উখিয়ায় মাসোহারায় চলছে হাজারের অধিক অবৈধ ডাম্পার!

  • তিন বছরে ২৯০টি বন মামলা রুজু, ১৫ জনের প্রাণহানি

  • বন ও পাহাড় রক্ষায় খাল ইজারা বন্ধ করা সময়ের দাবী।

নিজস্ব প্রতিবেদক :

পালংখালী থেকে আটককৃত ডাম্পার

উখিয়ায় প্রভাবশালী আট সিন্ডিকেটের হাজারের অধিক অবৈধ ডাম্পার নিয়মিত বন ও পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। হাজার টাকা মাসোহারায় চলছে এসব অবৈধ গাড়ী। ফলে অদক্ষ চালক ও বেপরোয়া গতির ডাম্পারের চাপায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় থামানো যাচ্ছে না পরিবেশ ধংসের মহাযজ্ঞ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিদিন এক হাজারের বেশি অবৈধ ডাম্পার উখিয়ার ইটভাটা গুলোতে মাটি ও কাঠ বোঝাই, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মালামাল পরিবহণ, ধানী জমির টপ সয়েলসহ বন ও পাহাড় কেটে পরিবেশ ধংস করছে।


এখন এসব অবৈধ ডাম্পার মালিক সিন্ডিকেট থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায়ের কাজ করছে উখিয়ার মামুন এবং কোটবাজারের শরীফ চৌধুরী। আগে এই কাজ করত সলিম উল্লাহ বাহাদুর। আদায়কৃত চাঁদার বেশির ভাগ দিতে হয় শাহপুরী হাইওয়ে পুলিশ ফাড়ির সেকেন্ড অফিসার নাজমুল আলমকে।

চাঁদা নেওয়ার বিষয়ে জানতে শাহপরী থানা হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হাসান এর
01833459533 নাম্বারে একাধিকবার চেষ্টা করেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

উখিয়া বন রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে পাহাড় কাটার সময় মাটি চোরসহ অন্তত ১৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। গত ২০২১ সাল থেকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২৯০টির মামলা হয়েছে। তৎমধ্যে ১৯৩টি জ্ঞাত আসামীযুক্ত। বাকী গুলো অজ্ঞাত।

বন বিভাগ বলছে, গত এক বছরে পাহাড় কাটার অভিযোগে অন্তত ১৯টি অবৈধ ডাম্পার জব্দ করে মামলা দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন সময় বন ও পাহাড় কাটা প্রতিরোধ করতে গিয়ে একাধিক সরকারি কর্মকর্তা হামলার শিকার হয়েছে। তৎমধ্যে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী সফিউল আলম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আল মামুন, আলী আহমদ প্রমুখ। সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ ভোর রাতে পাহাড় কাটার সময় বাধা দেওয়ায় দুছড়ি এলাকায় বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান (৩০) ডাম্পার চাপা দিয়ে পিষ্ট করে হত্যা করেছে পাহাড় খেকোরা।


এ ঘটনায় রোববার রাতে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক
৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। যার মামলা নং- ০১, তারিখ- ০১/০৪/২০২৪ইং।

বিট কর্মকর্তা হত্যাকান্ডের ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরাপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শামীম হোসেন।

জানতে চাইলে অবৈধ ডাম্পার মালিকের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে ওসি কিছু জানেন না। তবে খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

একজন ডাম্পার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, স্থানীয় ভিলেজার ও হেডম্যানদের ম্যানেজ করেই তারা অবৈধ ডাম্পার চালাচ্ছে।

অবৈধ ডাম্পার মালিকদের মধ্যে রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকার গফুর কোম্পানি, হেলাল উদ্দিন, বদিউল আলম, শাহ আলম, সৈয়দ আলম, সৈয়দ করিমের ছেলে হেলাল, শাহ আলমের ছেলে কামাল উদ্দিন ড্রাইভার, শাহজাহান মেম্বার, আনোয়ার, শহীদুল্লাহ, তাহের কোম্পানি। মাঝেরপাড়া এলাকার বদিউজ্জামান এর ছেলে মোহাম্মদ হেলাল।

তুতুরবিল এলাকার আলাউদ্দিন, হাশেম, জামাল, কামাল, নুরু, রবিউল হাসান, সরোয়ার, শাহ আলম আবু তাহের, নুরুল আলম। হাজিরপাড়া এলাকার মোঃ হিরু, আলমগীর, মোঃ শফি। পুকুরিয়া এলাকার মোস্তাক ও নাসির। ফুলিয়াপাড়া এলাকার নুরু মাঝি, ইব্রাহিম, নূর মোহাম্মদ, পুতু কোম্পানি। বঙ্গমাতা কলেজ এলাকার রবিউল হাসান রবিন।

জালিয়াপালং জুম্মাপাড়ার রুবেল মোবারক, শাহ আলম, জাহেদ আলম, টিটু, জয়নাল, সোনাইছড়ির হেলাল উদ্দিন, সরোয়ার, চোয়াংখালি এলাকার মৌলভী রফিক, মো: হোসেন, বেলাল। হলদিয়াপালং স্বপন শর্মা, শাহজাহান মেম্বার, বোরহান উদ্দিন, কমর উদ্দিন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এ ব্যাপারে উখিয়া প্রেসক্লাব সভাপতি সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার বলেছেন, অবৈধ ডাম্পার সিন্ডিকেট প্রশাসনের চিহ্নিত। এরা কালো টাকার প্রভাব এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে রাতদিন বন ও পাহাড় কাটছে। তালিকা করে এদের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে বসবাসযোগ্য পরিবেশ রক্ষা করা কঠিন হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)র উখিয়া শাখার ইমরান খান বলেছেন, বালু মহালের নামে খাল ইজারা বন্ধ করা জরুরী। কারণ খালে কোন বালি নেই। তাই ইজারার নামে বন-পাহাড় কাটছে। এতে পরিবেশ নষ্টের সাথে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বলেন, সীমিত সংখ্যক জনবল নিয়ে সরকারের বনসম্পদ রক্ষার্থে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। কখনো কারো সাথে

আরও খবর