সরওয়ার আলম শাহীন, কক্সবাজার জার্নাল ডটকম :
উখিয়া উপজেলা ভূমি অফিসে সুদিন ফেরার অপেক্ষায় ছিল স্থানীয় জনগণ, কিন্তু ফিরবো ফিরবো বলে বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও ফেরা হয়নি কাঙ্খিত লক্ষ্যে। ভালো কর্মকর্তা যে আসেনি তা নয়, তাদের ভালো থাকতে দেয়নি দুর্নীতিবাজ দালাল সিন্ডিকেট ও কর্মকর্তারা। তাই আবারো সেই পুরনো চেহারায় ফিরে গেছে উখিয়া উপজেলা ভূমি অফিস।
এখানে শীর্ষ কর্মকর্তার চেয়ে দালাল সিন্ডিকেট ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের তৎপরতা বা দাপট বেশি। ফলে দালাল নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে ভূমি অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম।
একসময় প্রায় পত্রিকার শিরোনাম হতো উখিয়া উপজেলা ভূমি অফিস। কালের বিবর্তনে ভালো কর্মকর্তাদের ছোঁয়ায় পরিবর্তন এসেছে ভূমি অফিসের চেহারায়, ভালো কর্মকর্তাদের তদারকিতে নিয়ম নীতিতেও পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু কমেনি দুর্নীতি, কমানো যায়নি বহিরাগতদের তৎপরতা। শীর্ষ কর্মকর্তার অগোচরে সবকিছুতেই চলছে শুভঙ্করের ফাঁকি। এক কথায় বলা যায় সুন্দর পরিপাটি ভূমি অফিসটির ভেতরে চলছে সবচেয়ে বেশি জন হয়রানি। এখানে টাকা ছাড়া কোন কাজ হয় না, কয়েক কর্মকর্তা আছেন দরদাম করেই করেন সরকারি কাজ। টাকা না দিলে কাজ হয় না এটা এখন উখিয়া ভূমি অফিসে নিয়মে পরিণত হয়েছে।
উখিয়া ভূমি অফিস সরেজমিন পরিদর্শন করে ভোক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়- নাম প্রস্তাব, সার্ভে রিপোর্ট, দাখিলা, নামজারি, ডিসিআর সংগ্রহ, খাজনা দাখিল, খতিয়ান ইস্যু থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজে সরকারি ফি,র চেয়ে অতিরিক্ত ২০ গুণ অর্থ দিতে হয়। এইভাবে অর্থ আদায় করে যাচ্ছেন কানুনগো, তহসিলদার, অফিস সহকারী, পিয়ন থেকে শুরু করে বহিরাগত দালাল চক্র। আরো অভিযোগ রয়েছে,টাকা দিলে বদলে যায় মামলার তদন্ত রিপোর্টও। পরিচ্ছন্ন কর্মী, ঝাড়ুদার, নাইট গার্ড ও কম্পিউটার অপারেটররা অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র বাইরে বের করে যে যেভাবে পারে টাকা কামাচ্ছে। তাদের তৎপরতায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে ভূমি অফিসের সংরক্ষিত ফাইল ও কাগজপত্র।
খতিয়ান ইস্যু,নামজারি করণে সরকারি ফি ১১৭০ টাকা (অনলাইন ফি)। সময়কাল সর্বোচ্চ ১ মাস নির্ধারণ থাকলেও দেখা যাচ্ছে ফি বাবদ ২০-২৫ হাজার টাকা আর সময় ক্ষেপন করছে ১০-১১ মাস কিংবা আরো অধিক। এ সমস্ত কার্যক্রমে সরাসরি লিপ্ত রয়েছে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। উখিয়া ভূমি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা সাধারণ মানুষকে সেবা তো দুরের কথা, কথা বলারও সুযোগ দেয়না। সরাসরি চিহ্নিত দালালদের দিয়ে কাজ করেন৷ সময় ক্ষেপনের জন্য সেবা গ্রহীতাদের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বলেন, আপনার ফাইল এসিল্যান্ড স্যারের হাতে, স্যার সহজেই ফাইল ছাড়ছেন না। এসব বলে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন দালাল ও বহিরাগতরা।
শাহ আলম নামের এক ভুক্তভোগী বলেছেন, গত ২ সপ্তাহ পূর্বে একটি খতিয়ানের সহিমুরীর জন্য আমার বাবার নামে দরখাস্ত জমা দিয়েছি নাজিরকে, সাথে দেড় হাজার টাকা দিয়েছি। তারপরেও সে খতিয়ান এখনো পায়নি৷
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভূমি অফিসে কাজ করা এক দালাল জানান, সেবাগ্রহীতাদের কাজ থেকে আমরা যে পরিমাণ টাকা নিয়ে থাকি তার বেশীর ভাগ ভুমি অফিসের কর্মকর্তা,কর্মচারী, অফিস সহকারী সার্টিফিকেট সহকারী, নাজির, সার্ভেয়ারসহ অন্যান্য যারা আছে তাদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিই৷ আমরা না থাকলে স্থানীয় সাধারণ জনগণের ভোগান্তি আরো বেশি হতো। কারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টাকা ছাড়া কোন কাজ করেন না। এমনকি নির্ধারিত টাকা না দিলে আমাদেরকেও চিনেন না। তাদের প্রতিটি টেবিল ম্যানেজ করে যে টাকা অবশিষ্ট থাকে তাই আমরা পায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালেহ আহমদ বলেন, আমি আসার পর থেকে উখিয়া ভুমি অফিসকে দালাল মুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে কোন সেবাপ্রার্থী এলে আমি নিজে বসে কাজ করে দিচ্ছি। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- চলবে+চোখ রাখুন আসছে দ্বিতীয় কিস্তি
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-