাজ করা অসম্ভব। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর থানার ১২ নম্বর
হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মেহেদী হাসান সম্রাট আমাদের সময়কে বলেন, আমরা যারা জনপ্রতিনিধি, ২৪ ঘণ্টাই তাদের কাজ। শুধু পরিষদে বসে থাকলে কাজ হয় না। আমাদের সালিশ-বিচার করতে হয়। উন্নয়ন কাজ দেখতে হয়। অফিসে বসে থাকলে এগুলো কে করবে? এটা চেয়ারম্যানদের আটকে ফেলার ষড়যন্ত্র। সবখানে আমলাতান্ত্রিক প্রভাব খাটানোর পরিকল্পনা।
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এমনটা যদি করতেই হয়, তাহলে পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের ক্ষেত্রেও তা করতে হবে। শুধু ইউপি চেয়ারম্যানদের ক্ষেত্রেই কেন এমন নির্দেশনা, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এ রকম সার্কুলার জারি করা অসঙ্গত ও কাম্য নয়
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে একটি কলাম লিখেছেন। যেখানে এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তার অধীন মনে হয়, এ রকম কোনো সার্কুলার বা পরিপত্র জারি করা সঙ্গত ও কাম্য নয়। তাতে উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ উভয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ক্ষুণœ হয়। কারণ একজন ইউএনও যে পরিষদের ন্যস্ত কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সে পরিষদের একজন সদস্য। সদস্য হিসেবে তিনি ওই পরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার রাখেন। তাই ওই পরিষদের একজন নির্বাহী ওই সদস্যের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা হতে পারেন না। যদি তা করতে হয়, ইউএনওকে পরিষদের ন্যস্ত কর্মকর্তার তালিকা থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-