কক্সবাজারে নিত্যপণ্যের বাজারে কাটছেনা অস্থিরতা

তাজুল ইসলাম পলাশ :

  • # গরুর মাংস, চিনি, আদা, রসুন, শুকনা মরিচ, ব্রয়লার মুরগি, জিরার দাম বাড়তি

গত কয়েকমাস থেকেই নিত্যপণ্য, কাঁচাবাজার, মাছ-মাংস, এমনকি মসলাজাত পণ্যের দামে হাঁসফাঁস অবস্থা। ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজিতেও নেই স্বস্তি। লাগামহীন দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ।

কৃষকের ক্ষেত থেকে আড়ং ঘুরে খুচরা বাজারে আসতে দাম বেড়ে যাচ্ছে কেজিতে ২০-২৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগী সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা। গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্রয়লার মুরগির মূল্যবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। এক মাসেই ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে যায়।

মার্চে গিয়ে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজির দাম সর্বোচ্চ ২৮০ টাকা পর্যন্ত ওঠে, যা জানুয়ারিতে ছিল ১৪০ টাকা। পেঁয়াজের দাম রয়েছে স্থিতিশীল। ১২০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। গত বছরের ডিসেম্বরে হঠাৎ কোনো কারন ছাড়াই পেঁয়াজের দাম উঠে ২০০ টাকায়। ওই বছরে আগস্টে হঠাৎ আলোচনায় আসে ডিম। প্রতি ডজনের দাম ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিমের ডজন ১৬০-১৬৫ টাকায় ওঠে। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে একপর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম বেঁধে দেয় ১২ টাকা, কিন্তু বাজারে সেই দাম কার্যকর হয়নি।

পরে সেপ্টেম্বরে ভারত থেকে ডিম আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। নানা জটিলতা শেষে সামান্যসংখ্যক ডিম আমদানি হয়। এরই মধ্যে বাজারে ডিমের দাম নেমে আসে। এসময়টাতে আলুর দাম থাকে ৪০ টাকার মধ্যে। কিন্তু আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা।

বছরের শেষ দিকে এসে অবশ্য গরুর মাংসের দামে কিছুটা স্বস্তি পান ক্রেতারা। কারণ, গরুর মাংসের প্রতি কেজির দাম ৭৫০-৮০০ টাকা থেকে কমে ৬০০-৬৫০ টাকায় নেমে এসেছে। কিন্তু কক্সবাজারে এই দামে কোথাও গরুর মাংস বিক্রি হয়নি। হাড়সহ ৭৫০ টাকা এবং হাড় ছাড়া মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা।

এদিকে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে কয়েকটি পণ্যের দাম। যেমন চিনি, আদা, শুকনা মরিচ, ব্রয়লার মুরগি, জিরা ইত্যাদি। সরকার দামের লাগাম টানতে একপর্যায়ে পাঁচটি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয়। পণ্যগুলো হচ্ছে ডিম, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, চিনি ও আলু। কিন্তু বাজারে সয়াবিন তেল ছাড়া আর কোনো পণ্যের বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর হয়নি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ ও খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ ছিল। বছরের শেষের দিকে অক্টোবরে এসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশে ওঠে, যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। বছরের বেশির ভাগ সময়ই সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে ছিল। মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে ওঠে, যা এর আগের ১৩৪ মাস বা ১১ বছর ২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অক্টোবরেও সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে নভেম্বরে এসে তা খানিকটা কমেছে।

এদিকে বাজারে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, নিত্যপণ্যের মজুত ও সরবরাহ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। বাজার ও গুদামে পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য এক বা একাধিক পণ্য টার্গেট করে পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ডিম প্রতি ডজন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগির দাম ( ব্রয়লার) ১৭০ থেকে বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি কেজিতে ২০ টাকা দাম বেড়ে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০। দেশি মুরগী বিক্রি হচ্ছে ৫২০-৫৪০ টাকা।

বড় বাজারের নিঝুম পোল্ট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো: কিসমত উল্লাহ বলেন, ‘ দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেট কাজ করছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকা, কিন্তু আজকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, লোকসানের কারনে অনেক পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া শীতের কারনে বাচ্চা মারা যায়।’

জেলা পোলট্রি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল হক জানান, ‘জেলায় পোল্ট্রি খামার মালিকরা লোকসানে আছে। বিদ্যুৎ, পরিবহন, খাদ্য, মজুরি সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দাম এমনই থাকবে।’

এদিকে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। বরবটি ৭০-৮০ টাকা, মুলা ৩০-৪০ টাকা, দেশি আলু ৭০ টাকা, ললিতা আলু ৬০ টাকা, লাউ প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৫০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা। কিছুটা দাম কম কাঁচা মরিচের। ৮০ – ১০০ টাকা কেজিতে মরিচ বিক্রি হচ্ছে। কমেছে টমেটোর দাম। ৫০-৬০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মসল্লার দামও বেড়েছে।

এদিকে মাছের দাম আগে থেকেই চড়া ছিল। রুই মাছ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, কাতল ৩৮০ থেকে ৫৫০ টাকায়, মৃগেল আকারভেদে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়, তেলাপিয়া আকার ভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়, গরীবের পাঙ্গাস ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, লইট্যা মাছ ২৫০ টাকা।

এদিকে সামুদ্রিক মাছের মধ্যে সব চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। আকারভেদে ইলিশের কেজি ৭০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজির উপরে ইলিশের দাম ২৫০০ টাকা। ৭০০ গ্রাম ইলিশের দাম ১২০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে ১৪০০ টাকা। সামুদ্রিক বাইলা আকার ভেদে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার, রূপচাঁদা ৮০০-১২০০ টাকায়, পোপা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় এবং চিংড়ি আবারভেদে (দেশি এবং সামুদ্রিক) ৬০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে আলু, ডিম, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে কারা ভোক্তার পকেট কেটেছে অসাধু পন্থায় অতিমুনাফা করছে, সেই তথ্য সরকারের কাছে আছে। তাই ভোক্তাদের স্বার্থে অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে।তবেই নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা কমবে।

আরও খবর