প্রতিদিনের বাংলাদেশ :
কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রশাসনের অভিযানের পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাহাড় ধ্বংসকারীরা। প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে বিকাশ বিল্ডিং এলাকায় অভিযানের ৯ ঘণ্টার মধ্যেই জব্দ করে জিম্মায় দেওয়া এক্সকাভেটর ছিনিয়ে নিয়েছে একদল অস্ত্রধারী। অপরদিকে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে সৈকতপাড়া এলাকায় সিলগালা ভেঙে এবং শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাদশাঘোনা এলাকায় ফের নির্মাণকাজ শুরু করে সংঘবদ্ধরা।
সোমবার কক্সবাজার শহরের চারটি এলাকায় পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে দিনব্যাপী অভিযান চালায় কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রশাসন।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সম্রাট খীসা। তিনি বলেছিলেন, ‘কক্সবাজার শহরের কলাতলী সৈকতপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটার শাবল, কোদাল, মাটি পরিবহনের ট্রলি ও সিসি ক্যামেরার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। এ সময় পাহাড় কর্তনকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা যায়নি। পাহাড়টিতে আনুমানিক দেড় লাখ ঘনফুট মাটি কাটা হয়েছে।’ এ ঘটনায় স্থানটি সিলগালা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার নির্দেশ দেন। এরপরই অভিযান চালানো হয় কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাদশাহঘোনা এলাকায়। সেখানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে দুই মাস ধরে সরকারি পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ করছিলেন বান্দরবান মৌজার লালমোহনবাগান এলাকার চমশিম বমের মেয়ে মাঙাই বম প্রকাশ মেঘা ও কক্সবাজার শহরের মোহাজেরপাড়া এলাকার মৃত ফকির আহমদের পুত্র রবি আলম। সেখানে আনুমানিক ১ লাখ ২০ হাজার ঘনফুট মাটি কাটা হয়। অভিযানে সরকারি পাহাড় কেটে নির্মাণাধীন স্থাপনার কাজ বন্ধ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার নির্দেশ দেন ইউএনও।
সবশেষ অভিযান চালানো হয় কক্সবাজার শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কের বিকাশ বিল্ডিং এলাকায়। সেখানে দুটি স্পটে এক্সকাভেটর দিয়ে পাহাড় কাটছেন উখিয়ার রাজাপালংয়ের ছিদ্দিক আহমদের পুত্র মোহাম্মদ ইলিয়াছ, কক্সবাজার শহরের কলাতলীর মৃত জাফর আলমের পুত্র নুরুল আলম ভুট্টো, কলাতলী আদর্শগ্রামের মৃত শাহাবুদ্দিনের পুত্র শাহ আলম, মুন্নাসহ কয়েকজন। সেখানে এক্সকাভেটর জব্দ করা হয় এবং মামলার নির্দেশ দেন ইউএনও।
আর কলাতলী বাইপাস সড়কের বিকাশ বিল্ডিং এলাকা থেকে এক্সকাভেটরটি ইউপি সদস্য ইউনুসের জিন্মায় দিয়েছিল প্রশাসন।
এলাকাবাসী জানায়, মঙ্গলবার ভোরে কলাতলী বাইপাস সড়কের বিকাশ বিল্ডিং এলাকায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউনুসকে মারধর এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে জব্দ করা এক্সকাভেটর ছিনিয়ে নিয়ে যায় একদল অস্ত্রধারী। তাৎক্ষণিক ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সহযোগিতা চান ওই ইউপি সদস্য। কিন্তু পুলিশ পৌঁছনোর আগেই তারা এক্সকাভেটর নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর ইউনুস কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ঘটনাটি তিনি ইউএনওকে অবহিত করেছেন।
এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জানিয়ে ইউপি সদস্য ইউনুস বলেন, ‘কলাতলী এলাকার নুরুল আমিন ও ভুট্টোর নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জনের একদল অস্ত্রধারী আমাকে মারধর করে অস্ত্র ঠেকিয়ে এক্সকাভেটর নিয়ে যায়।’ এরপরই সকালে সৈকতপাড়া এলাকায় ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির পাশা পল্লবের পাহাড় কাটার স্থানে সিলগালা ভেঙে এবং শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাদশাঘোনা এলাকায় মাঙাই বম প্রকাশ মেঘার পাহাড় কেটে নির্মাণাধীন স্থাপনার কাজ পুনরায় শুরু করা হয়।
সৈকতপাড়া এলাকার আবু তাহের বলেন, ‘নুরুল কবির পাশা পল্লব প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার সঙ্গে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের সম্পর্ক রয়েছে। এই প্রভাব বিস্তার করেই তিনি সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে এক্সকাভেটর দিয়ে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটছিলেন।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, ‘ঘটনা তিনটি আমি শুনেছি। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল। সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজুসহ কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।’
এ বিষয়ে পরিবেশ আদালত কক্সবাজারের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মো. আসিফ সংবাদটি আমলে নিয়ে মামলা করেন। অপরদিকে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। ১২ ও ১৪ জানুয়ারি দুই দফা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-